নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের যে আহ্বান জানিয়েছেন তার সঙ্গে ২০-দলীয় জোটের কোনো সম্পর্ক নেই। জাতীয় নেত্রী হিসেবে তিনি ওই আহ্বান জানিয়েছেন। ২০-দল তাঁর সেই আহ্বানকে সমর্থন জানিয়েছে।
সেসঙ্গে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও গ্যাসের দাম বাড়ালে তার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০ দল। কর্মসূচি কবে ও কী হবে তা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঠিক করবেন। এর আগে তিনি সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন।
গতকাল রোববার রাতে ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বৈঠকে এসব নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় বলে বৈঠকের একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে রাত পৌনে নয়টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন জোটের শীর্ষ নেতারা। বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
বৈঠকের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, বৈঠকে খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান ও তার পরিপ্রেক্ষিতে জোটের শরিকদের মধ্যে সৃষ্ট সংশয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বিশেষত কাদের সিদ্দিকী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে যাওয়ার পর তাঁর বক্তব্য ও এর পরিপ্রেক্ষিতে জোটের শরিক দলের কোনো কোনো নেতার প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে জানান, খালেদা জিয়া যে আহ্বান জানিয়েছেন তা জাতীয় নেত্রী হিসেবে জানিয়েছেন। এর সঙ্গে ২০-দলের সম্পর্ক নেই। পরবর্তীতে শরিক দলের নেতারা খালেদা জিয়ার এই আহ্বানকে সমর্থন জানান।
বৈঠক সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্য ও জামায়াতকে ছাড়া না ছাড়া নিয়ে আলোচনা তৈরি হলেও বৈঠকে জামায়াতকে জোটে রাখা না রাখার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। বৈঠকে একজন নেতা বলেন, জামায়াত ভোটের রাজনীতিতে ফ্যাক্টর। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে বাধা। আবার যাদের সঙ্গে ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে তাদের শুধু ইমেজ আছে, ভোট নেই। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্য জরুরি। তাই সবাইকে সতর্ক হয়ে কথা বলতে হবে।
অপর একজন নেতা বলেন, ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু জোটের শরিক কেউ আহত হন এভাবে কথা বলা ঠিক হবে না। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া বেশির ভাগ সময় চুপ ছিলেন। সভার শেষ দিকে তিনি বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। তবে এর পাশাপাশি অন্যান্য ইস্যুর দিকেও নজর দিতে হবে।
সভার অন্য একটি সূত্র জানায়, সভায় জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলন করার সময়ের বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত প্রচার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সভা শেষে ২০-দলের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা প্রথম আলোকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সভার আলোচনায় বুঝা গেছে, জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের সম্পর্ক নেই। ঐক্য হলেও ২০-দলীয় জোট যেভাবে ছিল, আছে সেভাবেই থাকবে।
সূত্র জানায়, সভায় রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, গ্যাসের সম্ভাব্য দাম বৃদ্ধি, জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনা হয়। বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিও আলোচনায় এসেছে। তবে কোনো কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। কর্মসূচি খালেদা জিয়া চূড়ান্ত করবেন। ঈদের পরেই এই কর্মসূচি আসতে পারে। ঈদের আগে হজে যাবেন খালেদা জিয়া। এর আগে এসব বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন খালেদা জিয়া।
বৈঠকে জামায়াতের আব্দুল হালিম, এলডিপির অলি আহমদ, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ ন্যাপের জেবেল রহমান গানিসহ শরিক দলগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।