২রা অক্টোবর, ২০১৬ ইং, রবিবার ১৭ই আশ্বিন, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ
পূর্ববর্তী অনেকদিন পর খেলতে নামার প্রভাব ম্যাচে পড়েছে : সংবাদ সম্মেলনে সাকিব


ধীরে ধীরে ‘মিস্টার ফিফটি’ হয়ে যাচ্ছেন তামিম!


Amaderbrahmanbaria.com : - ২৬.০৯.২০১৬

স্পোর্টস ডেস্ক : ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর! ২০১২ এশিয়া কাপে তাঁর সেই বিখ্যাত উদ্‌যাপন। যেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় গল্পগাথায় চিরদিনের জন্য জায়গা করে নিয়েছে। টানা চার ম্যাচে চার ফিফটি করার পর আঙুল গুনে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। সেটা ছিল ‘জবাব দেওয়া’র এক উদ্‌যাপন।

‘জবাব দেওয়া’র উদ্‌যাপন গত বছরও করেছিলেন তামিম ইকবাল। এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর নিন্দুকদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ‘অনেক বকবক হয়েছে, এবার মুখ বন্ধ করো।’ একই উদ্‌যাপন তামিম চাইলে পরের ম্যাচেও করতে পারতেন। সেবার যে সেঞ্চুরি করেছিলেন টানা দুই ওয়ানডেতে।

কিন্তু গত এপ্রিলের মতো উপলক্ষ খুব কমই এসেছে তামিমের জীবনে। টানা দুই সেঞ্চুরির পর পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে আবার ৬৪। জুনে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আবারও ৬০-এর একটা ইনিংস। পরের যে দুটি ফিফটির অন্তত একটির সেঞ্চুরি পর্যন্ত না যাওয়াটাই ছিল বিস্ময়ের।

সত্যি বলতে কী, ফিফটিটাকে আরও গায়ে-গতরে বড় করে তিন অঙ্কে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যেন তামিমের ‘অনাগ্রহ’। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৩টি ফিফটির বিপরীতে সেঞ্চুরি মাত্র ৬টি। গতকালও যেমন আউট হয়ে গেলেন ৮০ রানে। অথচ তখনো প্রায় ১৫ ওভারের মতো বাকি।

ইনিংসের শুরুতে নামেন বলে সেঞ্চুরি করার সুযোগ সবচেয়ে বেশি থাকে। আর এ কারণেই তামিমের ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করার হারের ‘ভগ্ন স্বাস্থ্য’ চোখে বিঁধছে বেশি করে। দেশের সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। বেশ কিছুদিন ধরে পরিণত ব্যাটিংয়ে নতুন এক তামিমকে চেনাচ্ছেন। কিন্তু এই নতুন তামিমের মধ্যেও পুরোনো সেই ছায়াটা থেকে যাচ্ছে। ভালো একটা ইনিংস খেলেও মাথা নাড়তে নাড়তে বের হয়ে আসা। তামিমই যে সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারেন, আরও একটা সেঞ্চুরির সুযোগ হেলায় হারিয়ে এলেন। তামিমই ভালো জানেন, নামের পাশে ৬ সেঞ্চুরির চেয়ে অনেক ভালো ব্যাটসম্যান তিনি।

বড় ব্যাটসম্যানের একটি বড় গুণ বলে ধরা হয় ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাকে। বড় ব্যাটসম্যান হওয়ার আগমনী বার্তা দিয়ে দৃশ্যপটে আসা কুইন্টন ডি ককের যেমন ১০টি সেঞ্চুরি, ফিফটি ৭টি। হাশিম আমলা ৫৩ বার পঞ্চাশ ছুঁয়ে ২৩টিকেই নিয়ে গেছেন তিন অঙ্কে। বিরাট কোহলির ২৫টি সেঞ্চুরি, ফিফটি ৩৬টি। সেখানে তামিমের ৩৯টি ফিফটির মাত্র ৬টি রূপ পেয়েছে সেঞ্চুরির।

তামিমের দুঃখটা সবচেয়ে ভালো বুঝবেন হাবিবুল বাশার। এখনো মন খুলে আড্ডা দেওয়ার সময় হাবিবুল দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। সেটা এই উপলব্ধি করেই, কতগুলো সেঞ্চুরি তিনি নিজে পায়ে ঠেলে এসেছেন! টেস্টে ৩টি সেঞ্চুরি, ফিফটি যেখানে ২৪টি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ‘মিস্টার ফিফটি’ বলতে তাই তাঁকেই বোঝে। তামিম কি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যাচ্ছেন?

ওয়ানডেতেই তামিমের ৯৫ রানের ইনিংস আছে দুটি। কালকেরটিসহ ৮০-এর ঘরের ইনিংস আছে তিনটি। এগুলো সেঞ্চুরিতে নিয়ে যাওয়া খুবই সম্ভব ছিল। আর তা হলে সেঞ্চুরিসংখ্যা দুই অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলত। তামিম নিজেও তা উপলব্ধি করেন নিশ্চয়ই। নিজেও নিশ্চয়ই এর উত্তর খোঁজেন, কেন এমন হয়।

এর সহজ ব্যাখ্যা দেওয়াটা কঠিন। ফিফটির পর উদ্‌যাপনে ছন্দপতন হয়। মনোযোগেও ব্যাঘাত ঘটে। তামিম নিজে এখন ফিফটির উদ্‌যাপনে পরিমিত। যতটুকু না করলেই নয়। ৫০ থেকে ৬৪-এর মধ্যে আউট হয়েছেন ২২ বার! তবে গত তিন বছরে মাত্র ৫ বার, বাকি ১৭ বারই ক্যারিয়ারের শুরুর বছরগুলোয়। তামিম বদলাচ্ছেন।

তবে বদলাতে হবে আরও। টেন্ডুলকার নিজে ইনিংসের একটা সময়ে হিসাবি ঝুঁকি নিতেন। আশি থেকে সেঞ্চুরির ঘর পর্যন্ত প্রায়ই দেখা যেত এক-দুই রান করে নিচ্ছেন, শতভাগেরও বেশি নিশ্চিত হলেই তবে বাউন্ডারি শট। সেঞ্চুরির পরে আবার পুষিয়ে দিচ্ছেন স্ট্রাইক রেটের গতি বাড়িয়ে।

তামিম কি তা বোঝেন না? গতকালও যেমন ৬২ পেরোনোর পর আর চার মারলেন না। পরের ১৮ এসেছে কেবলই সিঙ্গেলস ও ডাবলস থেকে। সবই তো ঠিক ছিল। কিন্তু মাঝখানে ইনিংসের ১৩টি ওভারে কোনো চার মারেননি বলেই হয়তো লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন।

সবই ঠিক আছে তামিমের। শুধু ঝুঁকি নেওয়ার এই ক্যালকুলেটরটা ঠিক করতে হবে।

বাংলাদেশেরই সমস্যা!

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ৩১৪ বার ফিফটি পেরোনো ইনিংস খেলে সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র ৩৫টি!

স্কোরকার্ড

টস: বাংলাদেশ

বাংলাদেশ

রান বল ৪ ৬

তামিম ক নাভিন ব আশরাফ ৮০ ৯৮ ৯ ০

সৌম্য ক নূরি ব দওলত ০ ৩ ০ ০

ইমরুল ব নবী ৩৭ ৫৩ ৬ ০

মাহমুদউল্লাহ ক আশরাফ ব নবী ৬২ ৭৪ ৫ ২

সাকিব ক নজিবউল্লাহ ব দওলত ৪৮ ৪০ ৩ ০

মুশফিক ব রশিদ ৬ ৭ ০ ০

সাব্বির এলবিডব্লু ব রশিদ ২ ৫ ০ ০

মাশরাফি ক রশিদ ব নাভিন ৪ ৮ ০ ০

তাইজুল ক রহমত ব দওলত ১১ ৯ ১ ০

তাসকিন ব দওলত ২ ২ ০ ০

রুবেল অপরাজিত ১ ১ ০ ০

অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ১, ও ১০) ১২

মোট (৫০ ওভারে অলআউট) ২৬৫

উইকেট পতন: ১-১ (সৌম্য, ০.৫ ওভার), ২-৮৪ (ইমরুল, ১৮.১), ৩-১৬৩ (তামিম, ৩৫.১), ৪-২০৩ (মাহমুদউল্লাহ, ৪০.৪), ৫-২১৫ (মুশফিক, ৪২.৬), ৬-২২৭ (সাব্বির, ৪৪.৫), ৭-২৪৬ (সাকিব, ৪৭.৩), ৮-২৫৪ (মাশরাফি ৪৮.৪), ৯-২৬০ (তাসকিন, ৪৯.৩), ১০-২৬৫ (তাইজুল (৪৯.৬)।

বোলিং: দওলত ১০-০-৭৩-৪ (ও ৪), নাভিন ১০-০-৬২-১ (ও ২), নবী ১০-০-৪০-২ (ও ১), আশরাফ ১০-০-৫১-১ (ও ১), রশিদ ১০-০-৩৭-২ (ও ১)।

আফগানিস্তান

নূরি এলবিডব্লু ব সাকিব ৯ ২৪ ১ ০

শেহজাদ ক মুশফিক ব মাশরাফি ৩১ ২১ ৪ ১

রহমত স্টা মুশফিক ব সাকিব ৭১ ৯৩ ২ ৩

শহীদি ক সৌম্য ব তাইজুল ৭২ ১১০ ৬ ০

নবী ক সাব্বির ব তাসকিন ৩০ ২৪ ৩ ০

নজিবউল্লাহ ক মুশফিক ব মাশরাফি ৭ ৬ ১ ০

স্টানিকজাই ক মাহমুদউল্লাহ ব তাসকিন ১০ ১০ ০ ১

রশিদ ব রুবেল ৭ ৫ ১ ০

আশরাফ এলবিডব্লু ব তাসকিন ৩ ৩ ০ ০

দওলত ক সাব্বির ব তাসকিন ২ ৩ ০ ০

নাভিন অপরাজিত ০ ১ ০ ০

অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ২, ও ১৩) ১৬

মোট (৫০ ওভারে অলআউট) ২৫৮

উইকেট পতন: ১-৪৬ (শেহজাদ, ৬.৬), ২-৪৬ (নূরি ৭.৩), ৩-১৯০ (রহমত, ৪০.২), ৪-২১০ (শহীদি, ৪৩.৩), ৫-২৩০ (নজিবউল্লাহ, ৪৫.৩), ৬-২৪৩ (নবী, ৪৭.৪), ৭-২৪৫ (স্টানিকজাই, ৪৭.৬), ৮-২৫৩ (রশিদ, ৪৮.৬), ৯-২৫৫ (আশরাফ, ৪৯.২), ১০-২৫৮ (দওলত, ৪৯.৬)।

বোলিং: মাশরাফি ১০-০-৪২-২ (ও ১), তাসকিন ৮-০-৫৯-৪ (ও ৫), সাকিব ১০-০-২৬-২ (ও ২), রুবেল ৯-০-৬২-১ (ও ৩), তাইজুল ১০-০-৪৪-১ (ও ১), মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২২-০ ।

ফল: বাংলাদেশ ৭ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদক : বিশ্বজিত পাল বাবু
চেয়ারম্যান : আলহাজ্ব নুরুজ্জামান
ঠিকানা : ৬০৩ ফুলবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563


close