দরকার হলে নাটক বন্ধ, সিনেমাই করব : শবনম ফারিয়া
বিনোদন ডেস্ক : দুদিন আগে দেশের ২৮টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে হুমায়ূন আহমেদের দেবী উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র ‘দেবী’। অনম বিশ্বাস পরিচালিত এবং জয়া আহসান প্রযোজিত ও অভিনীত সরকারি অনুদানের এই ছবিটি নিয়ে দেশের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এদিকে ছবিটি আরও বেশি দর্শকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিনয়শিল্পীরা ছুটছেন প্রেক্ষাগৃহগুলোতে। ‘দেবী’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হলো শবনম ফারিয়ার। তিনি এর আগে শুধু নাটক আর বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন। প্রথম ছবি মুক্তির পর রোববার দুপুরে শুনিয়েছেন তাঁর অভিজ্ঞতা।
দেখছি ঢাকা ও ঢাকার বাইরের প্রেক্ষাগৃহে ছুটছেন। আজ কোথায় আছেন?
আজ এখনো কোথাও বের হইনি। সন্ধ্যার পর ঢাকার কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে যাব। দর্শক প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করব।
‘দেবী’ আপনার অভিনীত প্রথম সিনেমা। কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
যতটুকু আশা ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি পাচ্ছি। প্রথম কোনো কিছু সব সময়ই বিশেষ, তেমনি ভয়েরও থাকে। প্রথম কাজটা সহজ হলে পরের কাজগুলো আরও বেশি সহজ হয়ে যায়। সেই জায়গা থেকে মনে হচ্ছে, আমি পরে যদি কোনো সিনেমায় কাজ করতে চাই, ‘দেবী’ সেই সাহস দিচ্ছে, ভয় পাব না। অনুপ্রাণিত হচ্ছি এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়ছে।
বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে যাচ্ছেন। দর্শকের সঙ্গে কথা বলছেন। কেমন লাগছে?
আমি এ ক্ষেত্রে সৌভাগ্যবান, প্রথমেই ‘দেবী’র মতো একটা চলচ্চিত্রকে বেছে নিয়েছি। এমন অনেক অভিনয়শিল্পী আছেন, যাঁরা ২০টা কাজ করেছেন, কিন্তু এত আলোচনা বা প্রশংসা পাননি। আমি প্রেক্ষাগৃহে যাচ্ছি, যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, তা হয়তো তারা পায়নি। কৃতজ্ঞতা আমার পরিচালক অনম বিশ্বাস, প্রযোজক জয়া আহসানের কাছে—এই চরিত্রটার জন্য আমাকে তাঁরা বেছে নিয়েছেন। যত সমালোচনা অথবা রিভিউ পড়েছি, সব জায়গায় দেখলাম, এই চরিত্রে আমাকে ছাড়া তাঁরা কাউকেই ভাবতে পারেননি। একই কথা আমার প্রযোজক এবং পরিচালকও বলেছিলেন। অপেক্ষা করছিলাম সাধারণ দর্শকের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য। তাঁদের প্রতিক্রিয়া মিলে যাওয়া বিশাল পাওয়া।
আপনার মা ছবিটা দেখেছেন?
আমার মা দেখেছেন প্রথম শোতে। স্টার সিনেপ্লেক্সে তখন পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য ছিলেন। তবে মা তো একটু পক্ষপাতিত্ব করবেন, এটাই স্বাভাবিক। যেটা দেখবেন, সেটা ভালো বলবেন। কিন্তু আমি বাবাকে ভীষণ মিস করেছি। আমার বাবা-মা ভালো বই পড়তে, ভালো সিনেমা দেখতে ভীষণ উৎসাহ দিতেন। যখন আমি ‘দেবী’ সিনেমায় কাজ করব সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তখনো বাবা বেশ ইতিবাচক ভূমিকা দেখিয়েছেন। আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছিলেন, ভালো ছবি হবে নিশ্চয়। বাবা নিজেও দেবী উপন্যাসটা পড়েছিলেন। বাবা ছবিটা দেখার পর কী প্রতিক্রিয়া দেখাতেন, তা ভেবেছি ( কান্না)। আজ বাবা নেই, ছবি দেখার সময় বাবাকে খুব মিস করেছি।
নাটকের শুটিংয়ে কবে ফিরছেন?
এই মাসে কোনো কাজ করছি না। নাটকের শুটিং থেকে পুরোপুরি ছুটি। তিন মাস ধরে কোনো কাজ করছি না। এই সময়টা ‘দেবী’ ছবির প্রচারণার জন্য রেখে দিয়েছি। এখন বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ ঘোরাঘুরি, বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকা, এখনো যাঁরা ছবিটি দেখতে আসছেন না, তাঁদের জানানো। এটাও তো কাজের একটা অংশ। দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এই কাজটি করেছি। সামনের মাস থেকে আবার হয়তো নাটকে অভিনয় শুরু করব।
‘দেবী’ আপনাকে সাহস দিচ্ছে, অনুপ্রাণিত করছে, উৎসাহ দিচ্ছে। এরপর তাহলে কোন ধরনের ছবিতে অভিনয় করতে চান?
‘দেবী’র পরবর্তী যে গল্প ‘নিশীথিনী’, সেটা হলে তো চোখ বন্ধ করে কাজ করব। আমি আসলে কমার্শিয়াল ফিল্ম, আর্ট ফিল্ম—এসবের পার্থক্য বুঝি না। আমার কাছে ফিল্ম হচ্ছে ফিল্মই। এটা ব্যবসার জন্যই বানানো হয়। কিন্তু আমি এটা বুঝি, একটা ভালো সিনেমা আরেকটা খারাপ সিনেমা।
ভালো সিনেমা আপনার দৃষ্টিতে কেমন?
ভালো সিনেমা হচ্ছে, তার সবকিছু ভালো হতে হবে। ‘দেবী’তে ভালো গল্প, ভালো পরিচালক, ভালো চিত্রগ্রাহক, সহশিল্পী ভালো। প্রত্যেক শিল্পীকে অনেক যাচাই–বাছাই করে নেওয়া হয়েছে। এই রকম সিনেমার প্রস্তাব আমার কাছে এলে রাজি হয়ে যাব। যদি বলা হয়, বছরে পাঁচটা সিনেমা করতে হবে, তাতেও সমস্যা নাই। দরকার হলে নাটক বন্ধ করে সিনেমাই করব। কোনো আপত্তি নেই। ভালো সিনেমা না হলে, ‘দেবী’তে যে প্রশংসা পাচ্ছি, তা নিয়েই খুশি থাকব। আর কোনো সিনেমা করব না।
সিনেমায় সহশিল্পী হিসেবে কাকে চান?
সহশিল্পীর ব্যাপারটা আমি বুঝি না। গল্পের জন্য যাঁকে প্রয়োজন, তাঁর সঙ্গে কাজ করব। আমার পছন্দের সহশিল্পী, এ রকম কিছু বুঝি না। আমি যে চরিত্র করব, তার বিপরীতের চরিত্রটি করার জন্য যে পারফেক্ট, তাঁর সঙ্গেই কাজ করব।
জয়া আহসান তাঁর অভিনয় দিয়ে দেশের বাইরেও আমাদের দেশকে উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর মতো সহশিল্পীর সঙ্গে কাজ করা কতটা রোমাঞ্চকর কিংবা ভয়ের ছিল?
এই ছবিতে কাজ করবার তিন-চারটা কারণের মধ্যে একটা ছিল জয়া আহসান। আমি সব সময় বলেছি, আমার প্রিয় অভিনয়শিল্পী সুবর্না মুস্তাফা ও জয়া আহসান। আমি যখন নাটকে অভিনয় শুরু করি, তখন জয়া আপা নাটক ছেড়ে সিনেমায় চলে এলেন। দেশের চেয়ে ভারতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে গেলেন। ভাবিনি, কখনো তাঁর সঙ্গে কাজ করা হবে। সিনেমায় কাজ করার আগে একটা বিষয়ে নার্ভাস ছিলাম এই ভেবে, আমি কতটা জয়া আহসানের সঙ্গে কাজ করতে পারব? তাঁর পাশে দাঁড়ালে ভেবেছি, হাত পা কাঁপবে? নুসরাত ইমরোজ তিশার কাজ আমার খুব পছন্দ। তাঁর সঙ্গে একটি নাটকে কাজ করতে গিয়ে একটা সংলাপ ৫-৬ বার দিয়েছিলাম। অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত ওকে হয়। নার্ভাস ছিলাম। জয়া আপার সঙ্গেও একই অবস্থা হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু জয়া আপা এত সাপোর্টিভ ছিলেন, এত বেশি সহযোগিতা করেছেন চরিত্রটিকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য, তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করতে পারব না। প্রতি জায়গায় পরামর্শ দিয়েছেন। কোনটা করলে ভালো, কোনটাতে মন্দ হবে, এসব বুঝিয়েছেন। তিনি আমার বড় বোনের মতো সহযোগিতা করেছেন।
জয়া আহসান ও শবনম ফারিয়া
এমনটা কেন মনে হলো?
আমি যখন নাটকে কাজ করতে এসেছি, তখন পরামর্শ দেওয়ার কেউ ছিল না। আমার পরিবারের কেউ তো অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমাকেই নিজের জায়গা বানাতে হয়েছে। কোথায় কী কথা বলা উচিত, কোন কাজ করা উচিত, বুঝতাম না। আমি ছোটবেলা থেকে একটু স্ট্রেট ফরোয়ার্ড ছিলাম বলে অনেক জায়গায় ঠুসঠাস বলে ফেলতাম। এখন যেমন জয়া আপু বলেন, মাথা গরম করা যাবে না। কে কী বলল, তাতে হুটহাট প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না। এই পরামর্শ দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। সিনেমা করতে এসে আমি বড় বোন হিসেবে জয়া আপাকে গাইড পেয়েছি। সবাই তো মন থেকে পরামর্শ দেয় না। বড় বোন, মা, অভিভাবক যা-ই বলি, তাঁর জন্য কম হবে।
‘দেবী’র পর সামনে কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে চাপ অনুভব করবেন?
আমিও তা-ই ভাবছিলাম। এটা আমার মা–ও বলেছেন। পরিবারের অন্য সদস্য এবং জয়া আপুও তাই বলছিলেন। এখন কাজের ব্যাপারে অনেক চুজি হতে হবে। সবাই যে প্রশংসা করছে, তার মধ্যে প্রত্যাশার চাপও আছে। এটা পূরণ করতে হয়। ধরে না রাখতে পারলে এই প্রশংসা আর থাকবে না। প্রশংসা ধরে রাখতে হলে, বেছে কাজ করতে হবে। চিন্তাভাবনা করে কাজ করতে হবে। সত্যি আমি এখন চাপ অনুভব করছি। আগে হয়তো আমাকে নিয়ে অনেকে সিরিয়াসলি কিছু ভাবেনি। গতানুগতিক নাটকেই আমাকে ডাকত। এখন অভিনয়ে যখন আরেকটু পরিবর্তন দেখবে স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশা বেড়ে যাবে।সূত্র: প্রথম আলো