এত ছোট মেয়ে, ক্যামেরার সামনে কী করবে!
১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক। আজ তাঁর ২৫ বছর পূর্তি হলো। কেমন ছিল এত দিনের পথচলা! তাই নিয়ে শাবনূরের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক-
অভিনয়জীবনের ২৫ বছর পূর্তি হলো আজ। কেমন লাগছে?
দেখতে দেখতে সময়টা চলে গেল। ভেবেছিলাম অনেক ঘটা করে দিনটি পালন করব। কেক কাটব, অনুষ্ঠান করব, দাওয়াত দেব চলচ্চিত্রের মানুষদের। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে এমন অসুস্থ যে কিছুই করতে পারলাম না। জ্বরে মাথা উঁচু করার শক্তিও পাচ্ছি না।
এই দিনে বিশেষ কারো কথা মনে পড়ছে?
আমাকে যিনি চলচ্চিত্রে সুযোগ দিয়েছিলেন, আমাদের পরিবারের অভিভাবক, সেই গুণী নির্মাতা এহতেশাম দাদুভাইয়ের কথা খুব মনে পড়ছে। আজ আমি যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি, সেটা ২৫ বছর আগেই দাদু দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমার মধ্যে শাবানা আপুর প্রতিচ্ছবি আছে। একদিন আমার নামও শাবানা আপু, ববিতা আপুদের নামের সঙ্গে উচ্চারিত হবে। দাদু বেঁচে থাকলে আজ হয়তো ফিল্মের সবচেয়ে বড় পার্টিটা দিতেন। গলা ফাটিয়ে বলতেন—এই সেই শাবনূর, আমার হাতে গড়া মেয়েটা আজ কোটি মানুষের মন জয় করেছে।
প্রথম দিনের শুটিংয়ের কথা কি মনে আছে?
দিনটি ভোলার নয়। একটা ছোট সংলাপ, এরপর গানের দৃশ্য। আগের দিন বসলাম নাচের মেয়েদের সঙ্গে। ওরা তো আমাকে দেখে অবাক। ভাবল—এত ছোট মেয়ে, ক্যামেরার সামনে কী করবে! তা ছাড়া নাচের মুদ্রা তো পারবে না। কত শট যে এনজি (নট গুড) হবে তার ঠিক নেই। কিন্তু পরের দিন শুটিংয়ে আমাকে মেকআপ করা অবস্থায় দেখে অবাক হলো। একজন তো বলেই ফেলল, মেকআপ নিলে তো পুরোই ববিতার মতো লাগে! ক্যামেরা ওপেন হলো। শট রেডি। আমার সংলাপ, নায়ককে বলতে হবে, ‘এই চোর, চোর বেটা!’ এক টেকেই শট ওকে। নাচের মেয়েরা অবাক হলো। এরপর যখন ওদের সঙ্গে নাচতে শুরু করলাম, ওরা হার মানতে বাধ্য হলো।
একাধারে সালমান শাহ, ওমর সানী, মান্না, রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস থেকে শুরু করে শাকিব খানের সঙ্গেও ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়েছেন। কার সঙ্গে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন?
সবাই আমার সহশিল্পী। আলাদা করে বলার কিছু নেই। তবে সালমান আর আমার জুটিটা ছিল অনবদ্য। পরিচালকরা যেমন আমাদের নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করতেন, তেমনি দর্শকরাও সাদরে গ্রহণ করত আমাদের। সানী ভাইও দারুণ। তাঁর সঙ্গে সেটে খুব দুষ্টুমি করতাম। তা ছাড়া রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস, শাকিব খান—সবাইকে সমান চোখে দেখেছি। প্রত্যেকেরই অভিনয় অসাধারণ।
মাহিয়া মাহি, নুসরাত ফারিয়া থেকে শুরু করে পূজা চেরি—এখনকার নায়িকারা সবাই আপনাকে আদর্শ মানেন। আপনার আদর্শ কে?
ছোটবেলা থেকে শাবানা আর ববিতা আপার ছবি খুব দেখতাম। ভাবতাম, যদি তাঁদের ধারেকাছেও অভিনয় করতে পারি তাহলে কিছু একটা করতে পারব। বিশেষ করে ববিতা আপাকে আমার হার্টথ্রব মনে হতো। আধুনিক চরিত্রগুলোতে তিনি আমার আদর্শ, আর সামাজিক ও ড্রামাটিক ছবিগুলোতে শাবানা আপা।
পরিচালনায় আসতে চেয়েছিলেন!
সব কিছু তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু ঝামেলা পিছু ছাড়ছে না। এই যে দুই সপ্তাহ ধরে বিছানায় পড়ে আছি। ড. মোশাররফ আমার চিকিৎসা করছেন। উচ্চ পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছেন। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। কিভাবে কাজ শুরু করব!
ভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?
আমি আজ শাবনূর হয়েছি ভক্তদের জন্যই। তারা আমাকে এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের ঋণ শোধ করা যাবে না। গত পাঁচটা বছর আমি চলচ্চিত্রে অনিয়মিত। এককথায় ভক্তদের ঠকাচ্ছি। তবে কথা দিচ্ছি, শিগগিরই কাজে ফিরে সব উসুল করে দেব। সূত্র: কালের কণ্ঠ অনলাইন