দিনাজপুর প্রতিনিধি : মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রফিকুলকে হার মানাতে পারেনি প্রতিবন্ধিতা। জন্মগতভাবে দুটি হাত অচল হলেও পা দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া। সবাইকে তাক লাগিয়ে রফিকুল এবার জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। হাত না চললেও পা দিয়েই উত্তরপত্রে ঝকঝকে লিখে যাচ্ছে। প্রায়-ই খবরে আসে এমনই কত রকিবুল। আসলে এই রকিবুলরা আমাদের কী শেখাচ্ছে? মূলত এই রকিবুলরা শেখাচ্ছে, অদম্য ইচ্ছে শক্তি থাকলে কোন কিছুই কারোর লক্ষে বাধাই হয়ে ধাঁড়াতে পারেনা বরং তাকে এগিয়ে চলতে সাহসী করে তুলে।
প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলাম দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট গ্রামের ক্ষুদ্র পান দোকানি নাসির উদ্দিনের ছেলে। পিতা নাসির উদ্দিন ও মা রুবিনা বেগম বলেন, জন্মগতভাবেই রফিকুলের দুই হাত অচল। জন্মের পর থেকে রফিকুলকে নিয়ে দুশ্চিতাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন তার বাবা-মা। দুই হাত ছাড়া সে কিভাবে তার দৈনন্দিন কাজ করবে সে, কিন্তু সে ভাত খাওয়া, টিওবয়েল চালনা, গোসল থেকে শুরু করে সব কাজ কারোও সাহায্য ছাড়াই করে সে।
শিশুকাল থেকেই রফিকুলের লেখাপড়ার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ রয়েছে। এ কারণে বাড়ি সংলগ্ন মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে সে পা দিয়ে লিখেই পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় ৩.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এখন জেডিসি পরীক্ষাও দিচ্ছে পা দিয়েই লিখে। পাকেরহাট কামিল মাদ্রাসার ছাত্র হয়ে এবার জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সে। পরীক্ষায় ভালো করবে এই আশাবাদ সবার।
রফিকুলের প্রতিবেশীরা জানালেন দুই হাত না থাকলেও সে ক্রিকেট খেলা, মারবেল খেলা, গাছে ওঠা সব ধরনের খেলায় সে বেশ সাবলীল। দরিদ্র রফিকুলের পরিবারের পাশে সমাজের ধনী মানুসেরা এগিয়ে আসবে এই আশা তাদের।
এ বছর জুনিয়র মঙ্গলবার পরীক্ষার প্রথম দিন থেকে সে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পা দিয়েই উত্তরপত্র লিখে জমা দেয় কক্ষ পরিদর্শককে। পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রধান মোওলানা এনামুল হক জানান রফিকুলের জন্য তারা আলাদা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, কিন্তু রফিকুল আলাদাভাবে পরীক্ষা দিতে রাজি হয়নি এমনকি সে প্রতিবন্ধি হিসেবে তার জন্য বরাদ্দ অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় নেয় না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সে পরীক্ষার উত্তরপত্র জমা দেয় সে।
খানসামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাজেবুর রহমান জানালেন প্রতিবন্ধী রফিকুল আমাদের জন্য অনুকরনীয়, উপজেলা প্রশাসন তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থ্যা করা সহ তার নিজ উদ্দ্যোগে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করবেন তিনি।
শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, দারিদ্রতা কোন কিছুই রফিকুলকে দমাতে পারেনি, অন্যের উপর বোঝা না হয়ে সে নিজের প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি দিয়ে তার সীমাবদ্ধতা দূর করে, তার সব কাজ সে নিজেই করে কারও সহযোগিত ছাড়াই। প্রতিবন্ধি রফিকুল তাই আমাদের সবার জন্য অনুকরনীয়, সমাজের সকল শ্রেনীপেশার মানুষের উচিত তার পরিবারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানো। যাতে রফিকুল পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে, অন্য প্রতিবন্ধিদের জন্য অনুকরনীয় হতে পারে।