৯ কিলোমিটার ফ্লাইওভারে নজর রাখবে ৫০ সিসি ক্যামেরা (ভিডিও)
নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর জ্যাম নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার। কিন্তু ফ্লাইওভারে বার বার তার চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তাই প্রায় ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভারটি নিরাপত্তায় ৫০ টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর । যাতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। যা শিগগির উদ্বোধন হবে। কিন্তু এত বড় ফ্লাইওভারে ৫০ টি সিসি ক্যামেরা কতটুকুই বা নিরাপত্তা দিবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ।
সোমবার সরেজমিনে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে গিয়ে দেখা গেছে, মৌচাক ও মালিবাগ মোড়, মগবাজার ওয়্যারলেস, মগবাজার চৌরাস্তা, তেজগাঁও-সাতরাস্তা, বাংলামটরের ঢালের মোড়ে বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। তবে ফ্লাইওভারে সিসি ক্যামেরা বসানো হলেও অনেক ল্যাম্পপোস্ট ও সিগন্যাল বাতি জ্বলে না।
এ বিষয়ে এলজিআরডির মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের পর প্রায়ই বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়। ফলে সিগন্যাল বাতি ও ল্যাম্পপোস্টের বাতি অকার্যকর হয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত চার বার তার চুরি হয়েছে। এছাড়া নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে প্রতিনিয়ত তাই ৫০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, খুব শিগগির ফ্লাইওভারের এ সিসি ক্যামেরা প্রকল্প উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
এ বিষয়ে ডিএমপির ট্র্যাফিক দক্ষিণ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরাগুলো। খুব তাড়াতাড়ি সিসি ক্যামেরাগুলো উদ্বোধন করা হবে। সুষ্ঠ ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধী শনাক্তে ক্যামেরাগুলো বসানো হয়েছে। যাতে অনিয়ম হলেই অপরাধীকে সনাক্ত করা যায়।
তিনি আরও বলেন, মনিটরে যানজট কিংবা কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখলেই স্ব স্ব থানার পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হবে। দায়িত্বপালনে জবাবদিহিতা এবং যানজট কমাতে কাজে দেবে এ উদ্যোগ।
ট্র্যাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এস এম মুরাদ আলী বলেন, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটি ট্র্যাফিক বিভাগের চারটি ডিভিশনের মধ্যে পড়েছে। এখন ৫০টি ক্যামেরার ফুটেজ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে ফুলবাড়িয়ার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং আব্দুল গনি রোডের ‘সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’ থেকে। পরে তা আবার আলাদা ডিভিশনে যাবে। ৫০ টি ক্যামেরা অন্ধকারেও মনিটরিং করা যাবে। কারণ ক্যামেরাগুলো নাইট ভিশন ও উন্নত প্রযুক্তির।
চলতি বছরের ২৮ মে ফ্লাইওভারের মালিবাগের অংশ থেকে বস্তাবন্দী এক নারীর দুই হাত ও দুই পা উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি গাড়ি ওই ব্যাগটি ফেলে চলে যায়। ওই ঘটনার ২৬ দিন হয়ে গেছে। ফ্লাইওভারে ক্যামেরা না থাকায় কোন গাড়ি থেকে ব্যাগটি ফেলা হয়েছিল। তা এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এখনও পর্যন্ত নিহতের নারী পরিচয় শনাক্ত হয়নি। এছাড়া ২০১৭ এর ডিসেম্বরে একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় শফিকুল ইসলাম (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। ছয় মাসেও বাসের নাম জানতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু সিসি ক্যামেরা থাকলে অপরাধীদের সনাক্ত করা সম্ভব হতো বলেও মনে করেন পুলিশের অনেক কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন- ফ্লাইওভার, ওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস যে কোনও স্থানে হোক না কেন, এ ধরনের বৃহৎ প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এবিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে। আমরা মন্ত্রীদের কাছে দাবি করেছি, যাতে তারা পরিকল্পনা কমিশন ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেয়, প্রতিটি বড় প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যোগ করে যেন প্রকল্প প্রণয়ন করেন।
চার লেনের এ উড়ালসড়কটি প্রায় ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ ফ্লাইওভারটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। গত বছরের ২৬ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উড়াল সড়কটির উদ্বোধন করে যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলে দেন। সূত্র: আরটিভি অনলাইন