প্রকৌশলীর সর্বস্ব কেড়ে নিল ফেসবুক বান্ধবী
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : নগরের অভিজাত এলাকার শিল্পপতি বাবার একমাত্র ছেলে প্রকৌশলী মাহবুব খলিল (ছদ্মনাম)। সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা যুবক তখনো বিয়ে করেননি। তাঁর সঙ্গে ফেসবুকে সখ্যতা গড়ে উঠে নার্গিস সোলতানার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। নিয়মিত চ্যাটিং চলে মেসেঞ্জারে। কিন্তু এই তরুণ প্রকৌশলী একদিন ‘অপহৃত’ হন। তাঁকে উদ্ধার করতে শিল্পপতি বাবা হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে যান নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে।
প্রকৌশলীর শিল্পপতি বাবার কান্না দেখে মন খারাপ হয়ে যায় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদেরও। তাঁর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ গ্রহণের পর অভিযান শুরুর নির্দেশনা দেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
অপহৃত প্রকৌশলীকে উদ্ধার অভিযান শুরুর আগেই তাঁর অবস্থান জানার চেষ্টা করে গোয়েন্দা পুলিশ। অপহরণকারীরা ধূর্ত। নিজেদের মোবাইল ফোন থেকে চাঁদা চেয়ে শিল্পপতি বাবাকে ফোন করেননি। প্রকৌশলীর মোবাইল ফোন থেকেই অপহরণকারীরা কথা বলেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই চাঁদার টাকা না দিলে তাঁকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁর কণ্ঠস্বর শোনানো হয় শিল্পপতি বাবাকে।
উদ্ধার অভিযানের শুরুতেই গোয়েন্দারা জানতে পারেন, অপহৃত প্রকৌশলীর মোবাইল ফোনের অবস্থান চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকা। এরপর প্রযুক্তিগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে গোয়েন্দাদের একটি দল পৌঁছে যায় অপহরণকারীদের নাগালে। অপহরণকারীরা টাকা নিতে এসেই ধরা পড়ে গোয়েন্দাদের ফাঁদে। পরে উদ্ধার হন প্রকৌশলী।
অপহৃত প্রকৌশলীকে উদ্ধারের পর গোয়েন্দারা নতুন কাহিনি শুনেন তাঁর মুখে।
তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, নার্গিস সোলতানা তাঁর ফেসবুক বান্ধবী। অতীতে তাঁদের কখনো দেখা হয়নি। এক পর্যায়ে তাঁরা দুজন দেখা করার সময় নির্ধারণ করেন। নার্গিসই দেখা করার প্রস্তাব দেন এবং বহদ্দারহাট যাওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করে। ঘটনার দিন যখন প্রকৌশলী খলিল নার্গিসের সঙ্গে দেখা করতে বহদ্দারহাট পৌঁছেন তখন নার্গিস স্বাগত জানায় তাঁকে। কিন্তু পরক্ষণে তিনজন ছেলে আসে একটি গাড়ি নিয়ে। তাদের সঙ্গে নার্গিসসহ যোগ দিয়ে প্রকৌশলীকে একটি গাড়িতে তোলে। এর পর একটি বাসায় নিয়ে যায়।
ওই বাসায় নেওয়ার পর প্রকৌশলীকে বেধড়ক পিটুনি দেয় যুবকরা। অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয়। তারপর প্রকৌশলীর শরীর থেকে জোরপূর্বক কাপড় খুলে নগ্ন করা হয়। তাঁর একাধিক নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়। ভিডিও ধারণের সময় নার্গিস বসেছিল প্রকৌশলীর পাশে।
মারধর করার পর ছবি-ভিডিও ধারণ শেষে টাকা দাবি করে নার্গিসসহ তিন যুবক। এই মধ্যে তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ এবং কার্ড কেড়ে নেয় ওরা। শেষে প্রকৌশলীর ফোন থেকেই চাঁদা চেয়ে শিল্পপতি বাবাকে ফোন করা হয়। আর এই ফোনের সূত্র ধরেই শিল্পপতি বাবা অপহৃত সন্তানকে উদ্ধার করতে গোয়েন্দা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
অভিযানে নার্গিস ও তাঁর এক ছেলে বন্ধু গ্রেপ্তার হয়। অন্য দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরে ওই ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় কারাগারে যান নার্গিস ও তাঁর বন্ধু। এই মামলার অভিযোগপত্রও দাখিল করে পুলিশ।
ঘটনার বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘প্রকৌশলীকে অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর যখন মুক্তিপণ দাবির কথা শুনি তখনই সন্দেহ হয়। কারণ মুক্তিপণ কম চাওয়া হয়েছিল। কম মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, এটি পেশাদার অপহরণকারী দলের ঘটনা নাও হতে পারে। এর ভেতর অন্য কাহিনি থাকার সম্ভাবনা আছে। পরে অভিযান শেষে অন্য কাহিনি বেরিয়ে আসে। ফেসবুক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই অপহরণের শিকার হন প্রকৌশলী।’
তিনি বলেন, ‘ভার্চুয়াল বন্ধু প্রকৃত বন্ধু নন, ভার্চুয়াল বন্ধুর আড়ালে প্রতারক লুকিয়ে থাকে। ওরা প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়। ঘটনার শিকার হয়ে অনেকে মান সম্মানের ভয়ে মুখ খোলেন না। আর এ সুযোগটা কাজে লাগায় ভার্চুয়াল বন্ধুর ছদ্মাবরণে লুকিয়ে থাকা প্রতারকচক্র। প্রতারক চক্র থেকে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। না হলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা বেশি।’ কালের কণ্ঠ