নিজস্ব প্রতিবেদক : শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সুন্দরবন রক্ষার লড়াইয়ে শামিল হতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল। আর এ জন্য রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের আন্দোলনকে আরও বেগবান করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত ‘রামপালে কী হচ্ছে? উন্নয়ন, পরিবেশ ও গণতন্ত্রের প্রশ্ন’ শীর্ষক প্রশ্নোত্তর ও আলোচনা সভায় সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র আয়োজিত এই সভায় রামপাল প্রকল্পের কারিগরি, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক দিক নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।
সুলতানা কামাল বলেন, মাত্র কয়েক বছর আগে হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুর্গন্ধের কারণে নাকে কাপড় দিতে হয়েছে। রামপাল প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের চারপাশে ক্ষমতাবানেরা জমি কিনে শিল্প প্লট তৈরি করছেন। ফলে সুন্দরবনের দিকে এখন সব মুনাফাখোর ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
সুলতানা কামাল আরও বলেন, তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে রামপাল প্রকল্প বাতিল ও সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে।
সভায় তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, রামপাল প্রকল্পটি যে কোম্পানি তৈরি করছে, তার নাম রাখা হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী কোম্পানি। কিন্তু এই প্রকল্পের কাজ যতই এগোচ্ছে, ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের তত বেশি বৈরিতা বাড়ছে।
কারণ, রামপাল প্রকল্পের সব অবকাঠামো ও নির্মাণকাজ ভারতীয় কোম্পানিকে দেওয়া হচ্ছে। আর এ প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি ভারতের পরিবেশবিদেরাও স্বীকার করে নিয়েছেন। ফলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে বন্ধুত্বের সম্ভাবনা রয়েছে, তা নষ্ট হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘আমরা রামপাল প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতির বিষয়ে সরকারের মন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছি। কিন্তু তাঁরা এসব তথ্য ও যুক্তির দিকে না গিয়ে “রামপালের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না” বলতে থাকেন। এসব আচরণ দেখে মনে হয় তাঁরা অন্য কোথা থেকে এসব কুযুক্তি শুনে তা আওড়াচ্ছেন।’
পরিবেশবাদী সংগঠন প্রতিবেশ আন্দোলনের সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, সরকার থেকে বলা হচ্ছে, রামপাল প্রকল্প সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু প্রকল্পের পাশেই পশুর নদ। সেখানে রামপাল প্রকল্পের দূষিত পানি ও পদার্থ ফেলা হবে, যা এই নদ দিয়ে সুন্দরবনের ভেতরে প্রবেশ করে এর পুরো প্রাণ ও খাদ্যচক্র দূষিত করবে।
প্রকল্পের কারিগরি ও সম্ভাব্য প্রভাবের দিক উপস্থাপন করে প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা বলেন, রামপাল প্রকল্পে বছরে ৪৭ লাখ টন কয়লা পোড়ানো হবে। এতে প্রায় ১০ লাখ টন ছাই তৈরি হবে। এই ছাইয়ের পাশাপাশি পোড়ানো কয়লা থেকে বিপুল পরিমাণ সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও পারদ নির্গত হবে। প্রকল্প থেকে বলা হচ্ছে, এসব বিষাক্ত পদার্থ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ১৮৮টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা বায়ু দূষণমুক্ত করতে গিয়ে পানি দূষিত করছে।
বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক অরূপ রাহির সঞ্চালনায় আলোচকেরা রামপাল প্রকল্প নিয়ে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। প্র/আ