পৃথিবী তিন হুমকির মুখে : ড. মুহাম্মদ ইউনূস
জার্মানি প্রতিনিধি : জার্মানির উল্ফসবার্গের অটোস্ট্যাডে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে সোশ্যাল বিজনেস সামিটের নবম কনফারেন্স। বিশ্বের প্রায় ২৮টি দেশের ২০০ বেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন এই সম্মেলনে। বিজনেস সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মানুষের সামনে তিনটি ভয়াবহ হুমকি অপেক্ষা করছে এমন সর্তকতা দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিবেশ দূষণ আর সম্পদের বৈষম্য এই তিন হুমকি প্রতিরোধ করতে না পারলে পৃথিবী থেকে মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
আজ জার্মানির উল্ফসবার্গের অটোস্ট্যাডে ৯ ম সোশ্যাল বিজনেস সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই তিন হুমকির কথা তুলে ধরেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সামাজিক ব্যাবসার এই প্রবক্তা বলেন, সারা বিশ্বের, ৯৯ শতাংশ সম্পদ মাত্র এক শতাংশ মানুষের হাতে, উল্টো দিকে ৯৯ শতাংশ মানুষের হাতে মাত্র এক শতাংশ সম্পদ। এভাবে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হতে থাকলে মানুষে মানুষে হিংসা ও বিদ্বেষ তৈরি হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আর একটি হুমকি উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, উন্নত বিশ্ব যেভাবে প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ছে তাতে মানুষ কর্মহীন ও বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যন্ত্রের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ালে একদিন এই যন্ত্র মানুষের উপর খবরদারি করবে। তখন তারা মানুষকে অচল মনে করে ধংস করে দিতে পারে।
পরিবেশ দূষণ কে আরেকটি বড় হুমকি উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যেভাবে উন্নত দেশগুলো কারবন উৎপন্ন করছে তাতে আর কয়েক দশকের মধ্যেই মাত্রা ২ ডিগ্রী তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা পৃথিবীর নেই৷ এ কারণে আমাদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে পরিবেশ রক্ষায়।
সবুজ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়ার উপর গুরুত্ব দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো শুধু তাদের উৎপাদনের দিকে নজর দিচ্ছে, বর্জ্য নিষ্কাশনে গুরুত্ব দিচ্ছে না। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি ভক্সওয়াগনের প্রধান নিবার্হী রোনাল্ড ক্রিসেন্ট, জার্মানির অর্থনৈতিক সহায়তা ও উন্নয়ন বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি ডক্টর মারিয়া ফ্ল্যাক্স, ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোর্শেদ, মহাকাশচারী রন গারান, গ্রামীণ ক্রিয়েটিভ ল্যাবের হ্যান্স রিজ প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি বাংলায় গান গাই গানটি গেয়ে শোনান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কন্যা মনিকা ইউনূস।
দারিদ্র্য, বেকারত্ব, ক্ষুদ্রঋণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সামাজিক ব্যবসা সম্মেলনে ঘুরে ফিরেই আসে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণের সাফল্য, নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করে স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প- এসবই শুনতে চায় বিশ্ব। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে সামাজিক ব্যবসার এই সম্মেলন চিন্তাও করা যায় না।