২৬শে আগস্ট, ২০১৬ ইং, শুক্রবার ১১ই ভাদ্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ
  • প্রচ্ছদ » slider 3 » পিছিয়ে গেল প্রাথমিকের ১১ কোটি বই ছাপার কাজ


পিছিয়ে গেল প্রাথমিকের ১১ কোটি বই ছাপার কাজ


Amaderbrahmanbaria.com : - ২০.০৮.২০১৬

 
নিজস্ব প্রতিবেদক : এ বছর প্রাথমিকের সাড়ে ১১ কোটি পাঠ্যবই ছাপার কাজ ইতোমধ্যে এক মাস পিছিয়ে গেছে। এই কাজ আরো পেছাবে। ফলে সময় মতো শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো আগামী বছর অনেকটাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।


জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং প্রকাশকরা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছর সাধারণত জুলাই মাসে বই ছাপার কার্যাদেশ দেয়া হয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। সূত্র জানিয়েছে, বিলম্বের কারণ বিশ্বব্যাংক। অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে বিপুলসংখ্যক বই ছাপার কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকসহ আরো একটি মহল জোর তৎপরতা চালিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা সফল হয়নি। ভারতে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন মহলের নানা তৎপরতার কারণেই বই ছাপার কাজে এবার বিলম্ব হতে যাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, এনসিটিবি থেকে প্রস্তাব পাঠানোর এক মাস পর বিশ্বব্যাংক দুই-তৃতীয়াংশ বইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফাইল ফেরত দিয়েছে। সাধারণত বিশ্বব্যাংকের কাছে এনসিটিবি থেকে প্রস্তাব পাঠানোর পর দু-তিন দিনের মাথায় ফাইল ফেরত দেয়া হয় যাচাই করে। নিয়ম অনুযায়ী মূল্যায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক সর্বোচ্চ ১৩ দিন ফাইল ধরে রাখতে পারে। কিন্তু সেখানে তারা এক মাস পরে ফাইল ছেড়েছে, তা-ও পুরোপুরি নয়। এ ছাড়া প্রাক-প্রাথমিকের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্তই জানায়নি।

গত বছরও বিশ্বব্যাংকের নিয়মবহির্ভূত শর্তের কারণে দেশীয় মুদ্রণশিল্প মালিকদের বই ছাপার কাজ পেতে জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। বিলম্বে কাজ পাওয়ার কারণে সময় মতো সব শিক্ষার্থীর হাতে যেমন বই পৌঁছে দেয়া যায়নি তেমনি বইয়ের মানও অনেক খারাপ হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে সরকার ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের বই তুলে দেয়ার মাধ্যমে বই উৎসব পালন করে। গত বছরও এ উৎসব পালন করা হয়, তবে সর্বত্র সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এবার এটা আরো অনিশ্চিত হয়ে গেল।
এনসিটিবি থেকে জানানো হয়েছে : প্রাথমিকের সাড়ে ১১ কোটি বই ছাপার জন্য মোট ৯৮টি লটে ভাগ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে ভারতের পিতামব্রা বুকস প্রাইভেট লিমিটেড ৫৫টি লটে সর্বনি¤œ দরদাতা নির্বাচিত হয়। ১৭টি লটে দক্ষিণ কোরিয়া, দুটি চীন এবং বাকি লটে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়। কিন্তু অভিজ্ঞতা বিষয়ে জাল সনদ জমা দেয়ার কারণে পিতামব্রা বুকসের ৫৫টি লটই বাতিল করা হয়। দণি কোরিয়া এবং চীনকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দেয়ার কারণে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, পিতামব্রা বিদেশে বই সরবরাহ বিষয়ে দুই বছরের অভিজ্ঞতা বিষয়ে জাল সনদ জমা দিয়েছে। এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণচন্দ্র পালের বরাত দিয়ে তারা এ সনদ জমা দেয়। এনসিটিবির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ সাহা নয়া দিগন্তকে বলেন, তাদের সনদ যে জাল সেটি প্রমাণিত হয়েছে। আগের চেয়ারম্যানও স্বীকার করেছেন তিনি তাদের এ ধরনের কোনো সনদ দেননি। তা ছাড়া তিনি দিলেও তা গ্রহণযোগ্য হতো না। কারণ বাস্তবে পিতামব্রা এনসিটিবিকে দুই বছর এনসিটিবির বই ছাপার কাজ করেনি।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, টেকনিক্যাল কমিটি যাচাই বাছাই করে দরপত্রে অংশ নেয়া ভারতের পিতামব্রা, দণি কোরিয়া এবং চীনের প্রতিষ্ঠানকে অযোগ্য ঘোষণা করে। এরপর ৯৮টি লটের মধ্যে ৮২টি লট বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ১৬টি লটে ভারতের অপর কিছু প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয়। ভারতের কৃষ্ণা ট্রেডার্সকে ১০টি লটে মনোনীত করা হয়। এনসিটিবির তৈরি করা এ প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের ঋণের শর্ত অনুযায়ী মূল্যায়নের জন্য ১৭ জুলাই বিশ্বব্যাংকে পাঠানো হয়। সংস্থাটির সাধারণত অতীতে বিশ্বব্যাংক দু-তিন দিন পরে ফাইল ফেরত দিত। নিয়ম অনুযায়ী তারা সর্বোচ্চ ১৩ দিন ফাইল ধরে রাখতে পারে। কিন্তু এ বছর তারা গত ১৭ আগস্ট এক মাসের মাথায় ৬৩টি লটের ব্যাপারে অনুকূল সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। বাকি লটের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
অভিযোগ রয়েছে পিতামব্রাকে কাজ পাইয়ে দিতেই তারা ফাইল আটকে রেখেছে। এ সময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত টিমও পাঠানো হয় এনসিটিবিতে। পিতামব্রাকে বাদ দেয়া সঠিক হয়েছে কি না সে মর্মে তদন্ত করতে উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়। তবে এনসিটিবি থেকে তাদের জানিয়ে দেয়া হয় এ তদন্ত অন্যায় এবং আইনবহির্ভূত। নোটিফিকেশন অ্যাওয়ার্ড দেয়ার পর যদি কোনো বিডার অভিযোগ করে তবেই তা তদন্ত করে দেখা যেতে পারে। ফলে মন্ত্রণালয় তদন্ত কাজ থামাতে বাধ্য হয়। অভিযোগ রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি মহলও জাল সনদ সত্ত্বেও পিতামব্রাকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়েছে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২৪ ডিসেম্বর উপজেলায় বই পাঠানোর জন্য তারিখ নির্ধারিত। কিন্তু বিশ্বব্যাংক দীর্ঘদিন ফাইল আটকে রাখায় এখন বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের আগে উপজেলায় বই পাঠানো কঠিন হয়ে যাবে। কারণ বিশ্বব্যাংক ফাইল ফেরত দেয়ার পর এখন তা পাঠাতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে। এরপর সেখান থেকে ফেরত আসার পর এনসিটিবি বোর্ড সভায় উত্থাপন করা হবে। তারপর যারা কাজ পেয়েছে তাদেরকে চিঠি দিয়ে জানাতে হবে (নোটিফিকেশন অ্যাওয়ার্ড)। নোটিফিকেশন অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর তারা ২৮ দিন সময় পাবে পরবর্তী কার্যক্রম শুরুর জন্য। ৯ দিনের মধ্যে তাদেরকে নিরাপত্তা জামানত জমা দিতে হবে। ২৮ দিনের কার্যক্রম শেষের পরবর্তী ৮৪ দিনের মাথায় তাদেরকে বই ছেপে তা জমা দিতে হবে। সেই হিসেবে ইতোমধ্যে নির্ধারিত সময় থেকে ২৫ দিন পার হয়ে গেছে। ফলে যেখানে ২৪ ডিসেম্বর উপজেলা পর্যায়ে বই পৌঁছানোর কথা তা এখন ১৭ জানুয়ারিতে এসে ঠেকেছে। এনসিটিবি সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক এখনো সব লটের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি। ফলে আরো দেরি হবে। এনসিটিবি থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে সঠিক সময়ে সব বই সর্বত্র পৌঁছানো এবার অবধারিতভাবে বিলম্ব হবে। মুদ্রণ শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকেও একই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান নয়া দিগন্তকে বলেন, বই ছাপার কাজ অবশ্যই বিলম্ব হচ্ছে এবং সঠিক সময়ে বই পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে গেল বিশ্বব্যাংকের কারণে। বিশ্বব্যাংক যা করছে তা ঠিক নয়। বই ছাপার কাজে বিশ্বব্যাংকের এ খবরদারি থেকে মুক্ত হওয়া দরকার। সামান্য কিছু ঋণের কারণে তারা শতভাগ খবরদারি করছে। তাদের থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বই ছাপার কাজ করা উচিত।
সূত্র জানায়, এনসিটিবি এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে মন্ত্রণালয়ে বই ছাপার বিলম্ব বিষয়ে গত সপ্তাহে উদ্বেগ জানানোর পর বিশ্বব্যাংক বুধবার ৬৩টি লটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানায়।

গত বছর ভারতে বই ছাপা ঠেকাতে বাংলাদেশের মুদ্রণ শিল্প মালিকরা একজোট হয়ে বই ছাপার দাম অনেক কম নির্ধারণ করে। ফলে ভারতের কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ পায়নি। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ তোলা হয়, কম দামে মানসম্পন্ন বই সরবরাহ করবে না দেশীয় প্রতিষ্ঠান। তাই বইয়ের মান ঠিক রাখার জন্য বিশ্বব্যাংক অনেক শর্ত আরোপ করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি যা দরপত্রের সম্পূর্ণ বাইরে ছিল। বিশ্বব্যাংকের এ শর্তের বিরুদ্ধে একযোগে রুখে দাঁড়ায় দেশীয় মুদ্রণ শিল্প মালিকরা এবং বিশ্বব্যাংকের শর্ত পরিহার না করা হলে তারা বই ছাপা বয়কট করার ঘোষণা দেয়। শেষ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মধ্যস্থতায় বিশ্বব্যাংকের শর্ত ছাড়াই বই ছাপার কাজ পায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান। তবে বিশ্বব্যাংকের শর্তের বিষয়টি সুরাহা করতে যেমন অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তেমনি বিলম্বের ঘটনাও ঘটে। সঠিক সময় বই পাওয়া নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এবারও বিশ্বব্যাংকের কারণে বই ছাপার কাজে বিলম্ব ঘটতে যাচ্ছে মর্মে অভিযোগ তোলা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে।
বিশ্বব্যাংক যে ৬৩টি লটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তার মধ্যে ৬১টি লটে বাংলাদেশ এবং দুটি লটে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ পেয়েছে।
গত পাঁচ বছরে প্রাথমিক স্তরের ১৪ কোটি পাঠ্যবই ছাপা হয়েছে ভারতে। বঞ্চিত হয়েছে দেশের মুদ্রণ শিল্প, গরিব শ্রমিক এবং ছোট ছোট অনেক ব্যবসায়ী। এনসিটিবি ২০১০ সালে সর্বপ্রথম প্রাইমারি স্কুলের বই ছাপার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। সেই থেকে প্রায় প্রতি বছর ভারতীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যায় দেশের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদকঃ জাবেদ রহিম বিজন

Amaderbrahmanbaria.com
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563



close