‘আপনাকে বিশ্বাস করা যায় না’
আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনিও তো আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। আব্বার সঙ্গেই থাকতেন। সব সময় আমাদের বাড়িতে থাকতেন। কত দেখতাম আপনাকে। আপনি হানিফ ভাইয়ের পিএস ছিলেন।’জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন জাতীয় পার্টিতে। জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে।’
কথা ওঠে গুলশানে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের আগের বাড়ি নিয়েও। মওদুদকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনি তো ঢাকায় অন্যের বাড়ি দখল করেছেন।’হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘না, আপনি (মওদুদ) জালিয়াতি করে বাড়িটি নিয়েছেন। মালিকের ছেলেরা এসে অভিযোগ করেছে।’ জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘দখল করিনি।’ এ সময় টিপ্পনী কেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাড়িটি নিয়ে আপনি ভাইয়ের নামে লিখে নিলেন কেন? হাসনার (মওদুদের স্ত্রী) নামে লিখে নিলেও তো কিছু বলা হতো না। বলতাম, কবি জসিমউদ্দীনের মেয়ের বাড়ি।’
হাসতে হাসতে মওদুদ বললেন, ‘ফেরত দিয়ে দেন, হাসনার নামে দিয়ে দেব।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, ‘আপনাকে বিশ্বাস করা যায় না।’একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নিজেদের মধ্যে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি বাড়ি যেতে পারি না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারি না। পুলিশ দিয়ে আমার বাড়ি ঘেরাও করে রাখা হয়। নিজ বাড়িতে গিয়ে বাধার মুখে ঘর থেকে বের হতে পারিনি। এটা কি গণতান্ত্রিক আচরণ?’
এ পর্যায়ে ওবায়দুল কাদের তাকে টার্গেট করে এমন কথা বলা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করলে দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। মওদুদ কয়েকবারই বলেন, ‘নেত্রী, আমি তো কারো নাম বলিনি। কাদের সাহেব নিজের কাঁধে নিলেন কেন?’এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন আমাদেরও একই অবস্থা হয়েছিল। এটা কি আপনারা ভুলে গেছেন?’ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘নো, আমরা কখনো এমনটা করিনি।’অবশ্য বিতণ্ডার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী দু’জনকেই থামিয়ে দিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ করার প্রয়োজন নেই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে গত ১ নভেম্বর সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপে সাত দফা দাবির বিষয়ে কোনো সমাধান না আসায় বুধবার ‘সীমিত’ পরিসরে দ্বিতীয় দফার এই সংলাপে বসেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে বেলা ১১টা থেকে তিন ঘণ্টার এই সংলাপে দুই পক্ষেই ১১ জন করে অংশ নেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংলাপে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে ছিলেন গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু; বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ; জেএসডির আসম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন; নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও এস এম আকরাম এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ।অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন জোটের প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আনিসুল হক, দীপু মনি ও শ ম রেজাউল করিম এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল