২৪শে আগস্ট, ২০১৬ ইং, বুধবার ৯ই ভাদ্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ


বাড়ছে গ্যাসের দাম


Amaderbrahmanbaria.com : - ২০.০৮.২০১৬

নিউজ ডেস্ক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের বিরোধিতার মুখে বিতরণ কোম্পানিগুলোর গড়ে ৬৬ থেকে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করে এখন দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্যাসের দাম যাই বাড়–ক না কেন তা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকর হবে। যদিও বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এখন গ্যাসের দাম বাড়ালে মুখ থুবড়ে পড়বে বস্ত্র খাতসহ রপ্তানিমুখী শিল্প, নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও। এতে ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যআয়ের দেশে পরিণত করার সরকারি ভিশন বাধাগ্রস্থ হবে। সর্বোপরি বর্তমান সরকারের মারাত্মক জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বর্তমান সময়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক মনে করছেন তারা।

বিইআরসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানিই সকল শ্রেণির ভোক্তা পর্যায়ে আপস্ট্রিম খরচ, সঞ্চালন ও বিতরণ চার্জ বাবদ গড়ে ৬৬ থেকে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে। তাদের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত (মিটারযুক্ত) প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বর্তমানে ৭ টাকার স্থলে ১৪০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬ টাকা ৮০ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া গৃহস্থালি কাজে সিঙ্গেল বার্নারের (এক চুলা) দাম ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১০০ এবং দুই চুলায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি মাসে ৬৫০ টাকার পরিবর্তে ১২০০ টাকা করার প্রস্তাব করে।

গত বছর সেপ্টেম্বরে এক চুলার দাম ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ এবং দুই চলার ক্ষেত্রে ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হয়। শিল্পে ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৮ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে ১৩০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৯ টাকা ২৬ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়। সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ২ টাকা ৫৮ পয়সা থেকে ৭১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪১ পয়সার প্রস্তাব করে। শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৬ টাকা ৭৪ পয়সা থেকে ৬২ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ টাকা ৯৫ পয়সার প্রস্তাব দেয়। চা বাগানে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বিদ্যমান ৬ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ৬৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ টাকা ৫০ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়। বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে ৭২ শতাংশ বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৯ টাকা ৫০ পয়সা।

সিএনজি ও ফিড গ্যাসের দাম ৮৩ শতাংশ বাড়িয়ে ২৭ টাকা থেকে ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা করার প্রস্তাব করে। এসব প্রস্তাবের ওপর ৭-১৮ আগস্ট পর্যন্ত গণশুনানি করা হয়েছে। যদিও গণশুনানিতে ব্যাপক জেরার মুখে পড়তে হয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে। শুনানিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী ও কয়েকটি সংগঠনের নেতারা অংশ নিয়ে সকলেই বর্তমান সময়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। কারওয়ান বাজারের টিসিবি মিলনায়তনে বিইআরসির গণশুনানিকালে হলের বাইরে প্রতিদিনই গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন।

তাদের দাবি, গ্যাসের দাম বাড়লে সর্বস্তরে এর প্রভাব পড়ে। এতে নাভিশ্বাস ওঠে শ্রমজীবী মানুষের। তাছাড়া বিতরণ কোম্পানিগুলো লাভে রয়েছে। ফলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এরপরও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে হরতাল করার হুশিয়ারি দেওয়া হয়। তারপরও সরকারের ইচ্ছায় গ্যাসের দাম বাড়াতে প্রস্তুতি শুরু করেছে বিইআরসি। সরকারের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গত সেপ্টেম্বরে যুক্তি দেয়া হয়েছিল, ভবিষ্যৎ জ্বালানি চাহিদা মেটানো, গ্যাসের অপচয় রোধ এবং বড় বিনিয়োগের অর্থ জোগানোর জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন। তখন প্রাকৃতিক গ্যাসের পণ্যমূল্যও নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এবার সব খাতের বিপরীতেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এবারের গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে যুক্তি হলো-এত কম দামে বিশ্বে কেউ গ্যাস ব্যবহার করে না। বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনে কম দামে বিক্রি করতে সরকারের প্রচুর ভর্তুকি গুণতে হচ্ছে। আবাসিকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সঞ্চালিত গ্যাসের ও এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীদের মধ্যে মূল্যবৈষম্য দূর করাও দাম বৃদ্ধির অন্যতম লক্ষ্য। আর সিএনজির দাম বাড়ানো হবে যানবাহনে ব্যবহৃত তরল জ্বালানির (পেট্রোল ও অকটেন) দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য। তাছাড়া ক্রমেই মজুদ কমে আসা প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন।

সরকারের গ্যাসের দাম বাড়ানোর এসব যুক্তির ওপর নির্ভর করে শিগগিরই গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেবে বিইআরসি। গত বৃহস্পতিবার গণশুনানির শেষ দিনে বিইআরসির চেয়ারম্যান এআর খান প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সব শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তিনি জানান, তিন মাসের মধ্যে শুনানির আদেশ দেওয়ার বিধান থাকলেও শিগগিরিই তা জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে গ্যাসের দাম যাই বাড়–ক না কেন তা ১ সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকর হবে। শুনানির শেষ দিনে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে ৬৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়।

কোম্পানিগুলোর উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহসভাপতি ফজলুল হক। তিনি বলেন, এ প্রস্তাব কার্যকর হলে পণ্য উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। এমনিই বস্ত্র খাত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দামের কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেনা এ খাতটি। এক বছরের মাথায় আবারও ক্যাপটিভে ১৩০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে খাতটি মুখ থুবড়ে পড়বে। তবে বর্তমানে কোনো কারণ ছাড়াই গ্যাসের দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক মনে করছেন ব্যাবসায়ীরা।আ/সং





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদকঃ জাবেদ রহিম বিজন

Amaderbrahmanbaria.com
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563



close