বুধবার, ২৪শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ৯ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

যে কারণে এরশাদ-রওশনের দ্বন্দ্ব

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও সিনিয়র কো চেয়ারম্যান বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের দ্বন্দ্বে দলটিতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন সংসদের বিরোধী দলের শীর্ষ দুই নেতা।

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং রওশন এরশাদ পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ঘটনা এরশাদ-রওশনের মধ্যে দ্বিমত আছে বলে অনেকে মনে করছেন। জাপার শীর্ষ নেতারা বলছেন, প্রতি নির্বাচনের মতো এবারও ক্ষমতার হিসাব করছে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব। কাদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত এরশাদ জোট বাঁধতে যাচ্ছেন তা এখনও কার্যত স্পষ্ট নয়। অর্থাৎ এ নিয়ে ধোঁয়াশা আছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। রাজনৈতিক কারণে এরশাদও বিষয়টি স্পষ্ট করতে নারাজ। তবে দলের নেতাদের কাছে এখন পর্যন্ত একটি বিষয় স্পষ্ট তা হলো আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকতে চান রওশন। তাই এরশাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছেন তারা।

দলটির নেতারা জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বৈঠকে জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু ও কাজী ফিরোজ রশিদ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বৈঠকের বিষয়টি জানতেন না বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার এক নেতা জানান, বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে না আনার কারণ জানতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপরদিকে এরশাদ নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনজনের নাম প্রস্তাব করেন।

বৈঠকে জাতীয় পার্টির এক নেতাকে অন্য দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে অভিযুক্ত করা হয় বলে দাবি ওই নেতার। জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি না জানাকে কেন্দ্র করে এবারের বিরোধ। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছে জানতে চান রওশন এরশাদ। তিনি (রওশন এরশাদ) বৈঠকের বিষয়টি না জানায় জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য ক্ষুব্ধ হন। পরবর্তীতে ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন।

দলটির নীতিনির্ধারণী নেতাদের ভাষ্য মতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, না করা নিয়ে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত। ওই নির্বাচনে এরশাদের কথায় রাতারাতি ২১৭ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে এরশাদের নির্দেশ অমান্যকারীদের বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হলেও নির্দেশ মেনে যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছিলেন তাদের বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

এরশাদও একাধিকবার বলেছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট হবে। কখনও আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলেন তিনি। আবার একটু পরেই বিপক্ষে অবস্থান নেন। আলোচনা আছে, বিএনপির সঙ্গে জোট করতে নব গঠিত যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন এরশাদ। যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসার লক্ষণ দেখেন তাহলে এরশাদের নেতৃত্বাধীন ৬০ দলের জোট নিয়ে আবারও বিএনপির দিকে ঝুঁকিতে পারেন তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের একাধিক নেতা। সেক্ষেত্রে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার ফের মহাজোট গঠন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হবে। সম্প্রতি এরশাদ একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে আমাদের পলিসি হবে এক রকম। না হলে হবে আরেক রকম। তবে শেষ পর্যন্ত এরশাদের রাজনীতির নিশানা কোন দিকে তাই এখন দেখার বিষয়।

অন্যদিকে গত নির্বাচনের মতো এবারও এরশাদকে নিয়ে মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করার বিষয়ে ভেবে দেখতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। কারণ, কার কাছে থাকবে জাপার ক্ষমতা। এরশাদ না রওশন। গতবার এরশাদের হাতে ক্ষমতা থাকায় হঠাৎ করে তিনি নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়ার বিষয়টি এখনও ভুলেননি কেউ। গতবার তাই নির্বাচনের ঠিক আগে মুহূর্তে নিরুপায় আ’লীগকে বেছে নিতে হয়েছিল রওশন এরশাদ ও তারপন্থী নেতাদের। এবারও তাই এরশাদকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন না ক্ষমসতাসীনরা। এরশাদ ও রওশনের মাঝে দূরত্বের কথা স্বীকার করে জাপার এক প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, দলের মাঝে বিদ্যমান গ্রুপিংয়ের কারণে সরকারের কাছে সেভাবে আস্থায় আসতে পারছে না বিরোধীদল জাতীয় পার্টি।

এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ওনাদের (এরশাদ-রওশন) মধ্যে কিছুটা মতানৈক্য আছে তবে তা আগামীতে অবশ্যই কমে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

দলীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, এরশাদ আমাদের নেত্রী রওশন এরশাদকে না নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর রওশন এরশাদকে ডেকে সাক্ষাত দেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রওশন এরশাদ একান্তে বৈঠক করেন। বৈঠকে আগামী নির্বাচনে জাপার আসন সংখ্যা, নির্বাচনকালীন মন্ত্রী এবং জাপার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির ওপর সরকারের আস্থাহীনতা ও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপার শীর্ষ দুই নেতার পৃথক বৈঠক প্রসঙ্গে জাপার কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, এটি অস্বাভাবিক নয় তবে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী বানানোর জন্য দুইজন আলাদা তালিকা দিলে সেটি অবশ্যই ভাববার বিষয়।

গত ১৮ এবং ১৯ সেপ্টেম্বর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় অনুষ্ঠিত জাপার ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচার কর্মশালায় রওশন এরশাদসহ দলের সিংহভাগ এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য উপস্থিত না থাকায় এরশাদ ও রওশনের মধ্যে দূরত্ব দলের নেতাকর্মীদের মাঝে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দলের একাধিক শীর্ষ নেতা এরশাদ ও রওশনের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে ভ‚মিকা রাখছেন বলে অভিযোগ করেছেন রওশনপন্থীরা। এমতাবস্থায় বিপাকে পরেছেন দলের সংসদ সদস্যরা। আগামীতে কার নেতৃত্বে আসন নির্ধারণ হবে তা কেউ নিশ্চিত নয়। তাই তারা দুই ক‚লই রক্ষা করে চলছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরের দিনই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তলব করে দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দলের চেয়ারম্যান হিসেবে এরশাদ এবং বিরোধীদলের নেতা হিসেবে রওশন এরশাদ পৃথকভাবে দেখা করতেই পারেন। এখানে দোষের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। এছাড়া রওশন এরশাদকে সাংগঠনিক বিষয়ে অবহিত করা হয় না এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি সঠিক নয়। আমি সবকিছুই বিরোধীদলের নেত্রীকে অবহিত করি।

এদিকে দলের এক সংসদ সদস্য জানান, ইতোমধ্যে রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে এক প্রতিমন্ত্রী তাদের বিরোধীদলের নেতার সঙ্গে থাকতে বলেছেন এবং খুব শীঘ্রই দলের এমপিদের সঙ্গে বসবেন বলে জানানো হয়েছে।

দলের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান এরশাদ ও রওশন দুজনে মিলে দলের হাল ধরুক। কারণ, আসন্ন নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রী করার জন্য তারা যে পৃথক তালিকা দিয়েছেন তা প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে জাপার প্রতি আস্থা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আগামীতে এ আস্থার সঙ্কট কাটিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ও বিরোধীদলের নেতা রওশনকে জাপার একই প্লাটফর্মে আনা যায় কিনা এমন চেষ্টা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপার এক শীর্ষ নেতা ও প্রতিমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি এরই মধ্যে এ বিষয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙা রওশন ও এরশাদের মাঝে বিদ্যমান দূরত্ব দলে গ্রুপিং বাড়াবে বলে স্বীকার করে বলেন, তিনি দলীয় এমপিদের এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ডেকেছেন। তবে, কবে কোথায় বসছেন তা তিনি জানাননি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙার এই উদ্যোগ কতটা সফলতা আনবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: বিডি জার্নাল

এ জাতীয় আরও খবর

এবার রব-কামালের সঙ্গে তসলিমার ফটোশপ করা ছবি!

বিএনপির মহাসচিবসহ ৭ নেতার জামিন স্থগিত হয়নি

যতই দিন যাবে, রক্তপাত বৃদ্ধি পাবে: অলি

ব্যারিস্টার মইনুলের ফোনালাপ ফাঁস (অডিওসহ)

ব্যারিস্টার মইনুল কারাগারে

ব্যারিস্টার মইনুলের জামিন নামঞ্জুর

মঈনুল গ্রেপ্তারে ঐক্যফ্রন্টে প্রভাব ফেলবে না: ড. কামাল

রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মইনুল গ্রেফতার : খন্দকার মাহবুব

খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসা শুরু হয়নি দেওয়া হচ্ছে থেরাপি