যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশি যুবকের যাবজ্জীবন
২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে আটক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ যুবক নাইমুর জাকারিয়া রহমানকে ৩০ বছরের জেল দিয়েছেন দেশটির আদালত।
শুক্রবার লন্ডনের ওল্ড বেইলি আদালত এ সাজা ঘোষণা করেন। গত ১৯ জুলাই একই আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন। জাকারিয়া আদালতে নিজেকে ‘বাংলাদেশি-ব্রিটিশ’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর ডাউনিং স্ট্রিট অফিসে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভেতরে ঢুকে টেরিজা মেকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা ২১ বছর বয়সী এই যুবক করেছিলেন বলে প্রমাণিত হওয়ায় তার এই শাস্তি।
২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর নাইমুল জাকারিয়া রহমানকে লন্ডন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে উত্থাপিত অভিযোগে বলা হয়, নাইমুর জাকারিয়া রহমান আত্মঘাতী বোমা ফাটিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের বাসভবনে প্রবেশের পরিকল্পনা নেন।
এরপর তিনি ছুরি মেরে বা গুলি করে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার ছক এঁকেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি মোহাম্মদ আকিব ইমরান (২১) নামের অপর এক তরুণকে সন্ত্রাসবাদে জড়াতে সাহায্য করেন।
ইমরান জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দিতে একাধিকবার লিবিয়ায় পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
মোহাম্মদ আকিব ইমরানকে সন্ত্রাসবাদে উদ্বুদ্ধ করার দায়ে নাইমুরকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই ৩০ বছরের সঙ্গেই এই ছয় বছরের সাজার হিসাব হবে।
সাজা ঘোষণাকালে বিচারক হ্যাডন কেইভ বলেন, ‘রহমানকে যদি গ্রেপ্তার করা না হতো তাহলে তিনি ঠিকই ওই হামলা চালাতেন।’
নাইমুর উত্তর লন্ডনে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। গোয়েন্দারা জাল বিস্তার করে গত বছরের ২৮ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করেন।
অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের অশালীন ছবি পাঠানোর সন্দেহে গত বছর অগাস্টে নাইমুরকে আটক করেছিল পুলিশ। তখন তার মোবাইল ফোনে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত পেয়ে তার পিছু নেন কর্মকর্তারা।
এরপর লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ফাইভের সন্ত্রাস দমন কর্মকর্তাদের একটি ছদ্মবেশী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠেন নাইমুর।
ব্রিটেনে হামলা চালানোর জন্য তিনি ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ বিচারের সময় আদালতে আইএস সদস্য পরিচয় দেওয়া এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছে টেলিগ্রাম অ্যাপে নাইমুরের পাঠানো বিভিন্ন মেসেজ পড়া হয়।
প্রকৃতপক্ষে ওই ব্যক্তি ছিল এফবিআইয়ের লোক। ওই গোয়েন্দা নাইমুরকে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৫-এর একজন সদস্যের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
এমআই৫-এর কর্মী নাইমুরকে বোঝাতে সক্ষম হন যে তাঁরা আইএসের লোক। তখন নাইমুল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যায় আত্মঘাতী হামলা চালানোর ইচ্ছার কথা জানান।
গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি লিখেছিলেন, “আপনি কি আমাকে স্লিপার সেল এএসএপিতে নিতে পারেন? আমি পার্লামেন্টে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে চাই। আমি টেরিজা মেকে মারার একটি চেষ্টা করতে চাই।”
হামলা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নাইমুর গত নভেম্বরে হোয়াইট হলের আশপাশ ঘুরে দেখেন এবং বিস্ফোরক নিতে যুতসই মনে করে একটি ব্যাগ তিনি ছদ্মবেশি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দেন।
২৮ নভেম্বর ওই পুলিশ কর্মকর্তা নকল বিস্ফোরক ভরে ওই ব্যাগ ও একটি জ্যাকেট নাইমুরকে দিয়ে বলেন, এখন তিনি এগিয়ে যেতে পারেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কেনসিংটনের ওই জায়গা থেকে হাঁটা শুরু করার পরপরই নাইমুরকে আটক করে।
তবে নাইমুর রাহমানের আইনজীবীর দাবী, সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেওয়া এক চাচার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নাইমুরের। তিনি তাকে এ ধরনের হামলায় উৎসাহ দিয়েছেন।
ওই চাচাই তাকে ব্রিটেনে হামলা চালানোর জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। সিরিয়ায় ড্রোন হামলায় চাচার মৃত্যুর পর এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোন নাইমুর।