বুধবার, ৩১শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ১৬ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

সুয়ারেজের হ্যাটট্রিকে রিয়ালকে গোলবণ্যায় বাসালাে বার্সেলোনা

স্পোর্টস ডেস্ক : ‘মেসি নেই’, ‘মেসি নেই’ বলে ম্যাচের আগে রব তোলা হয়েছিল। কিন্তু লুইস সুয়ারেজ বুঝিয়ে দিলেন, অতটা হাহাকার না তুললেও চলত। মেসির কথা ভুলে দল হয়ে খেলে রিয়াল মাদ্রিদকে উড়িয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। আর এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সুয়ারেজ। দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকে বার্সেলোনার সব দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন এই স্ট্রাইকার। রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পথে গোল করেছেন ফিলিপে কুতিনহো ও আর্তুরো ভিদাল।

মেসির অনুপস্থিতির পরও বার্সেলোনাই এগিয়ে থেকে ম্যাচ শুরু করেছিল। চ্যাম্পিয়নস লিগে আগের ম্যাচেই মেসিবিহীন বার্সেলোনা ইন্টার মিলানকে অনায়াসে হারিয়েছে। আর ওদিকে দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও জয় পেতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল রিয়ালকে। এর আগে এক মাসের বেশি সময় ধরে জয়হীন থাকার বিষয়টা তো আছেই। ম্যাচপূর্ব সব বিশ্লেষণকে সত্য প্রমাণ করে ৩ বছর পর ন্যু ক্যাম্পে এল ক্লাসিকো জিতল বার্সেলোনা। সেটাও ৫-১ গোলের বড় ব্যবধানে। থিবো কোর্তোয়া বাধা হয়ে না দাঁড়ালে গোল সংখ্যা আধ ডজন পার হতেই পারত।

ম্যাচের শুরু থেকেই বল দখলে বার্সেলোনারই আগ্রহ বেশি ছিল। তাই ম্যাচে প্রথম শট রিয়াল নিলেও ১১ মিনিটে বার্সার এগিয়ে যেতে বাধেনি। বাম প্রান্তে দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণে বল নিয়ে বক্সের এক প্রান্তে রিয়াল রক্ষণকে ডেকে এনেছেন জর্ডি আলবা। তাঁর কাট ব্যাক যখন ডি বক্সের মাঝখানে কুতিনহোকে খুঁজে পেল, ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের আশপাশে রিয়াল মাদ্রিদের কোনো খেলোয়াড় নেই (১-০)! এরপরও যে রিয়াল ম্যাচে ফিরেছে, সেটা বলার সুযোগ নেই। বল দখল আর সুযোগ তৈরিতে স্বাগতিক দলই এগিয়ে ছিল। ১৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারত। নাচোর ভুলে বল পেয়ে ব্রাজিলিয়ান আরতুরো দুর্দান্ত এক বাঁকানো শট নিয়েছিলেন। কিন্তু কোর্তোয়া ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা ঠেকিয়ে দেন অবিশ্বাস্যভাবে।

৩০ মিনিট ভারানের ভুল অবশ্য বার্সাকে সে দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে। প্রথমে রেফারি ফাউল না দিলেও পরে ভিডিও রেফারিংয়ের সুবিধা নিয়ে পেনাল্টি দেন। নিজের আদায় করা পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে নেন সুয়ারেজ (২-০)। প্রথমার্ধে ব্যবধান বাড়ানোর আরও বেশ কিছু সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি বার্সা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রিয়ালের দেখা মিলে। খুবই বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া ভারানের পরিবর্তে নামানো হয় লুকাস ভাসকেজকে। খেলায় ধার আর গতি দুই-ই বাড়ে রিয়ালের। বল দখল, কেড়ে নেওয়া আর প্রেসিংয়ে মনোযোগ দিয়ে মাত্র ৪ মিনিটের মধ্যে গোল আদায় করে নেয় তারা। ডান প্রান্তে লুকাস ভাসকেজ থেকে বল পায়ে কাট ব্যাক করেন ইসকো। সে বল বার্সা রক্ষণ আটকাতে ব্যর্থ হলে মার্সেলো ব্যবধান কমিয়ে আনেন (২-১)।

৫৬ মিনিটেই সমতা ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছিল রিয়াল। কিন্তু মদরিচের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এ নিয়ে হাপিত্যেশ করার আগেই অবশ্য বার্সেলোনাও একই দুর্ভাগ্যে পুড়েছে। ৬১ মিনিটে সুয়ারেজের শট কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিলেও পোস্টে লেগে ফিরে আসায় বেঁচে যায় রিয়াল। সে যাত্রা আর কী। কারণ ৭৫ মিনিটে ওই সুয়ারেজই দুর্দান্ত এক গোলে রিয়ালকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন। এ গোলে কোচ ভালভার্দের প্রশংসা করতেই হচ্ছে। গোলের কিছুক্ষণ আগেই সেমেদোকে মাঠে নামিয়ে সার্জি রবার্তোকে আক্রমণে তুলে এনেছেন। আর কুতিনহোকে তুলে নামিয়েছেন ডেমবেলেকে। সুয়ারেজের অবিশ্বাস্য হেডের আগে মূল কাজটা এ দুজনই করেছেন। ডেমবেলের এক ক্রসে রিয়াল রক্ষণের বাঁ দিক খালি হয়ে যায়। আর রবার্তোর মাপা ক্রস কাজে লাগিয়েছেন সুয়ারেজ (৩-১)।

হ্যাটট্রিকের জন্য সুয়ারেজ অবশ্য রামোসকে ধন্যবাদ দিতে পারেন। উড়ে আসা বল বুকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারান রিয়াল অধিনায়ক। আবারও রবার্তো পাস। কোর্তোয়াকে কাছে টেনে এনে আলতো চিপে ৮৩ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলেন সুয়ারেজ (৪-১)। ৪ মিনিট পরে স্কোর ৫-১ হয়ে গেল। ডেমবেলের ক্রস থেকে প্রথম ক্লাসিকো গোলের স্বাদ নিলেন বদলি নামা আর্তুরো ভিদাল। মিনিট দু-এক পরেই চতুর্থ গোলটা পেয়ে যেতে পারতেন সুয়ারেজ। কিন্তু কোর্তোয়া নিজের নামের পাশে আধ ডজন গোল নিতে রাজি হননি। ৯১ মিনিটে ম্যাচে গোল করার দ্বিতীয় সহজতম সুযোগটি বেনজেমা নষ্ট করায় রিয়ালের আর ব্যবধান কমানো হয়নি।

এ ম্যাচের ফলে লোপেতেগির ভবিষ্যতের মতোই আরও একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে। মেসির দায়িত্ব সুয়ারেজ ও কুতিনহো নিতে প্রস্তুত। কিন্তু ক্লাব ছেড়ে যাওয়া রোনালদোর শূন্যস্থান পূরণ করা কখনো সম্ভব নয় বেনজেমা ও বেলের পক্ষে। নিজেদের প্রমাণের সবচেয়ে বড় উপলক্ষে দুই ফরোয়ার্ড এতটা নিষ্প্রভ থাকলে লোপেতেগির পক্ষেই-বা কীভাবে সম্ভব চাকরি বাঁচানো?