বন্ধুকে খুন করেই রাতভর প্রেমিকার সঙ্গে প্রেমালাপ!
একটি শক্তিশালী বন্ধনের নাম বন্ধুত্ব। একজন বন্ধুই পারে আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে। বন্ধুত্বের প্রথম শর্ত বিশ্বাস। বন্ধু বলতে বোঝায় সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হতাশা, ভালো লাগা, মন্দ লাগা যার সঙ্গে ভাগাভাগি করা যায়। কিন্তু, সেই বন্ধুই যখন তার অপর বন্ধুকে খুন করে, তখন প্রিয় এই বন্ধনে লাল কালো দাগ পরাটাই স্বাভাবিক।
সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে। যা খুবই ভঙ্ককর। বন্ধুই তার বন্ধুকে খুন করেছে। এখানেই শেষ নয়, তার মরদেহ কে আবার ৬ টুকরা করেছে। পরে লাশ বস্তাবন্দি করে সেপটি ট্যাংকে ফেলে দিয়েছে।
কিন্তু, তারপরও খুনি বন্ধু ছিল স্বাভাবিক। এতটাই স্বাভাবিক যে, সেদিন রাতভর প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলেছে সে। খুনের রহস্য উদঘাটন হওয়ার পর পুলিশও বিস্ময় প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষকে হত্যার পর তার লাশ সেপটিক ট্যাংকে রেখেছিল খুনি পিন্টু। হত্যার পর মৃতদেহটি কেটে ৬ টুকরো করে সে। কিন্তু এসময় সে স্বাভাবিকভাবে তার প্রেমিকার সঙ্গে ফোনালাপ করতে থাকে। মৃতদেহ সেপটিক ট্যাংকে ফেলার পর রাতভর প্রেমিকার সঙ্গে ফোনে কথা বলে পিন্টু।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুন রাতে প্রবীর চন্দ্র ঘোষকে খুন করে পিন্টু। এরপর অন্তত প্রায় ৪০ মিনিটের মতো প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলে পিন্টু। প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলার সময় ‘প্রিয়’ বন্ধু প্রবীরের রক্তাক্ত লাশ তার ফ্ল্যাটে পড়েছিল। কথা বলার মাঝখানে বিরতি দিয়ে সে লাশ ৬ টুকরো করে সিমেন্টের বস্তায় ভরে। এরপর বস্তাসহ সেপটিক ট্যাংকিতে ফেলে দেয় সে।
এভাবে করেই দীর্ঘ ২১ দিন নিজের ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংকিতে বন্ধুর লাশ রেখে স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন পিন্টুর।
সামান্য নকশাকার থেকে কোটি টাকার স্বর্ণের দোকানের মালিক বনে যাওয়া পিন্টু সম্পর্কে বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। পিন্টু ২০ থেকে ২২ বছর ধরে এই স্বর্ণপট্টিতে রয়েছে। তার বাড়ি কুমিল্লার চন্দনপুরে। স্বর্ণালঙ্কারে নকশা করার কাজ শেখার মাধ্যমে তার এই লাইনে যাত্রা শুরু। স্বর্ণ পোলিশ ও নকশার কাজ করতে গিয়ে প্রবীরের সঙ্গে পিন্টুর বন্ধুত্ব হয়। এরপর স্বর্ণ বিক্রি ও বন্ধক নিয়ে প্রবীর ও পিন্টুর মধ্যে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, ইতালি প্রবাসী ভাইয়ের পাঠানো প্রায় অর্ধকোটি টাকা সুদের ব্যবসায়খাটাচ্ছিলেন প্রবীরের। আর এ ব্যবসার অংশীদার ছিলেন পিন্টু। ব্যবসার হিসাবপত্রও ছিল পিন্টুর কাছে। এই টাকা ফেরত দেয়া নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয় বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, পিন্টু খুবই সুচতুর ও ঠান্ডা মাথার খুনি বলেই তিনি এতোটা দিন স্বাভাবিক ছিল।
তিনি আরও বলেন, এ খুনের মূল কারণ জানা না গেলেও খুব শিগগিরই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারব বলেও জানান এই তদন্তকারী কর্মকর্তা।