বৃহস্পতিবার, ৫ই জুলাই, ২০১৮ ইং ২১শে আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

নেশা করে এসে যা ইচ্ছে তাই করতো!

ছোটবেলায় আমি আমার গ্রামের বাড়িতে ছিলাম একসময় আমার বাবা-মা আমার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে আমাকে বিয়ে দেয়। বিয়ের পরে আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসি। পরে নতুন বাজার নয়ানগরে আমার জামাই আমাকে নিয়ে একটি বাসা ভাড়া নেয়। কয়েক মাস থাকার পরে আলাউদ্দিন নামে এক লোকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ওই লোকটা পাশের বাসায় আসা-যাওয়া করত।

২০১৩ সালের দিকে আলাউদ্দিনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়। আমি জানতাম না সে নেশাগ্রস্থ। কিছুদিন না যেতেই সে নেশা করে এসে আমার সঙ্গে জোরপূর্বক যা ইচ্ছা তাই করতো।

একদিন আমি আলাউদ্দিনের মোবাইল ধরতে গিয়ে দেখি…শরীরে কাপড় ছাড়া আমার একটা ছবি। পরে ওই ছবিটা নিয়ে সে আমাকে বেশ কয়েকবার ব্ল্যাকমেইল করে। পরে ছবিসহ ওই মেমোরিটা আমি নিজের বাসায় রেখে দেই। কেমন করে যেন সেটা আমার স্বামীর হাতে পড়ে যায়। পরে আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়ে দেয়। এরপড় আমি আমার আব্বার কাছে চলে যাই।

পরে আবার আলাউদ্দিনের পূর্বপরিচিত আকলিমা বেগম নামে একজন আমাকে ফোন দিয়ে আবারো ডেকে নেয়। ডাকার পরে আমি তখন আকলিমার কাছে যাই।

আকলিমার কাছে এসে আমি আর আমার বাবার কাছে ফেরত যেতে পারিনি। অন্যদিকে স্বামীও তালাক দিছে। পরে আলাউদ্দিন আকলিমাকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে কাজী অফিসে নিয়ে যায়। তারপর ২০১৪ সালের মার্চ মাসের নয় তারিখে আলাউদ্দিনের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর প্রায় এক মাস আমি আকলিমার বাড়িতেই ছিলাম। তারপরে আকলিমা সাইদনগরে হুমায়ন কবিরের একটা বাসা আমাদের ভাড়া করে দেয় কিন্তু আমরা খাবার খাইতাম আকলিমার বাড়িতে। তবে প্রায় সময় রাতে অন্যকোথাও থাকতো আলাউদ্দিন। এসব বিষয়ে ঝগড়াও হতো আমাদের। তথন সে আমাকে প্রচন্ড মারধর করতো।

তবে আকলিমার বাসায় শুধু আমি না আরও বিভিন্ন মেয়ে নিয়ে আসতো আলাউদ্দিন। আবার ওর অফিসের বন্ধুরাও আসতো। আর রুম ভাড়া হিসাবে আকালিমাকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দেয়া হত।

তখন আমি আমার জামাইকে বলি আপনি এইসব কাজ করবেন না আর আকলিমার সঙ্গেও কোন যোগাযোগ রাখবেন না। কিন্তু এসব কথা আবার আলাউদ্দিন আকলিমাকে বলে দেয়। আকলিমা আবার এসব কথা আলাউদ্দিনের বড় বউকে বলে দেয়। এমনকি আমাদের বিয়ের কথাও। পরে আলাউদ্দিনের বড় বউ ও সালা ওকে চাপ দেয় আমাকে বিদায় করে দেয়ার জন্য। পরে আমার দ্বিতীয়ও স্বামী আমাকে তালাক দেয়ার হুমকি দেয়।

কিন্তু এটা ছিলো ওদের একটা সাজানো গোছানো প্লান। কারণ তখন আমি অন্তস্বত্বা। অনেক সময় আকলিমা আমার বাচ্চা ফেলে দেয়ার জন্য নানারকম কাজকর্ম করতো। তবুও আমি আমার বাচ্চা নষ্ট করিনি। এভাবে চলতে চলতে একটা সময় আলাউদ্দিন আর আমার ভরণ পোষণ দেয় না। কিছু বলতে গেলেই আলাউদ্দিন নিজেই বলে আমি তোরে ২ লাখ টাকা দিমু তালাকও দিমু।

উপায় না পেয়ে মহল্লায় মানুষের কাছে বিচারে বসে পরি। আমাকে তালাক না করার কথা বলি। কিন্তু সে আমাকে তালাক দিবেই। আমি তখন ওর সালা সবুজের কাছে গিয়ে সব কিছু খুলে বলি। এ খবর পেয়ে আলাউদ্দিন আমাকে অনেক মারধর করে। ঢাকা মেডিকেলে নিয়া অ্যাবারেশন করে। সুস্থ হওয়ার পরে আমাকে খারাপ কাজ করতে বলে। না হলে চলে যেতে বলে।

পরে আমি মিরপুর সাড়ে ১১ তে আমার খালায় বাসায় চলে যাই। সেখানে থাকার সময় আমি একটা যৌতুক মামলা করি। এটা আবার আলাউদ্দিন জানতে পারে। পরে ওর এক পরিচিত মেয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তখন ওই মেয়ে আমার খোঁজ খবর নিতে থাকে।

একদিন আমি ওকে বলি একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে। সে আসতেও বলে। আমি গিয়ে দেখি আমার স্বামী আলাউদ্দিন সেখানে। আবার আমাকে সেখান থেকে আকলিমার বাসায় নিয়া যায় সে। আকলিমার বাসায় ঢুকতেই দেখি ওর বড় বউয়ের ভাই সবুজ। ওনাকে দেখে ভেবেছিরাম বিষয়টার সমাধান হবে। কিন্তু তারা দুজনে মিলে আমার হাত পা বেঁধে চলে যায়।

এরপর গভীর রাতে সবুজ আমাকে ধর্ষণ করে। আবার সকাল বেলা আকলিমার জামাই ফারুক এসে ধর্ষণ করে। পরে দুপুর ১১ টায় আরেকটা লোক এসে একই কাজ করে। এরপর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে অনেক কষ্টে সেখান থেকে পালিয়ে এসে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হই। নয়দিন সেখানে থাকার পর আবার খালার বাসায় চলে যাই।

পরে আমার করা মামলায় ওরা গ্রেফতার হয়। কিন্তু আমাদের দেশের আইন! জামিনে তার বেরিয়ে আসে। এখন আমাকে বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি দেখাচ্ছে। আমি আমার বিচার চাই..বার বার এতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও কোন বিচার পাইনি। যারা সাক্ষী তাদেরও ভয় ভীতি দেখায়। নতুন মামলার কোন আসামিও গ্রেফতার হয়নি। আমি এখন কই যাবো।

Print Friendly, PDF & Email