রাতে এসএমএস, সকালে স্ত্রীর লাশ পেলেন স্বামী
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ইয়াসমিন সুলতানা নিগার (২০) নামের এক অন্তঃস্বত্ত্বা গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার (৯ নভেম্বর) সকালে উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছোটদারোগারহাট ভূঁইয়ার বটতল নামক স্থানে রাস্তার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।নিহত ইয়াসমিন সুলতানা নিগার সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের পূর্ব লালানগর গ্রামের জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবুলের মেয়ে ও মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বালিয়াদী গ্রামের মো. সরোয়ার উদ্দিন রাসেলের স্ত্রী।খবর পেয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, জহিরুল ইসলামের পাঁচ সন্তানের মধ্যে নিগার সবচেয়ে ছোট মেয়ে। তিনি সীতাকুণ্ড ডিগ্রি কলেজের স্নাতক শিক্ষার্থী। ছয় মাস আগে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বালিয়াদী ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সরোয়ার উদ্দিন রাসেলের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। কিন্তু তারা তুলে নেননি তাঁকে। ফলে বাপের বাড়িতেই থাকতেন তিনি। মৃত্যুর সময় তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা ছিলেন। তাই মাঝে মধ্যে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শের জন্য যেতেন।
নিগারের মা হোসনেয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে কালের কণ্ঠকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে বের হয় নিগার। এরপর আর সে ফিরে আসেনি। রাত ৮টার পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পেয়ে তার স্বামী রাসেল বেশ কয়েকবার আমার কাছে ফোন করে। আমরাও মোবাইলটি বন্ধ পাই। সে মাঝে মধ্যে আত্মীয়ের বাড়িতেও বেড়াতে যেত। ভেবেছিলাম কারো বাড়িতে গেছে হয়তো। কিন্তু সকালে খবর পেলাম বাড়ির কাছেই মহাসড়কের পাশে তার লাশ পাওয়া গেছে।
সীতাকুণ্ড সার্কেলের এডিশনাল এসপি শম্পা রানী সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। পাশাপাশি কি করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা তদন্ত করছি। নিগার বিবাহিত। তাঁর দাম্পত্য জীবন কেমন ছিল এবং অন্য কারো সঙ্গে কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন কি-না বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। আশা করছি অতি শিগগির খুনি ধরা পড়বে।নিগারের স্বামী মো. সরোয়ার উদ্দিন রাসেল সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলা এলাকার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত। খবর পেয়ে শুক্রবার তিনিও ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বামী রাসেল বলেন, সীতাকুণ্ড এলাকার একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে নিগারের সম্পর্ক রয়েছে বলে ওই কর্মচারীর স্ত্রী আমাকে একাধিকবার ফোন করে অভিযোগ করেছিলেন। আমি বিষয়টি জানিয়ে নিগারকে এ সম্পর্ক না রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর সে ডাক্তার দেখাতে আসলেও তাকে ঘরে চলে যেতে বলি। রাত ৮টার পর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় আমি চিন্তায় পড়ে যাই এবং তার মাকে বারবার ফোন করে মেয়ের খবর নিতে বলি।
রাসেল আরো বলেন, এরপর নিগারের সঙ্গে আমার আর কোনো কথা হয়নি। ভোররাতে নামাজ পড়তে উঠে মোবাইলে তাঁর পাঠানো একটি এসএমএস দেখতে পাই। তাতে লেখা ‘সরি সোনা আমি আর তোমার থাকতে পারলাম না! এটি দেখে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। আর সকালেই শুনতে পাই তার লাশ পাওয়া গেছে।’সীতাকুণ্ড থানার ওসি (অপারেশন) জাব্বারুল বলেন, আমরা স্বামীর দেওয়া তথ্যগুলো সঠিক কি-না তাও যাচাই বাছাই করছি। কোনো সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. দেলওয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, তদন্ত শুরু করেই আমরা কিছু কিছু সূত্র পেয়েছি। সেসব যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। আশা করছি অল্প সময়েই খুনিকে গ্রেপ্তার করতে পারব।