সুন্দরবনের কাছাকাছি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের অবস্থান অনড়। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলছেন, সুন্দরবনের ক্ষতি এড়াতে ব্যবহার করা হবে সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে হয়তো বিষাক্ত সালফার গ্যাস কমানো যাবে, কিন্তু তা শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।
এদিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাবে প্রকৃতি ধ্বংসের উৎকৃষ্ট উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস। এমন পরিণাম হতে পারে সুন্দরবনেরও।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে কয়ালাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ফলে বড় বড় পেকানসহ অধিকাংশ গাছের মৃত্যু হয়েছে অকালে। কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয় আশির দশকে। নির্মাণের ২০ থেকে ২৫ বছরের মাথায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা প্রকৃতির অবস্থা এখন করুণ। উন্নত বিশ্বের এমন ভয়াবহ উদাহারণের পরেও সুন্দরবনের মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত সরকারের। সাধারণ মানুষ বলছে, বিদ্যুৎ প্রয়োজন, তবে সুন্দরবনের ক্ষতি করে নয়।
সরকারিভাবে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ‘আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ফলে সুন্দরবনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। অথচ গবেষকরা বলছেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারেও পরিবেশ কখনো নিরাপদ নয়।
সরকারি প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস’এর পরিবেশ সমীক্ষাতেও ক্ষতির আশংকা করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে কয়লা বহনকারী জাহাজের শব্দ, স্থানান্তরকালে কয়লার বর্জ্য ও জাহাজ চলাচলের নির্দিষ্ট পথের ব্যত্যয় হলে ক্ষতি হবে সুন্দরবনের, প্রভাব পড়বে জীববৈচিত্র্যের।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলছেন, উন্নতি প্রযুক্তি ব্যবহার করেই নির্মাণ করা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। তিনি বলেন, কয়লা খোলা জাহাজে আসবে না। একেবারে ঢাকা অবস্থায় আসবে। এটা না দেখলে কাউকে বোঝানো যাবে না। আমরা উদাহারণ দেখাতে চাই। বিশ্বে এরকম অনেক নিদর্শন আছে। যদি এটা নির্মাণের পরে ক্ষতির আশংকা দেখা যায় তাহলে প্রয়োজনে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বলেন, ‘কয়লা নদীতে পড়বেই। ৩০ বছর মধ্যে কয়লা নদীর মধ্যে পড়বে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা আছে? ৩০ বছর ধরে মনিটরিংয়ের জন্য কে বসে থাকবে? ঢাকা শহরে যখন গাড়ি চলে তখন সামনে লাল বাতি জ্বললেও কেউ কী থামে?’
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে পিডিবি ও ভারতের এনটিটিসি। যদিও ভারতে সুন্দরবনের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতিই দেওয়া হয়নি।
যমুনা টিভি থেকে নেয়া