৫ই অক্টোবর, ২০১৬ ইং, বুধবার ২০শে আশ্বিন, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ
পূর্ববর্তী সৈয়দ হক মারা গেছেন, এখন ‘ক’ এর কী হবে?
পরবর্তী এ কেমন প্রেমিক পুরুষ


সিনিয়র সিটিজেন বোঝা নয় মূল্যবান মানব সম্পদ


Amaderbrahmanbaria.com : - ৩০.০৯.২০১৬

কায়ছার আলী : “ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার। মস্ত ফ্লাটে যায় না দেখা এপার-ওপার। নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামী। সবচাইতে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি। ছেলের আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম, আমার এ ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম——-। বৃদ্ধাশম যিনি এদেশে সর্বপ্রথম তৈরী করেছিলেন তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন আর যেন কেউ ২য় টি তৈরী না করে। কেননা এটা সভ্য সমাজের তথা মানবতার জন্য এক কলংকময় চিহ্ন। আমাদের সমাজের বৃদ্ধ ব্যাক্তিরা চরম অবহেলিত। একজন অশীতিপর বৃদ্ধ আজ চোখে খুব কম দেখে, কানে অল্প শোনে, বেশিক্ষণ কথা মনে রাখতে পারে না। আজ অনেক কিছুর ঘাটতি হয়েছে কিন্তু কমতি হয়নি সন্তানের প্রতি চির অমলিন ভালোবাসার। ছেলে টগবগে যুবক। পরিপাটি পোশাক পরিধান করে ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় বাবা ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “বাবা কোথায় যাচ্ছ এবং কখন ফিরবে?”ছেলে একটু আগে উত্তর দিয়েছিল কিন্তু বাবা দুর্ভাগ্যবশত শুনতে বা বুঝতে পারেনি। দ্বিতীয়বার বাবা একই প্রশ্ন করলে ছেলে রাগত স্বরে বা ধমকের সুরে বলল, “বললাম তো কাজে যাচ্ছি।” বাবা খুবই মন খারাপ করলেন এবং ছেলেকে বললেন, বাবা তুমি যখন খুবই ছোট্ট ছিলে তখন জ্যোৎøা ভরা রাতে তোমাকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বাইরে বের হলে তুমি চাঁদকে দেখে বলতে, বাবা এটা কি? আমি বলতাম চাঁদ। আবার দুই এক মিনিট পর পুনরায় জিজ্ঞাসা করলে আমি একই উত্তর দিতাম। কখনও বিরক্ত না হয়ে যতবার জিজ্ঞাসা করতে, “আমি ততবার উত্তর দিতাম।” বাবারে! আজ তোমাকে মাত্র দুইবার জিজ্ঞাসা করেছি আর তাতে তুমি রাগ করছ বা বিরক্ত বোধ করছ। ঠিক আছে আমারই ভুল হয়েছে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করা। এই বলে আফসোস করে চোখের পানি ফেলতে লাগলেন। এই সমাজে অকৃতজ্ঞ ছেলেও যেমন আছে আবার কৃতজ্ঞ ছেলেও আছে। এমনি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করছি। নবাব আলীবর্দী ছিলেন উড়িষ্যার অধিপতি। তিনি বাংলাদেশ জয়ের জন্য সৈন্যবাহিনী নিয়ে নিজেই অগ্রসর হলেন। এ সময় বাংলার শাসক ছিলেন সরফরাজ খাঁ। নবাব সরফরাজ খাঁ এর সুযোগ্য ও দক্ষ সেনাপতি ছিলেন বিজয় সিংহ। বিজয় সিংহ বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন নবাব আলীবর্দীর সেনাবাহিনীর সঙ্গে। উভয় বাহিনী মুেখামুখি হন গঙ্গা নদীর তীরে গিরিয়া নামে বক্ষবিদীর্ণ ময়দানে। সাহসী এবং দেশপ্রেমিক বিজয় সিংহের সাথে যুদ্ধ করতে এসেছিলেন তার বার বছরের কিশোর পুত্র জালিম সিংহ। যুদ্ধ করতে করতে বিজয় সিংহ এক সময় শত্র“র বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে মাটিতে পড়ে গেলেন। মর্মান্তিক এদৃশ্য দেখে জালিম সিংহ তার বাবার মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে হাতের তলোয়ার সাঁই সাঁই করে চারিদিকে ঘোরাতে লাগলেন। উদ্দেশ্য লাশের কাছে কাউকে আসতে না দেওয়া। শত্র“পক্ষের সৈন্যরা বালকের কান্ড দেখে কেউ কেউ তাকে ঘিরে ধরল এবং একজন সৈন্য বন্দুক উঁচু করল তাকে গুলি করার জন্য। এ দৃশ্য দেখে নবাব ছুটে এসে বন্দুক নামাতে বলল এবং বালকের সাহস দেখে নবাব নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইল সে কি চায়? বালকটি বলল, “আমি আমার বাবার পবিত্র দেহ রক্ষা করে, মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে তা হিন্দুমতে সৎকার করতে চাই।” মহত্ত্ব ও উদারতা দেখিয়ে নবাব আলীবর্দী বীর বালকের শুধু অনুরোধই রক্ষা করলেন না, তাঁর সাহস, সততা, দেশপ্রেম ও পিতৃভক্তির প্রতি সম্মান দেখিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের নাম গিরিয়ার পরিবর্তে ‘জালিম সিংহের মাঠ’ নাম রেখে দিলেন। আজ জালিম সিংহ ও নবাব আলীবর্দী খাঁ কেউই বেঁচে নেই। কিন্তু পিতৃভক্তি বা শ্রদ্ধার কারণে কাহিনীটা বাংলার ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আজ ১লা অক্টোবর। আন্তর্জাতিক প্রবীন দিবস। এবারে এ দিবসের প্রতিপাদ্য হল “বয়স বৈষ্যম্যের বিরদ্ধে রখে দাঁড়ান ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে সাধারণ পরিষদের (৪০/৮৬ নম্বর সিদ্ধান্ত) প্রবীন সংক্রান্ত ভিয়েনা আন্তর্জাতিক কর্ম পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক প্রবীন দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরই আলোকে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাধারণ সভার ৪৫/১০৬ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীন দিবস পালন করা হয়। প্রবীনদের মানবিক ও সম্মানজনক অধিকার সংরক্ষনসহ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব গড়ে তোলা দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য। প্রবীনদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে মানব জীবনের শেষ অধ্যায়ে উপনীতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বিশ্বে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। আন্তর্জাতিক প্রবীন দিবস সবার প্রতি এ বোধ সৃষ্টির অনুপ্রেরণার নিবেদিত একটি কৃতজ্ঞতাময় দিবস। ভবিষ্যত নাগরিকদের কল্যাণে সামর্থ্য থাকাকালীন কঠোর শ্রম দিয়েছেন বৃদ্ধ বয়সে তাদের প্রতি যদি সদাচারণ করা না হয় তাহলে পৃথিবীতে কৃতজ্ঞতা বোধ বলে কিছু থাকে না। মানব জীবন বড় বিচিত্রময়। জীবনের নিয়মে সব মানুষই এক সময় প্রবীন অর্থাৎ বুড়ো হয় আর বুড়ো বয়সে শারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে সংসারে মানুষ নানা রকম সমস্যা বা অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এই সমস্যা পারিবারিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ইত্যাদি। উপার্জন করার সামর্থ না থাকায় অনেক সময় পরিবারে বুড়ো মানুষের গুরুত্ব কমে যায়। তারা নানা রকম অবহেলা বা উপেক্ষার শিকার হয়। আয়ের অভাবে জীবনধারণ করা, নিজের আশ্রয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য তাদেরকে অন্যের ওপর নির্ভর করতে বা তাদের কাছে হাতপাততে হয় এটা তাদের মধ্যে এক রকম হীনমন্যতার ও সৃষ্টি করে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে রাষ্ট্র বা সরকার প্রবীনদের জন্য নানা রকম সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে। আমাদের দেশেও বর্তমানে প্রবীনদের সমস্যা ও তাদের অধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমাদের সবারই পরিবারেও আত্মীয় স্বজনের মধ্যে প্রবীণ কেউ না কেউ আছেন। পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে কিংবা রাস্তায় বেরুলেও আমরা অনেক প্রবীন লোককে দেখতে পাই। চলাফেরায়, রাস্তায় পেরুতে, যানবাহনে উঠতে তাঁদের অসুবিধাগুলো আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারি। এই প্রবীনরা সবসময় প্রবীন ছিলেন না। একসময় তাঁরা পরিবার ও সমাজের জন্য অনেককিছু করেছেন। আজ বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের প্রতিও সমাজের কিছু দায়িত্ব বা কর্তব্য রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমরাও যে একদিন বৃদ্ধ হব সে কথাটাও আমাদের মনে রাখা দরকার। বয়স বা অসুখ-বিসুখের কারণে কাজ করার সামর্থ্য কমে এলেও প্রবীণরা তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের সাহায্য করতে পারেন। সেদিক থেকে তাঁরা অন্য যে কোন বয়সের মানুষের মতই সমাজের সম্পদ। মূল্যবান মানব সম্পদ। অন্যান্য নাগরিক অধিকারের পাশাপাশি সমাজে প্রবীনদের জন্য কিছু বিশেষ অধিকার থাকে। তবে সবার আগে প্রবীনদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পরিবারেও সমাজে তাঁদেরকে অপ্রয়োজনীয় বা বোঝা হিসেবে গন্য করার মানসিকতা বদলাতে হবে। আমাদের দেশে সাধারনত ষাটোর্ধ্ব বয়সের মানুষকে প্রবীণ বলে গণ্য করা হয়। কারণ ঐ বয়সের পর মানুষ দৈনন্দিন জীবিকা উপার্জনের কাজ থেকে অবসর নেয়। বাংলাদেশে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৯বছর। বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোন কোন পেশা জীবিদের জন্য বয়সের এই সীমা সম্প্রতি ৬৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যদিও ঐ বয়সের পরও যেসব মানুষ তার কাজ করার সামর্থ হারিয়ে ফেলে তা নয়। তবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও ৬০ বা ৬৫ বছরের বয়সের পর একজন মানুষকে প্রবীন বা ‘সিনিয়র সিটিজেন’ গণ্য করা হয়। সমাজে তাঁদেরকে বিশেষ সম্মান ও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। জাতিসংঘ প্রবীন জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কতিপয় নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এছাড়াও জাতিসংঘ প্রবীনদের অধিকার ও তাদের প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতিটি দেশে কাজ করে যাচ্ছে। প্রবীন শুধু পিতা নয়, মাতাও প্রবীন। তাই পিতৃ ও মাতৃঋণের চিরদায়বদ্ধ পৃথিবীর সকল সন্তান। গত তিন-চার বছর আগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ তে প্রচারিত হয়েছিল একবীর, মহাবীর পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামের বীরেন মজুমদারের একটি অবাক করা কাহিনী। “যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ (হে দেবী তুমি মায়ের রূপ ধারণ করে আমাকে রক্ষা করো, আমাকে রক্ষা করো, আমাকে রক্ষা করো)। বীরেনের দিন শুরু হয় এই মন্ত্রে, দিন শেষও এই বুলিতেই। ধর্ম-কর্ম, ধ্যানে-জ্ঞানে এ মন্ত্র তিনি নিবেদন করেন তাঁর মাকে, দিন-রাত ২৪ ঘন্টা প্রায় ৫০ বছর এভাবেই চলে আসছে। মা’গো, কি লাগবে তোমার? একথাটা যেন তাঁর বাড়ির আশেপাশে ধ্বনিত হতে থাকে সারাক্ষণ। চিরকুমার বীরেনের মাকে নিয়েই তাঁর সংসার। দিন মজুরি করে যা আয় হয় তা দিয়েই তাঁর সংসার চলে। তাঁর বড় ভাই ও ভাবী বলেন, অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন বীরেনের কথা। আমারা বলি, সর্বদা মায়ের সেবা করে । ১৮ বছর আগে মা সঙ্গী ছাড়া হন, তখন থেকেই মা সম্পূর্ণ অচল। বীরেনের জন্মের সময় মা যা যা করেছিল, বীরেন এখন তাই করছে। গোসল করানো, কাপড় ধোয়া, খাওয়ানো, ডাক্তার দেখানো, চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ানো দেখলে মনে হয় বাবার কোলে ছোট্ট শিশু। এলাকাবাসী ও প্রতিবেশীরা জানায় মায়ের প্রতি বীরেনের শ্রদ্ধার তুলনা হয় না। আমাদের চারপাশে এমন দৃষ্টান্ত কোথাও দেখা যায় না। কোথাও কাজে গেলে বাড়িতে এসে মাকে দেখে যাবে সে। মাকে না খাইয়ে মুখে খাবার তুলেছে এ দৃশ্য কেউ কখনও দেখেনি। মায়ের কষ্টের কথা ভেবে কোথাও বেড়াতে যায় না সে। ভাঙ্গা ঘর বৃষ্টির জলে ভেসে গেলেও মায়ের শরীরে ফোঁটা পড়তে দেয় না বীরেন। পলিথিন দিয়ে মোড়ে মায়ের পাশে বসে নির্ঘুম রাত কাটানোর উদাহরণ ভুরি ভুরি। ওর সততা ও মাতৃভক্তির জন্য আমরা ওকে ব্রাহ্মণের আসনে বসিয়েছি। আমাদের পূজা-পার্বনে ও-ই প্রধান ভূমিকা রাখে। সারা রাত মায়ের জন্য পানি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা বালক বায়েজীদ বোস্তামি আর খরস্রোতা দামোদর নদী পাড় হয়ে মাকে দেখতে যাওয়া ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা বইয়ে পড়েছি। বাস্তবে বীরেনকে দেখে আরেক নতুন অভিজ্ঞতা হল। প্রতিবেদন প্রচারে দেখা যায়, বীরেন মাকে জিয়া নগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে গোসল, খাওয়াসহ সবকিছু করে মাকে একটা ডালায় (ঝুড়ি) করে দীর্ঘ সাত মাইল পথ হেঁটে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাথায় বসে নিয়ে যায়। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বীরেন বলেন, “মাতৃসেবা আমার বহুদিনের সাধনা। মাকে যখন আমি মাথায় তুলি তখন আমার শরীরে প্রশান্তি অনুভব করি। মাকে আমি আমার খুশিমত বহন করি। প্রশ্ন করি, মা তুমি কষ্ট পাও? মা উত্তর দেয়, না বাবা।” বিয়ের প্রসঙ্গ তুললে বীরেন বলেন আমি ভাবি বিয়ে করলে মায়ের এমন সেবা কি করতে পারব? চারপাশে যারা আছে তারা তো পারে না। আমার কাছে আমার মা পরম ধর্ম। এই ধর্মের মধ্য দিয়েই স্বর্গের পথে হাটতে চাই। বীরেনের মা ঊষা রাণী আধো আধো কন্ঠে বলেন, “আমি চাই বিশ্বের সব ঘরে ঘরে বীরেনের মত সন্তান যেন জন্মায়। যে সন্তান মাকে কোনদিন কষ্ট দেয় না। আমার তো ও কে দেওয়ার কিছুই নেই, ঠাকুর ওকে দেখবে।” জিয়া নগরের চিকিৎসক এ বিষয়ে বলেন, প্রায়ই বীরেন তাঁর অসুস্থ মাকে মাথায় করে নিয়ে আসেন আমার কাছে। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। বীরেনের মাতৃভক্তি দেখে অবাক হই। আজকাল এমনটা তো দেখাই যায় না। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আজ আমাদের জ্ঞানের প্রসারতা, ব্যাপকতা, প্রতিযোগিতা চলছে। নামের আগে ও পরে বিশেষণ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখা রয়েছে। এর পরেও আমরা ছোট বালক জালিম সিংহ অথবা অশিক্ষিত বীরেন মজুমদার এর নৈতিক শিক্ষা বা আধ্যাতিক শিক্ষা বা চেতনার কাছে বারবার পরাজিত হচ্ছি কেন? ঘুনে ধরা এই সমাজে বিবেককে কফিনের দোরগোড়ায় না রেখে চিরজাগ্রত করতে হবে। সন্তান এবং পিতামাতা একে অপরের পরিপূরক বা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। সময়ের বিবর্তনে একে অপরের প্রতি অতি মাত্রায় নির্ভরশীল। পরিশেষে আন্তর্জাতিক প্রবীন দিবসে চিরকৃতজ্ঞ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং অকৃতজ্ঞ সন্তানদের পুনরায় প্রবীনদের (পিতা-মাতা) ব্যাপারে ভেবে দেখার বিনীত অনুরোধ করছি। শুরুতে এবং শেষে লেখা গান দু’টো পুরোপুরি শোনার আহ্বান জানাচ্ছি।“পুত্র এখন পয়সাওয়ালা, বাড়ি যে তার তিন-চার তালা, সব তালাতেই ঘর আছে মায়ের নাইরে ঘর, বিয়ের পরে বউ আপন, মা এখন পর। মাথাতে রাখিনি পুত্র উঁকুন তারে খাবে, মাটিতে রাখিনি পুত্র পিঁপড়ায় নিয়ে যাবে, অসুখ-বিসুখ হলে পরে দুই হাত তুলে ধিক্কার করে, ওরে বিধি আমায় নিয়ে বাঁচাও তুমি তারে সে মায়ের এখন আর নেয় না খবর। এ বাড়িটা মায়ের কাছে অন্ধকার কবর———-।

লেখকঃ শিক্ষক, ০১৭১৭-৯৭৭৬৩৪, [email protected]
(বিস্তারিত) এম.এস.এস (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), বি.এড (১ম শ্রেণী)। সহকারী প্রধান শিক্ষক। ফরক্কাবাদ এন.আই স্কুল এন্ড কলেজ। বিরল, দিনাজপুর।





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদক : বিশ্বজিত পাল বাবু
চেয়ারম্যান : আলহাজ্ব নুরুজ্জামান
ঠিকানা : ৬০৩ ফুলবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563


close