মোবাইল ফোনে বক্তব্য দিলেন ড. কামাল
রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় শারিরীক অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি ড. কামাল হোসেন। তবে তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জনসভায় যুক্ত ছিলেন।শুক্রবার বিকেলে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় তিনি যুক্ত হোন।এসময় মোবাইল ফোনে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা সংলাপে গিয়ে নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবি করেছিলাম, কিন্তু আমাদের কথা না শুনে তফসিল দিয়েছে। তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণার ফলে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে না।
উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরবর্তী কর্মসূচিতে অবশ্যই রাজশাহী যাবো।ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের কথা পরিষ্কার- নির্বাচনের মাঠ সমান করতে হবে। সব দলকে সমান অধিকার দিতে হবে। মিথ্য মামলায় গ্রফতার নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় এই তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না।ফখরুল বলেন, রাজশাহীর মানুষের কাছে আমাদের আবেদন। আপনারা সংগ্রামী মানুষ, লড়াকু মানুষ। আমাদের মনে আছে, রাজনৈতিক আন্দোলনে রাজশাহীর কত মানুষের প্রাণ দিয়েছে। গণতন্ত্রকে রক্ষার করার এই আন্দোলনকে প্রাণ দিয়ে হলেও আমরা সফল করবই। জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন হবে।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন- আপনারা কি খালেদা জিয়ার মুক্তি চান? তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চান? তাহলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করতে হবে।এবার বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, এবার ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এবারের জনজোয়ারে আগামী নির্বাচনে নৌকা ভেসে যাবে।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেওয়া কথা রাখেননি। কথা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি তাঁর কথা বরখেলাপ করেছেন।সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, সিইসি সরকারের তল্পিবাহক ও অকার্যকর। বর্তমান সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। বেগম জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন চলবে। নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান তিনি।
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অলিখিত বাকশাল কায়েম করতে সরকার দেশের সব সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসনের সব স্তরে দলীয়করণ করেছে।ড. মোশাররফ বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তারপর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জনসভায় বলেন, এক মাঘে শীত যায় না। এটি ভুলে গেলে চলবে না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যদি এক শীত কারাগারে কাটাতে হয়, শেখ হাসিনাকে ১০ শীত কাটাতে হবে।মান্না বলেন, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে, একতরফা নির্বাচনী বৈতরণী পার করা সম্ভব নয়। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বানচাল করতে চায় না। ৭ দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।প্রতিহিংসা বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সরকার সে ফাঁদ পেতেছে। আমরা আবারো নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান জানাই তফসিল পেছানোর। আমাদের দাবি না মানলে কোনো নির্বাচন নয়।
রাজশাহীর জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে মান্না বলেন, ঢাকায় আসেন, দেখি ওরা আমাদের কথা শুনে কিনা। আমরা আলোচনা করে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু এরই মাঝে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে।জনসভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু বলেন, দেশকে একটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে না চাইলে ৭ দফা মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিন।মন্টু সরকারের উদ্দেশে বলেন, আমরা যে দাবিগুলো দিয়েছি, সেগুলো মেনে নিন। আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি। সেগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
জনসভায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিচার চাই, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনা বাইরে থাকতে পারেন না। শেখ হাসিনাকেও জেলে যেতে হবে।’জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘হুদার অধীনে নির্বাচনে গেলে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে, শেখ হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। আর খালেদা জিয়া আমৃত্যু কারাগারে এবং তারেক জিয়া আজীবন নির্বাসনে থাকবেন। আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি, এ দেশের মানুষ আমাকে, আপনাকে ছাড়বে না। তাই বলছি, হুদাকে নামান, শেখ হাসিনাকে নামান। আমরা নির্বাচনে গেলে জয়ী হব যদি ভোট দিতে পারি।’
জনসভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের ভীত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে। সরকার যত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক না কেন, ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে হবে। জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত।জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কেউ কখনো বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান ক্ষমতাসীনরাও পারবে না।জনসভায় আরো বক্তব্য দিয়েছেন অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, শহীদুল্লাহ কায়সার, আবদুল গোফরান, শাহজাহান মিয়া, আবদুর রউফ ইউছুপ, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হারুনুর রশিদ, নাদিম মাহমুদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাহ আহমদ বাদল, মোস্তাক আহমেদ, এ টি এম গোলাম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, রফিকুল ইসলাম, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া প্রমুখ।
এর আগে আজ দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভা শুরু হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আজকের জনসভায় যোগ দিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।জনসভায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। এরই মধ্যে জনসভায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বিজেপির সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন নগরীর সাহেববাজারে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছেন। নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ সাত দফা দাবি আদায়ে নবগঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহীতে এটি চতুর্থ সমাবেশ।সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল