বুধবার, ৫ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ২১শে ভাদ্র, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

বিএনপিকে বাধাও না, দাওয়াতও না: হাসিনা

বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে কোনো পদক্ষেপ তো নেবেনই না, তাদের সঙ্গে আর কখনও সংলাপে বসার সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  বিমসটেক সম্মেলন নিয়ে রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, “নির্বাচন হবে, এটা ঠেকানোর মতো শক্তি কারও নেই।”

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবির সঙ্গে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত তাদের দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির শর্তও যোগ করেছে। তারা সংলাপ ডাকতেও সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছে।

শনিবার ঢাকায় এক সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা।

শেখ হাসিনাকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি পাওয়া-না পাওয়া আদালতের বিষয় বলে এক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই।

“খালেদা জিয়াকে আমি গ্রেপ্তার করিনি; রাজনৈতিকভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সে গ্রেপ্তার হয়েছে এতিমের টাকা চুরি করে। তারা আন্দোলন করুক। ডাক দিচ্ছে, হুঙ্কার দিচ্ছে খুব ভাল কথা। আবার বলছে নির্বাচন করবে না। কে নির্বাচন করবে-না করবে, সেটা সেই দলের সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের কী করার আছে?

“তাদের দল যদি মনে করে (নির্বাচন) করবে না, করবে না। যদি মনে করে করবে, করবে। এটা বিএনপির সিদ্ধান্ত, তারা কী করবে, না করবে। এখানে তো আমাদের বাধাও দেওয়ার কিছু নেই বা দাওয়াত দেওয়ারও কিছু নেই।”

২০১৪ সালে খালেদা জিয়ার ছেলের মৃত্যুর পর সান্ত্বনা জানাতে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তার সঙ্গে আর কখনও কোনো আলোচনায় বসতে অনাগ্রহের কথা জানান শেখ হাসিনা।

“খালেদা জিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পর আমি গেলাম, আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে ঢুকতে দিল না। সেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর তো ওদের সঙ্গে আমি অন্তত বসব না। আর কোনো আলোচনা হবে না। প্রশ্নই ওঠে না। আপনারা যে যাই বলেন। ক্ষমতাই থাকি, না থাকি, আমার কিচ্ছু আসে যায় না।”

শেখ হাসিনা বলেন, “তখন তো গ্রেপ্তার করিনি। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারত। তখনই গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল। তখন আমি সহনশীলতা দেখিয়েছি।”

বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা বলেন, মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন তিনি। “আমার বাবাকে হত্যা করেছে। তাকে যারা খুন করতে পারে; সেদেশে কিনা হতে পারে। আমি তো মৃত্যুমুখে আছি সব সময়। তাদের একমাত্র টার্গেট তো আমি।”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া কারাগারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মামলাটি আমরা দিইনি। আমাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তাকে মুক্ত করতে হলে বিএনপির এত নামী-দামি আইনজীবী, ব্যরিস্টার, হোমড়া-চোমড়া সবাই, তারা কেন পারল না প্রমাণ করতে যে, খালেদা জিয়া নির্দোষ।

“তারা যেটা চাচ্ছে; খালেদা জিয়ার মুক্তি। তাদের তো কোর্টের মাধ্যমে আনতে হবে। আর যদি দ্রুত চায় তাহলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবে।”

১০ বছর ধরে দুর্নীতির মামলাটি চলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যদি বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করতাম, করতে চাইতাম, তাহলে কি ১০ বছর লাগত?” “তাহলে এখানে আমাদের দোষ দিয়ে লাভটা কী?” মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্র হলে জনগণই তা রুখে দেবে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “যদিও ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয়। এই ষড়যন্ত্রটা জনগণই মোকাবেলা করতে পারবে। ইলেকশন হবে। জনগণ সাথে থাকলে কেউ বাধা দিকে পারবে না।”

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে নিজের অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, “জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই।” শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতা ধরে রাখার কোনো ইচ্ছা তার না থাকলেও উন্নয়নের জন্য জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।

“আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। আমি যে দেশের উন্নতিটা করতে পারি, তার জন্য আমরা টানা দু’বার ক্ষমতায়। আজকের উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান। মানুষ তার সুফল ভোগ করছে। মানুষ যদি এই সুফলটা অব্যাহত থাকুক চায়, একটা শান্তিপূর্ণ পরিবশে যদি চায়, আর উন্নতি যদি চায়.. আমার মানুষের ওপর এতটুকু বিশ্বাস আছে, তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়ী করবে।”