শুক্রবার, ৫ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২০শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের ৫ ফাইনাল

স্পোর্টস ডেস্ক : সর্বশেষ এশিয়া কাপের ফাইনাল ছিল সেটা। এবার এশিয়া কাপটা হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। এই ফাইনালে বাংলাদেশ অবশ্য তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি। আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ ১৫ ওভারে ছোট হয়ে আসা ম্যাচে ১২০ রান তুলতে পেরেছিল। সাব্বির রহমান রুম্মন ২৯ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলেন। তবে আসল কাজটা করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি মাত্র ১৩ বলে ৩৩ রানের এক ইনিংস খেলেন।

১৫ ওভারের তুলনায় রানটা যথেষ্ট হলেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। যদিও বাংলাদেশ ৫ রানে তুলে নিয়েছিল রোহিত শর্মার উইকেট। কিন্তু শিখর ধাওয়ান ৬০ ও বিরাট কোহলি ৪১ রান করে ম্যাচ বের করে নিয়ে যান।

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা২০০৯, ঢাকা
প্রথমবারের মতো কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করতে বসেছিল বাংলাদেশ। একেবারে বাংলাদেশের মুঠো থেকে এই ম্যাচ কেড়ে বের করে নিয়ে যান মূলত মুত্তিয়া মুলারিধরন।

আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ এই ওয়ানডে ম্যাচে মাত্র ১৫২ রান করে অলআউট হয়েছিল। একমাত্র বলার মতো স্কোর করেছিলেন রকিবুল হাসান। তার অপরাজিত ৪৩ রান মান বাঁচিয়েছিল বাংলাদেশের। কিন্তু খেলার আসল মজাটা তখনো বাকি ছিল।

মূলত নাজমুল হোসেন এবং মাশরাফি ও সাকিব আল হাসানের মারাত্মক বোলিংয়ে ৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল তখনকার তারকাখচিত শ্রীলঙ্কা দল। উপল থারাঙ্গা, সনাথ জয়াসুরিয়া, মাহেলা জয়াবর্ধনে, চামারা কাপুগেদেরা, থিলান থুসারা ফিরে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত দুই অংক স্পর্শ করার আগেই।

এখান থেকে দলকে টেনে নিয়ে যান ৫৯ রান করা সাঙ্গাকারা ও ৮ নম্বরে নামা পারভেজ মাহরুফ। তারপরও খেলা বাংলাদেশের হাতে ছিল। ২৪ বলে দরকার ছিল ৩৫ রান। এখান থেকেই মুত্তিয়া মুরালিধরন রুবেলের এক ওভারে ২০ রান তুলে নিয়ে ম্যাচ বের করে নেন।

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ২০১৮, ঢাকা
চলতি বছরে খেলা তিনটি ফাইনালের প্রথমটা ছিল এটা। দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের এই ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ ২ ম্যাচ হাতে রেখে। প্রথম দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে বোনাস পয়েন্টসহ হারায় বাংলাদেশ।

প্রবল প্রতাপে চলে আসে ফাইনালে। কিন্তু ফাইনাল খেলার আগেই ‘মোমেন্টাম’ হারিয়ে ফেলে তারা। ফলে ফাইনালে আর সেভাবে লড়াই হয়নি। আগে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কা এই ফাইনালে ২২১ রান করেছিল। এই রান পাড়ি দেওয়া খুব কঠিন ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং যাচ্ছেতাই ভাবে ধসে পড়ে। ৭৬ রান করে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বাকিরা কেউ প্রতিরোধই গড়তে পারেননি। ফলে ১৪২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

এই ট্রফিটার দিকে বাংলাদেশ মাঠের বাইরের একটা কারণে তাকিয়েছিল। এই টুর্নামেন্টের কিছুদিন আগে বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে। এই টুর্নামেন্টেই তার সাথে দেখা হয়েছিল বাংলাদেশের। তখন তিনি শ্রীলঙ্কার কোচ। প্রথম ম্যাচে হাথুরুসিংহের শ্রীলঙ্কাকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। এরপর ফাইনালে আশা ছিল বাংলাদেশ তাদের হারিয়ে ট্রফিটা জিতবে। কিন্তু সেটা হয়নি।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান ২০১২, ঢাকা
সেটাও ছিল এশিয়া কাপের ফাইনাল। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সম্ভবত সবচেয়ে ট্রাজিক ম্যাচ ছিল সেটা। বাংলাদেশ নিশ্চিত জয় দেখতে পাচ্ছিল। কিন্তু মাত্র ২টি রানের ব্যবধানে এশিয়া কাপের ট্রফিটি খোয়াতে হয়েছিল।

আগে ব্যাট করা পাকিস্তান ৯ উইকেটে ২৩৬ রান তুলেছিল। ৮ নম্বরে নেমে এখনকার অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানের স্কোরটা বড় করেছিলেন। মাশরাফি, রাজ্জাক, সাকিব ২টি করে উইকেট নেন।

জবাব দিতে নেমে তামিমের ৬০ ও সাকিবের ৬৮ রানে দিব্যি পথে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎ ব্যাটিং ধস বাংলাদেশকে রান-বলের হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেয়।

শেষ ওভারে ৯ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ২ বলে ২ রান তুলে নেন রিয়াদ ও রাজ্জাক। তৃতীয় বল ছিল ডট। চতুর্থ বলে রিয়াদ ৩ রান নেন। বাকি ২ বলে দরকার ছিল ৪ রান। এই সময় ৩ রান নিতে গিয়ে রাজ্জাক আবার স্ট্রাইকে চলে যান। পঞ্চম ওই বলে রাজ্জাক বোল্ড হয়ে যান। ষষ্ঠ বলে শাহাদাত হোসেন রাজীব একটি মাত্র রান নিতে পেরেছিলেন।

বাংলাদেশ-ভারত ২০১৮, কলম্বো
দেশের বাইরে বাংলাদেশের প্রথম কোনো ফাইনাল। এই ফাইনালে ওঠার পথে নাটকীয়ভাবে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এসেছিল। নিদাহাস ট্রফি নামে টি-টোয়েন্টি এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ ১৬৬ রান করেছিল। এই রান নিয়েও বাংলাদেশের জয়ের ভালো সম্ভাবনা ছিল।

রোহিত শর্মা ৫৬ রান করে ভারতকে পথে রেখেছিলেন। কিন্তু বল ও রানের সমীকরণে বাংলাদেশ এগিয়েই ছিল একটা সময়। শেষ ২ ওভারে ভারতের ৩৪ রান দরকার ছিল। এখান থেকে ভারতীয় উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিক হয়ে উঠলেন যেন সুপার ম্যান। ২২ রান তুলে নিলেন রুবেল হোসেনের ১৯তম ওভার থেকে। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১২ রান।

সৌম্য সরকার প্রথম তিন বলে দিলেন ৩ রান। পরের ৩ বলে দরকার ৯ রান। এই অবস্থায় চতুর্থ বলে হলো বাউন্ডারি এবং পঞ্চম বলে সৌম্য উইকেট নিলেন। শেষ বলে ভারতের দরকার ৫ রান। তখনই সেই কার্তিক ছক্কা মেরে দিলেন।