সফল মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী কেন?
অনলাইন ডেস্ক: পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ রয়েছে। সুখী মানুষ আর অসুখী মানুষ। বহু মানুষই নানা কারণে নিজেকে অসুখী বলে মনে করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি যদি কর্মক্ষেত্রে সফলতা না পান, কোনো কারণে আশাভঙ্গ হয়, কোনো কাজের সঠিক সমাধানে পৌঁছাতে না পারেন কিংবা শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় থাকেন তাহলে এমনটা হতে পারে।
তবে বাস্তবতা হলো, সবকিছু থাকার পরেও বহু মানুষ নিজেকে অসুখী বলে মনে করেন। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে আইএনসি।
আপনার যদি কোনো বিষয়ে ঘাটতি থাকে তাহলে নিজেকে অসুখী মনে হতে পারে। কিন্তু বহু মার্কিনির মাঝে দেখা যাচ্ছে সবকিছু থাকার পরও তারা অসুখী। অন্যদিকে বহু মানুষ রয়েছে যাদের কোনো কিছুই নেই। তারপরেও তাদের মনে সুখের ছড়াছড়ি। কিন্তু এর কারণ কি?
একজন মানুষ আর্থিকভাবে নিরাপত্তা পাওয়া, পেশাগত জীবনে সফলতা পাওয়া কিংবা পারিবারিক জীবনে নির্ঝঞ্ঝাট হওয়ার পরও যে সুখী হবেন, এমনটা ভাবার কারণ নেই। কারণ সুখের বিষয়টি অনেকটা আপেক্ষিক। আর এতে বহু মানুষকেই দেখা যায় নিজেকে অসুখী হিসেবে ভেবে নিতে।
সম্প্রতি মানুষের মনের এ সুখের তারতম্যের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের বিজনেস প্রফেসর রাজ রঘুনাথায়ন। তিনি তার অনুসন্ধান একটি বইতে তুলে ধরেছেন, যার নাম ‘ইফ ইউ আর সো স্মার্ট, হোয়াই আরনট ইউ হ্যাপি?’ তিনি তার জীবন থেকে নেওয়া শিক্ষা তুলে ধরেছেন এ বইতে।
আপনার সাফল্যের মাপকাঠি কী?: অনেকেই নিজের মনের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারেন না। এক্ষেত্রে আপনি উদ্যোক্তা কিংবা পেশাজীবী যাই হন না কেন, জানা থাকা উচিত আমরা কোনো কোনো বিষয়ে খুবই ভালো। সত্যিকার সুখী হওয়ার জন্য আমাদের এ ভালো বিষয়টির প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া উচিত। আর উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের সব সময়েই নানা দক্ষতা ও অর্জন করতে দেখা যায়। তারা এসব বিষয়ে সাধারণত ভালো হন। তার পরেও তারা সন্তুষ্ট হন না এবং আরও ভালো করার জন্য অসন্তুষ্টিতে ভোগেন।
কিন্তু কেন এ অসন্তুষ্টি?: কারণ তারা নিজেদের যে পাল্লায় মাপেন তা ভুল। বহু মানুষই সামাজিক তুলনা করেন তাদের অর্জন বিষয়ে, যা সত্যিই একটি ভয়ঙ্কর বিষয়।
এ বিষয়ে রঘুনাথায়ন বলেন, আপনি সব সময়েই সাফল্যকে সবচেয়ে বড় কোনো ব্যক্তির সাফল্যের সঙ্গে তুলনা করেন। এতে অসন্তুষ্টি বেড়ে যায়। কিন্তু আপনার বেতন যদি অনেকখানি বেড়ে যায় তাহলেও আপনি তা এক মাস, দুই মাস বা ছয় মাস পর্যন্ত সন্তুষ্ট থাকেন। তারপর আপনার আরও বেশি বেতনের চাহিদা তৈরি হয়। আর এভাবেই সুখের মাত্রা কমে যায়।
এ কারণে সাফল্য মাপার মাপকাঠিটি নতুন করে তৈরি করা প্রয়োজন।
সাফল্য নয় কর্তৃত্ব মাপুন: সাফল্যের বাহ্যিক লক্ষণগুলোর পেছনে আপনি যতই দৌড়াবেন তা ততই আপনাকে বোকা বানাবে। তাই সাফল্যের গতানুগতিক ধ্যান-ধারণা বাদ দিয়ে তাকে কিছুটা ভিন্নভাবে মাপতে হবে। এক্ষেত্রে সাফল্য নয় কর্তৃত্ব মাপাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন নিজেকে অন্য মানুষদের সঙ্গে মাপা বাদ দিবেন তখনই আপনার এ অবস্থা পরিবর্তিত হবে। এতে আপনার মনের সুখের মাত্রা বাড়বে।
এ বিষয়ে রঘুনাথায়ন বলেন, আপনি যদি অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করেন তাহলে কোনো বিষয়ের দিকে নিজের দৃষ্টি নিবদ্ধ করার ক্ষমতা কমে যায়। এতে আপনার সাফল্য কমে যায়। নিজের সত্যিকার অর্জনের বদলে অর্থ কিংবা সম্পত্তি অর্জনের দিকে মনোযোগ তৈরি হয়।
এছাড়া অন্যকে অনুকরণের প্রবণতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন আরও দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাইবেন তখন বিষয়টি পাল্টে যাবে। তাই এ গবেষকের মতে নিজের কর্তৃত্ব বাড়িয়ে নেওয়াই হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর অর্থ কিংবা প্রতিপত্তি স্বাভাবিকভাবেই আসবে।