ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে গত তিন দিন বন্দি সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১১৯২, ১১৭৬ ও ১১৬৭ জন। অথচ কারাগারের বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৫৫৪ জন। এ অবস্থায় বন্দিরা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। ২০০৯ সালে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার উড়শিউড়ায় নতুন এ কারাগারটি যাত্রা শুরু করে, যা জেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এর আগে জেলা কারাগার ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকায়।
জানা যায়, কারাগারে বিভিন্ন ভাগে ২০টি ওয়ার্ড রয়েছে। পুরুষ ও নারী বন্দিরা আলাদাভাবে থাকে এসব ওয়ার্ডে। কয়েদি ও হাজতিদের মেঝেতে ঘুমাতে হয়। এখানে রয়েছে একটি হাসপাতাল ও সেল। অসুস্থ বন্দিদের জন্য হাসপাতালে অবশ্য বিছানার ব্যবস্থা আছে। ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থাও আছে এ কারাগারে। তবে ফাঁসির মঞ্চটি ব্যবহারের আগেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুসারে একজন বন্দির থাকার জন্য ৩৬ স্কয়ার ফুট জায়গা বরাদ্দ। প্রতি ২০ জনের জন্য একটি করে টয়লেট বরাদ্দ। কিন্তু ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দি থাকায় বন্দিরা বরাদ্দ অনুযায়ী ন্যায্য সুবিধা পাচ্ছে না বলে কারাগার সূত্রটি স্বীকার করেছে। তবে এতে বন্দিদের খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না বলেও দাবি কারা সূত্রের।
মুক্তি পাওয়া ও ভেতরে থাকা হাজতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি থাকায় রাতের বেলায় কষ্ট বেশি হয়। ঘুমানোর সময় গিজগিজ করে থাকতে হয় বন্দিদের। সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয় সকালে প্রাত্যহিক কাজ সারতে গিয়ে। সে সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টয়লেটে যেতে হয়। এ নিয়ে বন্দিদের মধ্যে প্রায় বিবাদ দেখা দেয়।
এ ব্যাপারে জেলার মো. আব্দুল বারেক বলেন, ‘দ্বিগুণ বন্দি থাকায় বরাদ্দ অনুযায়ী বন্দিরা সুবিধা পাচ্ছে না এটা সত্য। কিন্তু এতে তাদের খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। একজন বন্দির থাকার জন্য যে জায়গা নির্ধারিত আছে তাতে দুজন থাকা খুব একটা সমস্যা হয় না। কেননা তারা তো মেঝেতে ঘুমায়। তবে সকালে সবার একসঙ্গে প্রয়োজন হয় বলে টয়লেট ব্যবহারে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। বন্দিরা এটা ম্যানেজ করে নেয়।’ জেলার জানান, ইদানীং বন্দি সংখ্যা কিছুটা কমেছে। কয়েক মাস আগে রাজনৈতিক সহিংসতা চলাকালে আরো বেশি বন্দি ছিল। ওই সময়ে বন্দির সংখ্যা দেড় হাজারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছে। তখন কারাগারে কিছুটা বাড়তি চাপ পড়ে।
তিনি আরো জানান, ব্যবহারের আগেই পাটাতন ভেঙে পড়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ায় ফাঁসির মঞ্চ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জেল সুপার মো. নুরুন্নবী ভূঁইয়া বলেন, ‘বন্দিদের সুযোগ-সুবিধা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরো বেশি। ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি থাকলেও সমস্যা হয় না। কারাগারের ভেতরে বন্দিরাই সব। খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা, পাহারা দেওয়া থেকে শুরু করে সবই তারা করে। কারাগারের ভেতরে সবজি বাগানে কাজ করারও সুযোগ দেওয়া হয় বন্দিদের। সব মিলিয়ে বন্দিরা কারাগারে ভালোভাবেই দিন কাটায়। এখানে আমরা শুধু নিরাপত্তার দায়িত্বে আছি।’