উভয় জগতের আদর্শ শিক্ষক মুহাম্মদ (সা.)
তিনি হলেন সর্বাধিক উদার ও দানশীল, সর্বাপেক্ষা সত্যবাদী, সমধিক অঙ্গীকার পালনকারী, ন¤্র-ভদ্র এবং বংশে ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ সম্ভ্রান্ত। যে কেউ তাকে একবার নিরীক্ষণ করতো, ভক্তিপূর্ণ ভীতি তার ওপর প্রভাব বিস্তার করতো। যে তার সঙ্গে মিশতো, সে তার প্রতি আকৃষ্ট ও আসক্ত হয়ে পড়তো। তাইতো এই পরশমণির পরম সৌভাগ্য যারা লাভ করলো, চরিত্র তাদের সুষম হলো। জীবন্ত স্বপ্ন তাদের সফল হলো, খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি হলো। এ স্বর্গ পুষ্পের সান্নিধ্য সৌরভ যারা পেলো, বিশ্ব বাগানে গোলাপের খোশবু তারা ছড়ালো। সেই মহামানবই হলেন রহমাতুল্লিল আলামিন আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)।
পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ জ্ঞানের ভা-ার আল কুরআনের ধারক-বাহক তিনি। অজ্ঞতার এক চরম পর্যায়ে, অশান্তির এক অগ্নিঝরা দিনে, জালিমের দোর্দ- প্রতাপে মাজলুম মানবতার মুক্তি যখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে ওঠেছিলো, ঠিক সে সংকট সন্ধিক্ষণে শিক্ষার আলোকিত মশাল নিয়ে এসেছিলেন মহানবী (সা.)। তার এ জ্ঞানের মশাল জ্বলে ওঠেছিলো শত দীপ শিখায়, ছড়িয়ে পড়েছিলো দিগদিগন্তে। তার আবির্ভাবে এবং কুরআনের চির নির্ভুল সত্যবাণী অবতীর্ণ হবার ফলে অজ্ঞতার গাড় অন্ধকার কেটে গেলো। বিশ্বমানবতা লাভ করলো জ্ঞান বিজ্ঞানের এক পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন। তার জীবন শিক্ষা প্রসারে তিনি এতই তৎপর ছিলেন যে, অত্যল্পকালের মধ্যেই তা চারদিক ছড়িয়ে পড়লো। সমগ্র বিশ্ব আজও বিশ্বনবীর জ্ঞানবলয়ের প্রভাবে প্রভাবান্বিত।
মহানবী (সা.) শিক্ষা- দীক্ষার ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর জাগরণের সৃষ্টি করেন, যার ফলে পরবর্তীকালে মুসলমানরা শিক্ষক ও সংস্কৃতিতে অপূর্ব সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়। রাসুল (সা.) হলেন একজন পরিপূর্ণ আদর্শ শিক্ষক। যার প্রতিটি কথা, কাজকর্ম ইত্যাদিতে ছিলো কেবলই শিক্ষা। তাইতো তিনি হলেন উভয় জগতের আদর্শ শিক্ষক।
উঁচু-নীচু, ইতর-ভদ্র, ধনী-দরিদ্র, আত্মীয়-অনাত্মীয় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার সঙ্গে ন্যায় ব্যবহার করার শিক্ষা ও আদর্শ রাসুল (সা.) নিজ জীবনে রেখে গিয়েছেন। সমাজে, রাষ্ট্রে, আন্তর্জাতিক জীবনে, ব্যবসা-বাণিজ্যে আদান-প্রদান প্রভৃতি সর্বক্ষেত্রে তিনি ন্যায়ানুমোদিত পথে অগ্রসর হয়েছেন এবং সেই পথে চলার জন্যে তার উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বিশ্বজাহানের সুন্দরতম মানুষটির মহত্তম জীবন গোটা মানব জাতির জন্যে অনুসরণীয় এক পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ। মানব চরিত্রের কোন দিকটি এমন রয়েছে যেখানে প্রিয়তম রাসুল (সা.) এর আদর্শিক দিক নির্দেশনা নেই, মানব সভ্যতার কোন পথটি এমন যে পথে পড়েনি তার প্রিয় পদরেখা?
প্রিয়নবী (সা.) এর সুন্নাহর আদর্শ সার্বজনীনতায় দিগন্ত বিস্তৃত। আমরা যদি এ দিকসমূহের বাস্তবায়নে দৃষ্টি দেই, তাহলে দেখবো রাসুল (সা.) তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফলে অল্পকালের মধ্যেই ইসলামি সভ্যতা সংস্কৃতির শীর্ষচারী অবস্থান মানবজাতি প্রত্যক্ষ করেছে। তাই আজকের এই করুণ ও অবক্ষয় মুহূর্তে যদি মুসলিম উম্মাহ ফিরে পেতে চায় তাদের হারানো অতীত, তাহলে তাদের অনুসরণ করতে হবে প্রিয়নবী (সা.) এর সর্বোত্তম জীবনাদর্শ। সুতরাং সেই আদর্শের পথেই হোক আমাদের নব যাত্রা। আদর্শিক প্রত্যয়ে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠুক আমাদের সমাজ জীবন।