ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে : সিপিডি
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন কার্যকর না হওয়ায় চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের ঘাটতি হতে পারে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
এই ঘাটতি পূরণে সংস্থাটি প্রত্যক্ষ কর,এনবিআর বহিভর্‚ত কর রাজস্ব আয় এবং নন-এনবিআর রাজস্ব আহরণের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
সোমবার রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে বাজেট অনুমোদন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির তরফ থেকে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও ড. মোস্তাফিজুর রহমান,নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন,গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম,রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ড. দেবপ্রিয় বলেন, আমদানি পর্যায়ে ১ শতাংশ শুল্ক হ্রাস করার প্রভাব রাজস্ব আয়ে পড়বে না। অন্যদিকে সম্পূরক শুল্ক অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে প্রয়োগের ফলে আয় বাড়তে পারতে পারে। তবে যেসব সেবা খাতে খন্ডিত ভিত্তিমূল্যে হিসাব করা হতো,সেখানে পরিবর্তন আসবে।
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতির ৩টি প্রাক্কলন দিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন,রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৪৩ হাজার থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে থাকতে পারে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ হয়েছে,এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরগুলোতে যে হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে (১৫ শতাংশ) সে হিসেবে প্রবৃদ্ধি হলে ঘাটতি থাকবে ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আর জিডিপির নামিক প্রবৃদ্ধির হার হিসেব করলে ঘাটতি হতে পারে ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
দেবপ্রিয়র মতে তিন কারণে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা যায়নি। প্রথমত আইন বাস্তবায়নে এনবিআরের কারিগরি প্রস্তুতির অভাব ছিল। এ কারণে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পর কার ওপরে কতটুকু করভার পড়ছে তার সঠিক হিসাব করা হয়নি। দ্বিতীয়ত যে সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আইন বাস্তবায়নে যুক্ত থাকে তাদের মধ্যে ঐক্যমতের সৃষ্টি করা হয়নি। তৃতীয়ত ভ্যাট আইন ভোক্তার আয়-ব্যয় ওপর প্রভাব কী ফেলবে তার সামাজিক তাৎপর্য অনুধাবন করা হয়নি।
তিনটি অভিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাজেটোত্তর কর্মপরিকল্পনা তৈরির পরামর্শ দিয়ে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় বলেন,সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিকাশের স্বার্থে তিনটি লক্ষ্য সামনে রাখা উচিত। প্রথমত চলমান সামষ্টিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা, কারণ অতি ব্যয় করে সে অনুযায়ী আয় করতে না পারলে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। দ্বিতীয়ত ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়ে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
এর পাশাপাশি বাজেটে সামগ্রিক আয়-ব্যয়ের ব্যবস্থাপনা উন্নত করার জন্য ৬টি সুপারিশ পেশ করে সিপিডি। এগুলো হলো-রাজস্ব আয়ের বিদ্যমান ভাল গতি ধরে রাখা,অনুন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্ক হওয়া,উন্নয়ন ব্যয়ের প্রাধিকারগুলো পুর্নবিবেচনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে,দামী উৎস বা বেশি সুদহারে ঋণ নেওয়া বন্ধা রাখা অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখা,বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে যেসব নেতিবাচক চাপ রয়েছে,এগুলো মোকাবেলা করা এবং সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নেয়া।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে দেবপ্রিয় ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বাড়াতে অতি দ্রæত সংস্কার কমিশন গঠন করতে বলেন। পুজিবাজারের জন্য বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।