সোমবার, ২৯শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ১৪ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

‘মেয়েটিকে কোথাও নিয়ে ধর্ষণ করেনি, ধন্যবাদ পুলিশকে’

news-image

রাজধানীর রামপুরা টেলিভিশন সেন্টার এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশির নামে এক তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় এবার পুলিশের আচরণ নিয়ে মন্তব্য করেছেন নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিন।গত ২২ অক্টোবর দিবাগত রাত ২টার দিকে চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যদের বাদানুবাদ ও আপত্তিকর কথা কাটাকাটির ওই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

ওই তরুণীর সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের বাদানুবাদ ও আপত্তিকর কথার জেরে এরইমধ্যে দুই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে।আজ বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে তসলিমা নাসরিন এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন।
তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘ঢাকা শহরে রাত আড়াইটায় এক মেয়ে অটোয় করে কোথাও যাচ্ছিল, পুলিশ অটোটিকে থামিয়ে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছে, ওই কথাগুলো নিশ্চিতই চূড়ান্ত অপমানজনক। কথোপকথনের ভিডিওটি পুলিশই ফেসবুকে পোস্ট করেছে। ওটি দেখে মানুষ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে। পুলিশের আচরণ দেখে ভীষণ ক্ষুব্ধ সবাই।

আমার কাছে কিন্তু পুলিশের আচরণ মোটেও অস্বাভাবিক বলে মনে হয়নি। পুলিশ যে সব প্রশ্ন করেছে, মেয়েটিকে একই প্রশ্ন তার বাবা মা আত্মীয় স্বজন, পড়শি, কলিগ, বন্ধু-বান্ধবী, চেনা অচেনা সবাই করতো।
পুলিশ এই সমাজেরই মানুষ। সমাজে মেয়েদের মানুষ যে চোখে দেখে, পুলিশও সেই চোখে দেখে।
সমাজের পুরুষেরা মেয়েদের যৌন হেনস্থা করে, পুলিশও করে।সমাজের পুরুষেরা মেয়েদের ধর্ষণ করে, খুন করে, পুলিশও করে। আর সব লোক যে প্রশ্ন করতো, সে রাতে পুলিশ সেই প্রশ্নই করেছে, এত রাতে কেন বাড়ির বাইরে! কোত্থেকে ফিরছে মেয়ে, হোটেল থেকে নাকি! মেয়েটা নিশ্চয়ই খারাপ মেয়ে! আমি বরং ধন্যবাদ দিই পুলিশকে যে তারা ল্যাং মেরে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোথাও ধর্ষণ করে যে মেরে ফেলে রাখেনি। পারতো তো।

পুলিশ কেনো মেয়েদের ভক্ষক না হয়ে রক্ষক হবে! তাদের কি ট্রেনিং-এর সময় শেখানো হয় মেয়েদের অধিকারকে পুরুষের অধিকারের সমান বলে বিবেচনা করতে? তাদের কি শেখানো হয় মেয়েদের একই সম্মান দিতে, যে সম্মান তারা পুরুষকে দেয়? শেখানো হয় নিরপরাধ নারী পুরুষকে হেনস্থা করার নয়, নিরাপত্তা দেওয়ার ভার পুলিশের! শেখানো হয় না। শেখানো হয় না বলে সমাজের আর সব পুরুষ যেমন নারীকে যৌন বস্তু বলে মনে করে, পুলিশও মনে করে।
আমার কাছে বরং অস্বাভাবিক মনে হয়েছে মেয়েটির আচরণ। ঠাস ঠাস করে কী রকম কথার পিঠে কথা বলছিল! পুলিশকে ভয় না পেয়ে পুলিশকেই নির্ভীকের মতো প্রশ্ন করছিল। আমার যখন খুশি বাইরে বেড়বো, তাতে আপনাদের সমস্যা কী? এই প্রশ্ন রাত বিরেতে একা একটি মেয়ে অসভ্য পুলিশ দ্বারা বেষ্টিত হয়েছে। কটা মেয়ে করতে পারবে?

সমাজের নারীবিরোধী নিয়ম-নীতি হাজার বছর ধরে মেয়েদের বোবা, ভীতু, সন্ত্রস্ত, বিনীত, লজ্জাবনত করে রেখেছে। মেয়েটি যে শেখানো জিনিসগুলোকে তুচ্ছ করতে পেরে নিজের মর্যাদা নিজে বজায় রেখেছে, এটিই অস্বাভাবিক এবং এটিই ইউনিক এবং এটির কারণেই মেয়েটিকে স্যালুট।’

সূত্র: বিডি২৪লাইভ