মনোনয়ন পেতে মাঠে বিএনপির যেসব আইনজীবী
আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়নি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী সরকারদলীয় আইনজীবীদের মতো বিএনপিপন্থী আইনজীবীরাও মাঠে তৎপর রয়েছেন।
নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগের পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন নানা কর্মকাণ্ড। তাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের সিনিয়র আইনজীবীসহ তরুণরাও রয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের নানা পদে দায়িত্বপালনকারী সম্ভাব্য কয়েকজন প্রার্থী জাগো নিউজকে জানান, আসছে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে তরুণ নেতৃত্বকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এ কারণে তারা মাঠে রয়েছেন।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আগামী নির্বাচনে বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তিনি এ এলাকায় জনসংযোগও চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন ২০০৮ সালের নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি। এ আসনের বর্তমান এমপি টিপু সুলতান।
নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসন থেকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইছেন দলটির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত কাজ করছেন তিনি। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক এই সভাপতি দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী।
‘মনোনয়ন পেলে বিজয় সুনিশ্চিত’- জাগো নিউজকে জানান সানাউল্লাহ মিয়া। এ আসনের বর্তমান এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচি হন। এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি।
নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোসতাক আহমেদ রুহীর কাছে পরাজিত হন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী। এ এলাকার বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের ছবি বিশ্বাস।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জাগো নিউজকে বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম ও জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, নির্বাচনের পরিবেশ এবং দলের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে সবকিছু নির্ভর করছে।
জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। মাদারগঞ্জ থানা বিএনপির কার্যকরী কমিটির সদস্যের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার বাদল জাগো নিউজকে বলেন, তৃণমূল থেকে মতামত নেয়া হলে আমিই মনোনয়ন পাবো। এ আসনের বর্তমান এমপি বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান বিএনপির কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক। আগামী নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) থেকে তিনি নির্বাচন করতে চান। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এই তরুণ আইনজীবীর। এ আসনের বর্তমান এমপি আবদুল হাই।
ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন আহমেদ অসীম প্রার্থী হতে চান ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি-জিগাতলা) আসন থেকে। যদিও তিনি এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। ধানমন্ডি এলাকায় তার কম-বেশি তৎপরতাও রয়েছে।
তবে জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে এ আসন থেকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে সিনিয়র আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী কামরুল ইসলাম সজল। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। স্থানীয় বিএনপি এখানে তিন ধারায় বিভক্ত। অন্যান্য সম্ভাব্যপ্রার্থীর মতো বিএনপির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সজলও এখানে নির্বাচনী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে অতীতে ছিলাম। এখনও আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। ‘হামলা-মামলা ও নির্যাতন সহ্য করে এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি’ উল্লেখ করে তরুণ এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আমি।’
মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীরা হলেন-
সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার, সাবকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক। এছাড়া অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, জিয়াউর রহমান খান, নিতাই রায় চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, শাহ মোহাম্মদ খসরুজ্জামান, মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আহমেদ আজম খান, তৈমূর আলম খন্দকার প্রমুখ মনোনয়নপ্রত্যাশায় নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র: জাগো নিউজ