নারীর ক্ষমতায়নে ৩ পদক্ষেপ চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ডেস্ক রিপোর্ট : উন্নয়নের হাতিয়ার হিসাবে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তিন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের গতি ত্বরান্বিত করা নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় তিনি বলেন, বধ্যমূল ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহিংসতাসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নারীর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং জীবন ও জীবিকার সব ক্ষেত্রে নারীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকালের এই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও উপস্থিত ছিলেন।
নারীর প্রতি বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এই অর্ধেক জনগোষ্ঠির একটি বড় অংশ বেকার।
বিশ্বব্যাপী ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সের প্রায় ৫০ শতাংশ নারী কর্মজীবী। একই বয়সসীমার কর্মজীবী পুরুষ প্রায় ৭৫ শতাংশ।
এছাড়াও একই কাজের জন্য নারীদের পুরুষদের থেকে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ কম অর্থ দেওয়ার মতো যে বৈষম্যমূরক আচরণ, তার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, শ্রমবাজারে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস করতে পারলে তা বিশ্বের মোট প্রবৃদ্ধিতে ১২ থেকে ২৫ শতাংশ যোগ করবে।
বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নে নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি যে, নারীর ক্ষমতায়নের ফলে অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ে।
“লিঙ্গ সমতার প্রভাব শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবায় প্রতিফলিত হয়, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয় এবং প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়।”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাউকে পিছিয়ে রাখব না’- এই উপলব্ধি ছাড়া লিঙ্গ সমতা এবং নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাবে না।
এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য লিথুনিয়ার প্রেসিডেন্ট দালিয়া গ্রাইবোস্কাইতকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
তাকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, “নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে আপনার নেতৃত্ব আমাদের সরকারের জন্য অনুকরণীয়। আমাদের সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচি শুধু নারীর ক্ষমতায়নই নিশ্চিত করবে না, বরং সমাজে নারীর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন অর্থনৈতিক অগ্রগতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য; শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা এবং নীতিনির্ধারণের মতো জায়গায় লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস করা।”
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের বিনামূল্যে শিক্ষাদানের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই মুহুর্তে বাংলাদেশে কৃষি, সেবা ও শিল্প খাতে দু’কোটি নারী কাজ করছে। বিচার বিভাগ ও প্রশাসনে উচ্চ পদে নারীরা অধিষ্ঠিত। বর্তমান সংসদে ৭২ জন নারী সদস্য রয়েছে। স্পিকার, সংসদ নেতা, উপনেতা ও বিরোধীদলীয় নেতা নারী।
“জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে বাংলাদেশি নারী ইতিহাস সৃষ্টি করছে।”
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিঙ্গ সমতা দূর করার দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ার দ্বিতীয়। উৎস: বিডিনিউজ