‘এ বিষয়টি কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকিও দেন ওসি’
নিউজ ডেস্ক।। দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে বাদীপক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আশু চন্দ্র রায় হত্যা মামলার এজাহার পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে থানার ওসির বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
নিহতের পরিবার জানায়, মূল পরিকল্পনাকারী ইসুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু হায়দার লিটন। তার ফাঁসির দাবিতে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করার একদিন পর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু পড়ে দেখা যায় মামলার এজাহারে তার নাম নেই। এতে হতাশ হয়ে পড়ে নিহতের পরিবার।
নিহত আশুর ভাতিজা মিলন চন্দ্র রায় জানায়, ৪ অক্টোবর বিকালে আমার কাকা আশু চন্দ্র রায়ের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী চেয়ারম্যান আবু হায়দার লিটনের নামসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে চিরিরবন্দর থানায় একটি মামলা করতে যাই। এজাহারে চেয়ারম্যানের নাম থাকায় চিরিরবন্দর থানার ওসি হারেসুল ইসলাম বলেন এভাবে মামলা রেকর্ড করা যাবে না।
মিলন জানান, চিরিরবন্দর থানার ওসি আরও বলে আমার উপর চাপ থাকায় এজাহার পরিবর্তন করতে হবে । মামলার বাদি নিহতের ভাই বিশ্বনাথ চন্দ্র রায় এর পরিবর্তে নিহতের স্ত্রী নন্দ রানী রায়কে করতে হবে।
মিলন আরও বলেন, ওসি হারেসুল ইসলাম নিজে মাইক্রোবাস ভাড়া করে গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আমার কাকি নন্দ রানী রায়কে জোর করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে এজাহার পরিবর্তন করে প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে হত্যা মামলাটি রেকর্ড করিয়ে নেয়। এ বিষয়টি কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকিও দেন ওসি।
নিহতের ছেলে সবুজ চন্দ্র রায় জানায়, আমি বিন্যাকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠী শ্রেণির ছাত্র। আমি কি আর পড়াশুনা করতে পারবো? আমার বাবাই ছিল আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার পড়াশুনা হয়তো এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে। আমার বাবার খুনির ফাঁসি চাই।
নিহতের স্ত্রী নন্দ রানী রায় জানান, আমি এখন দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কিভাবে সংসার চালাবো। আমার সুখের সংসারে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে লিটন চেয়ারম্যান। আমার স্বামীকে হত্যা করার পর বিভিন্নভাবে আমাদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। আমার স্বামীর খুনি যারা তাদের অনেকের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কমনা করেন।
চিরিরবন্দর থানার ওসি হারেসুল ইসলাম জানা, চেয়ারম্যান আবু হায়হার লিটনের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল এটা সঠিক। তবে নিহতের স্ত্রী বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়।
মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু মায়োনিটি চেপ্টার দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি কমল চন্দ্র রায় বলেন, আমার সংগঠনের সকল সদস্য আর নিহতের পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে আশু চন্দ্র রায়ের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী চেয়ারম্যান আবু হায়দার লিটনসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে এজাহার লিপিবদ্ধ করে নিহতের বড় ভাই বিশ্বনাথ রায়সহ তার ভাতিজা মিলন চন্দ্র রায়কে মামলা রেকর্ড করার জন্য থানায় পাঠিয়েছিলাম। পরে জানতে পারলাম চিরিরবন্দর থানার ওসি সুকৌশলে আমাদের এজাহার পরিবর্তন করে নিহতের স্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে অন্য একটা এজাহার তৈরী করে মামলা রেকর্ড করে দেয় । সেখানে মূল হত্যাকারীর অনেকেই নেই। আমরা নিহতের পরিবারের সাথে আলোচনা করে আর একটা হত্যা মামলা আদালতে দায়ের করবো।
গত ৩ অক্টোবর বুধাবার সকালে ইসবপুর ইউনিয়নের বিন্যাকুড়ি বাজার এলাকার মাছুয়া পাড়ায় আশু চন্দ্র রায়ের দখলী সম্পত্তিতে ইসুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু হায়দার লিটন নির্দেশে ৬০/৭০ দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আশু চন্দ্র রায়কে পিটিয়ে হত্যা করে । উৎস: বিডি-জার্নাল।