বৃহস্পতিবার, ৫ই জুলাই, ২০১৮ ইং ২১শে আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

৬ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আড়াই হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে ২ হাজার ৩৫৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৪৭১ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩১৭ নারী ও ৩২৬ শিশু। একই সময়ে ৩৬৮ নারী ও ১৬৮ শিশুসহ আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৭৫ জন। জাতীয় মহাসড়ক, আন্তঃজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে এসব প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে।

বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) নিয়মিত মাসিক জরিপ ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দাবি করা হয়- ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা বস্তুনিষ্ঠ নয়, অনেক বেশি দেখানো হয়েছে।
সংগঠনটি গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। ২২টি বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিক, ১০টি আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং আটটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

পরিসংখ্যানে বলা হয়, জানুয়ারিতে ৪০৩টি দুর্ঘটনায় ৫৪ নারী ও ৩০ শিশুসহ ৪২৫ জন নিহত এবং ৫৭ নারী ও ১৩ শিশুসহ ৯৩৩ জন আহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৩ দুর্ঘটনায় ৫৩ নারী ও ৪৮ শিশুসহ ৪১৩ জন নিহত এবং ৪৬ নারী ও ১৯ শিশুসহ ৯৯৫ জন আহত হয়েছেন। মার্চে ৩৭৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৮৫ জন; যার মধ্যে ৫৩ নারী ও ৭৯টি শিশু রয়েছে। এ মাসে ৬০ নারী ও ৪৩ শিশুসহ আহত হয়েছেন ৯৭১ জন। এপ্রিলে ৪০৮টি দুর্ঘটনায় ৫০ নারী ও ৫০ শিশুসহ ৩৮৯ জন নিহত এবং ৬৩ নারী ও ২৪ শিশুসহ ১ হাজার ০৩২ জন আহত হয়েছেন। মে মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৬৩টি। এতে ৪০ নারী ও ৫১ শিশুসহ নিহত হয়েছেন ৩৮১ এবং আহত হয়েছেন ৮৪৬ জন। জুনে ৪২৭টি দুর্ঘটনায় ৬৭ নারী ও ৬৮ শিশুসহ নিহত হয়েছেন ৪৭৮ জন। এই মাসে ৯৮ নারী ও ৩৯ শিশুসহ ১ হাজার ১৯৮ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ১৩ দিনেই ঈদ যাতায়াতে দুর্ঘটনা ঘটে ২১১টি। এসব দুর্ঘটনায় ৩৭ নারী ও ৩২ শিশুসহ ২৪৮ জন নিহত ও ৭১৭ জন আহত হয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র পরিসংখ্যানে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা অনেক বেশি দেখানো হয়েছে বলে দাবি করেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঈদের আগে দূরপাল্লার সড়কে সরকারের তদারকি ব্যবস্থা সন্তোষজনক ছিল। এর ফলে আশঙ্কার তুলনায় জনদুর্ভোগ কম ছিল এবং দুর্ঘটনাও কম ঘটেছে। ঈদের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর নজরদারি কিছুটা শিথিল হয়ে যায়। যে কারণে একই দিনে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি ও রংপুরের তারাগঞ্জে পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়েছে। তবে ঈদ যাতায়াতের ১৩ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ও ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হওয়ার যে তথ্য যাত্রী কল্যাণ সমিতি প্রকাশ করেছে তা বাস্তবতাবিবর্জিত বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, গত ৬ মাসে নিহতের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সাধারণ যাত্রী ৭৭৩ জন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে পথচারী ৭০১ ও মোটরসাইকেল আরোহী ৫৪৮ জন। নিহত পথচারীদের মধ্যে ২১৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে অসতর্কভাবে সড়ক পার হতে গিয়ে। এ ছাড়া এই ৬ মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক ৭৫৬টি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যাত্রীবাহী বাস ৬০৬টি এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মোটরসাইকেল ৫৯৬টি।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ঘটেছে বাস ও ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী যানবাহনের চালকদের অসতর্কতা ও খামখেয়ালিপনার কারণে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর যথাযথ নজরদারির অভাব রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক মিলিয়ে ক্ষুদ্র যানবাহনের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, মহাসড়কসহ দূরপাল্লার সড়কে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন, পথচারীদের অসতর্কতা এবং সব ধরনের চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email