রবিবার, ১১ই নভেম্বর, ২০১৮ ইং ২৭শে কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

সরকারকে মওদুদের চ্যালেঞ্জ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকারের অধীনে কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। যতদিন এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততদিন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না। তবে এবার আমরা তাদের বিনা চ্যালেঞ্জে আর ক্ষমতায় যেতে দেব না। আমরা গণজেয়ার তৈরি করবো, সেই গণজোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে।শুক্রবার বিকেলে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

তিনি বলেন, এই জনসমুদ্র একটা কথাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের মানুষ আর এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমরা গত ১০ বছরে ভোটের অধিকার হারিয়েছি। আইনের সামনে দাঁড়িয়ে সমান অধিকার হারিয়েছি। আমরা এগুলো ফেরত চেয়েছিলাম, আমরা সংলাপে বসেছিলাম। কিন্তু সফল হয়নি। কারণ, স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।মওদুদ বলেন, আমরা বলেছিলাম সংসদ ভেঙে দিতে হবে, আমরা বলেছিলাম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু তারা মানেননি। ৭ নভেম্বর আমরা সবশেষ সংলাপে বসেছিলাম। তারা একটি কথা দিয়েছিলেন যে, আমরা নির্বিঘ্নে সভা-সমিতি করতে পারব। কিন্তু সেই কথাও রাখেননি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই কথার বরখেলাপ করেছেন।

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, দুই হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছেন। আপনারা বলেছিলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু আমরা দেখলাম খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে নির্জন কারাগারে পাঠিয়ে দিলেন। আমরা দেখলাম আপনারা কথা দিয়ে কথা রাখেন না। আমরা জানতাম নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হলে সবাই স্বাধীনভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারবে। কিন্তু দেখলাম এই জনসভায় আপনারা বাধা দিলেন।জনসভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনারা যদি মনে করেন এক মাঘে শীত যায় তাহলে ভুল করবেন। এক মাঘ যদি খালেদা জিয়া জেলে থাকেন তাহলে শেখ হাসিনাকে দশ মাঘ থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে বলছি, নির্বাচন পিছিয়ে দিন। এমন ফাঁদ পেতেছেন যেন আমরা নির্বাচন করতে না পারি। কিন্তু আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব ফাঁদ ছিন্নভিন্ন করে ফেলবো। একতরফা নির্বাচন কোনোভাবে হতে দেবো না।মান্না বলেন, নির্বাচন ২৩ জানুয়ারি হলে অসুবিধা হতো না। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার যা শুরু করেছে তাতে নির্বাচন করা সম্ভব না। বিমানবন্দর থেকে এখানে আসতে আমার গাড়ি দু’বার আটকে দিয়েছে, আমি অপিরিচিত কেউ না। আমার গাড়ি কেন আটকাবে।

‘ওরা মনে করেছে রাস্তা বন্ধ করে, গাড়ি আটকে, গ্রেফতার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবে, সে আশায় গুড়ে বালি।’তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীকে এতো ভয় পান কেন। এতো কিছু হয়েছে তারাতো ক্ষমতা নেয়নি। আমরা সামরিক বাহিনী চাই না, কিন্তু শেখ হাসিনাকেও চাই না।আপনারা বলছেন নির্বাচনে আসুন, কিন্তু বিএনপির মতো একটি বড় দলের নেত্রীকে জেলে রেখে কীভাবে নির্বাচনে যাবে। বলেন মান্না।জনসভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু বলেন, দেশকে একটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে না চাইলে ৭ দফা মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিন।

মন্টু সরকারের উদ্দেশে বলেন, আমরা যে দাবিগুলো দিয়েছি, সেগুলো মেনে নিন। আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি। সেগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।এর আগে জনসভায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিচার চাই, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনা বাইরে থাকতে পারেন না। শেখ হাসিনাকেও জেলে যেতে হবে।’জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘হুদার অধীনে নির্বাচনে গেলে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে, শেখ হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। আর খালেদা জিয়া আমৃত্যু কারাগারে এবং তারেক জিয়া আজীবন নির্বাসনে থাকবেন। আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি, এ দেশের মানুষ আমাকে, আপনাকে ছাড়বে না। তাই বলছি, হুদাকে নামান, শেখ হাসিনাকে নামান। আমরা নির্বাচনে গেলে জয়ী হব যদি ভোট দিতে পারি।’

জনসভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের ভীত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে। সরকার যত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক না কেন, ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে হবে। জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত।জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কেউ কখনো বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান ক্ষমতাসীনরাও পারবে না।জনসভায় আরো বক্তব্য দিয়েছেন অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, শহীদুল্লাহ কায়সার, আবদুল গোফরান, শাহজাহান মিয়া, আবদুর রউফ ইউছুপ, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হারুনুর রশিদ, নাদিম মাহমুদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাহ আহমদ বাদল, মোস্তাক আহমেদ, এ টি এম গোলাম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, রফিকুল ইসলাম, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া প্রমুখ।

এর আগে আজ দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভা শুরু হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আজকের জনসভায় যোগ দিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।জনসভায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। এরই মধ্যে জনসভায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বিজেপির সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।

এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন নগরীর সাহেববাজারে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছেন। নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে নবগঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এটি চতুর্থ জনসভা। এর আগে ৬ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তার আগে ২৪ অক্টোবর সিলেটে ও ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে জনসভা করেছে ডা. কামাল হোসেনে নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল