শুক্রবার, ৬ই জুলাই, ২০১৮ ইং ২২শে আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

‘যা লাগে দিবি, ভর্তি করিয়ে দেব’

‘যা লাগবে দিয়ে দিবি, তোকে এই কলেজে ভর্তি করিয়ে দেব।’ এক ছাত্রীকে এভাবেই আশ্বাস দিয়েছেন কলেজের এক দাদা মানে ছাত্রনেতা।

ভারতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে কিছুদিন আগে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জুড়ে চলছে ভর্তি মৌসুম। পছন্দনীয় বিষয়ে ভর্তি হতে এই কলেজ থেকে ওই কলেজে ঘুরে মরছে শিক্ষার্থীরা। আর এই সুযোগে ভর্তি বাণিজ্য করে প্রচুর অর্থ কামিয়ে নিচ্ছেন তথাকথিত ছাত্রনেতারা। তাদের এই রমরমা ভর্তি বাণিজ্যের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই রিপোর্ট করছে আনন্দাবাজার পত্রিকা।

সোমবার পত্রিকাটি পাটুলির কে কে দাস কলেজের ভর্তিচিত্র তুলে ধরেছে। সেখানে কাউন্সেলিং রুমের বাইরে মার্কশিট হাতে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা। হঠাৎ এক যুবকের ঘোষণা, ‘সময় শেষ। আর হবে না। জায়গাটা ফাঁকা করো।’ ১০ মিনিট সময় বাকি থাকতেই বন্ধ করে দেয়া হলো ভর্তি প্রক্রিয়া। এসময় অপেক্ষারতদের নিচু গলায় ওই যুবক বলেন, ‘আমাদের নম্বর নিয়ে যা। যারা ভর্তি হতে পারলি না, ফোন করিস। ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’

গত সোমবার ওই কলেজে ইংরেজি-সহ স্নাতক স্তরের বেশ কয়েকটি বিষয়ে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং ছিল। তাদের বলা হয়েছিল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে কলেজে হাজির থাকতে হবে । কিন্তু ১১টার আগেই ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ করিয়ে দিয়েছেন ছাত্রনেতারা। এক ছাত্রীর অভিযোগ, ‘ফোননম্বর দিয়ে এক দাদা বলেছে, যা লাগবে দিয়ে দিবি, ভর্তি করিয়ে দেব।’

অথচ বিষয়টি জানেনই না ওই কলেজের অধ্যক্ষ রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী। তার কথায়, ‘কেউ অভিযোগ করেননি। করলেই ব্যবস্থা নেব।’ আর কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) ইউনিট সম্পাদক সৈকত রায়ের কথায়, ‘আমরা ভর্তি হতে আসা ভাই-বোনেদের সাহায্য করছি মাত্র। খুব ভিড় ছিল, আর সময়ও হয়ে গিয়েছিল। তাই লাইন ফাঁকা করে দিতে বলেছি। তবে টাকা চাওয়া হয়নি।’

চলতি বছরে ভর্তি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। তবে তাতেও কলেজে ‘ভর্তি দুর্নীতি’রোধ করা যায়নি। অন্যান্য কলেজেও চলছে একই সিস্টেম। ঘুঘুর বাসা ভাঙা যায়নি বলে কাউন্সেলিং শুরুর দু’দিনের মধ্যেই অভিযোগ উঠছে। সোম ও মঙ্গলবার দিনভর দক্ষিণ কলকাতার একাধিক কলেজে ঘুরে সেই ইঙ্গিত পাওয়া গেল।

শুক্রবারই ছাত্র ভর্তিকে কেন্দ্র করে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে গন্ডগোলে জড়ান দুই তৃণমূল কাউন্সিলর এবং তাদের অনুগামীরা। এরপর থেকে কলেজে পুলিশি প্রহরা বসিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন অধ্যক্ষ সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ওই কলেজে গিয়ে দেখা গেল, প্রবল পুলিশি নিরাপত্তা। তবে তার মধ্যেই এক ছাত্রীকে ভর্তি করানো নিয়ে গণ্ডগোল বেধে গেল ছাত্র সংসদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। পরিস্থিতি সামাল দিল পুলিশ।

বৃহস্পতিবার আশুতোষ কলেজে গিয়ে দেখা গেল, দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কলেজের গেটই পেরোতে না পেরে উত্তেজিত এক প্রৌঢ়। জানালেন, তালিকায় নাম উঠেছে ছেলের। সকাল ১১টা থেকে দাঁড়িয়ে আছেন। ফের ঢোকার চেষ্টা করতেই এক ছাত্রনেতা গেট আটকে বলেন, ‘বললাম তো, হবে না। ৯০ হাজারই লাগবে।’ প্রৌঢ় বলেন, ‘আমি সরকারি কর্মী। প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলব। তোমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াতে পারি।’

উত্তর এল, ‘এই কলেজ কে চালায়, জানেন? কিচ্ছু করতে পারবেন না। নিন, আমার ছবি তুলে নিয়ে যান। যান না, পুলিশকে গিয়ে বলুন।’ পরে অন্য একটি কলেজে ছেলেকে ভর্তি করান ওই প্রৌঢ়। সহ-অধ্যক্ষকে জানাতে তিনি িবিষয়টি এড়িয়ে যান। বলেন, ‘গেটের বাইরে পুলিশ আছে। এটা পুলিশের দেখার কথা।’

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, কোনও অভিযোগ না পাওয়ায় তারা ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। আর ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়ার ভয়ে অভিযোগ করতে চাইছে না শিক্ষার্থীরা।

সূত্র: আনন্দবাজার

Print Friendly, PDF & Email

এ জাতীয় আরও খবর

হাতুড়ি পেটায় দু’পা ভাঙা তরিকুলকে বের করে দিয়েছে হাসপাতাল

হাতুড়ি দিয়ে তরিকুলের পায়ের হাড় ভেঙে দিয়েছে ছাত্রলীগ

১৯ জুলাই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

ক্লাস বর্জনের ঘোষণা ঢাবি ছাত্রীদের

নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ

‘ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন চলছে, মেনে নেওয়া যায় না’