চাইলেও সাম্পাওলিকে ছাঁটাই করতে পারবে না আর্জেন্টিনা!
স্পোর্টস ডেস্ক : আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থা ভেবেছিল, অনেক দিন পর ভালো একটা কোচ পেয়েছে। কিন্তু বিশ্বকাপে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন সাম্পাওলি। কোচের ওপর খেপে আছে সবাই। কিন্তু সাম্পাওলি নিজে থেকে যেতে আগ্রহী। তাঁর রক্ষাকবচ বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ
আর্জেন্টিনার অবস্থা এখন শাঁখের করাতের মতো। হোর্হে সাম্পাওলিকে কোচ হিসেবে রাখলেও বিপদ, বরখাস্ত করলে আরও বড় বিপদ। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) আশা, সাম্পাওলি নিজেই সরে দাঁড়াবেন তাঁর পদ থেকে। যদি সাম্পাওলি নিজে থেকে সরে না যান, এএফএর পক্ষে তাঁকে ছেঁটে ফেলা সম্ভব নয়।
আবার এএফএর একটি অংশ মনে করে, গত দুই বছরে তিনবার কোচ বদলানো আর্জেন্টিনার এবার একটু থিতু হওয়া দরকার। দীর্ঘমেয়াদি কোচ না থাকার কারণেই দলটিও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। সাম্পাওলি নিজে যথেষ্ট সময় পাননি। তাঁর মতো কোচকে সময় দিলে সাফল্য যে এনে দিতে পারেন, চিলি আর সেভিয়া তার প্রমাণ। সাম্পাওলি নিজেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখেই সেভিয়ার মতো ক্লাবের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে এসেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, সেভিয়াকে এর জন্য যে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল, সেটিও নিজের পকেট থেকেই সাম্পাওলি পরিশোধ করেছিলেন।
কিন্তু এসব আবেগ এখন অনেকের মধ্যে কাজ করছে না। আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র, ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ৩-০ গোলের হার, নাইজেরিয়ার সঙ্গে ২-১ গোলের জয়ে কোনোমতে শেষ ষোলো। নকআউট পর্বে ফ্রান্সের সঙ্গে ২-১ এ এগিয়ে গিয়েও ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে। দুইবারের বিশ্বকাপজয়ী দলটির এই ব্যর্থতার দায় কোচের। বিশ্বকাপে তাঁর রণকৌশল পরিষ্কার ছিল না কারও কাছেই। চার ম্যাচেই সাম্পাওলি ভিন্ন ভিন্ন একাদশ খেলিয়েছেন। আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে ১৪ ম্যাচে অভিন্ন একাদশ কখনোই মাঠে নামাননি সাম্পাওলি।
এএফএ প্রধান ক্লদিও তাপিয়ার ঘনিষ্ঠ, এএফএর সহসভাপতি দানিয়েল অ্যাঞ্জেলিকি বলেছেন, ‘সময় এসেছে। আর্জেন্টিনার সাম্পাওলি মোহ কেটে গেছে।’ সাম্পাওলির বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্ত অবস্থান অবশ্য ছিল খেলোয়াড়দের। মেসিরা তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ চলার সময়েই বিদ্রোহ করেছিলেন বলে খবর। শেষ পর্যন্ত নাইজেরিয়া ম্যাচের জয় পরিস্থিতি কিছুটা বদলালেও পুরো শান্ত হয়নি। খেলোয়াড়দের এই অসন্তোষ আর মিডিয়ার রোষানল ব্যবহার করতে চাইছে এএফএ। এ ছাড়া সহজ পথও তাদের হাতে নেই।
সাম্পাওলিকে বরখাস্ত করা সম্ভব নয় এএফএর। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সঙ্গে চুক্তি আছে তাঁর। এর আগে সাম্পাওলিকে বরখাস্ত করলে গুনতে হবে ২০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ। পরের বছর কোপা আমেরিকার পর যে অঙ্কটা কিছুটা কমবে। এএফএর এখনকার যে আর্থিক দুরবস্থা, তাতে ২০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার সাধ্য নেই। আর্জেন্টিনা ফুটবলে এখন এতটাই আর্থিক সংকট যে কিছুদিন আগে খবর এসেছিল, স্বয়ং মেসি নিজের পকেটের টাকা খরচ করে কর্মীদের বেতন পরিশোধ করেছেন। টাকার সংকট মেটাতেই আর্জেন্টিনা বিতর্ক হতে পারে জেনেও ইসরায়েলে প্রীতি ম্যাচ খেলতে রাজি হয়েছিল বলে গুঞ্জন ছিল।
সাম্পাওলি কোচ হওয়ার সময় আর্জেন্টিনা বাছাই পর্বে ধুঁকছিল। সে সময় এদগার্দো বাউজার জায়গায় কোচ হয়ে আসেন চিলিকে কোপা আমেরিকা জেতানোর পর স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়াতেও বেশ নাম কুড়ানো এই কোচ। এএফএ আর সাম্পাওলি দুই তরফে আগ্রহ ছিল। কিন্তু মৌসুমের মাঝপথে কোচকে ছাড়তে রাজি ছিল না চ্যাম্পিয়নস লিগে কোয়ালিফাই করতে মরিয়া সেভিয়া। পরে সাম্পাওলি ক্ষতিপূরণ দিয়ে চুক্তি বাতিল করেন ক্লাবটির সঙ্গে।
তখন এএফএকে শর্তও দিয়েছিলেন, তাঁকে কোচ করাতে হবে ২০২২ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। এই বিশ্বকাপে কী হবে তিনি জানেন না। তবে পরের বিশ্বকাপ ঘিরেই করবেন পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সাম্পাওলির পছন্দের কোচদের বয়সভিত্তিক দলগুলোর দায়িত্বেও দিয়ে রেখেছে আর্জেন্টিনা। এখন এএফএ যদি সাম্পাওলির ওপর পরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত ভরসা রাখতে না পারে, তাহলে দুটি পথ খোলা—এক, ক্ষতিপূরণের পুরো অঙ্ক দিয়ে বিদায় করে দেওয়া। দুই, সাম্পাওলির ওপর এমন চাপ তৈরি করা, যেন তিনি মানে মানে কেটে পড়েন।