বৃহস্পতিবার, ১৩ই জুলাই, ২০১৭ ইং ২৯শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনাথ হাবিবার বিয়ের ব্যবস্থা করলেন পুলিশ সুপার

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ১১, ২০১৭

---

বিশেষ প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর শহরের তিতাস পাড়ার সরকারি শিশু পরিবারের কন্যা হাবিবা। শিশু পরিবারে কেটেছে  প্রায় ১০টি বছর হাবিবার। তার বয়স এখন ১৮ বছর। তাই শিশু  পরিবারের আর ঠাঁই হবে না হাবিবার। তাহলে কোথায় দাঁড়াবে সে? এমন প্রশ্নে উত্তর মিলেছে ব্যতিক্রম একটি আয়োজনের মধ্যে দিয়ে।

আগামি ১৪  জুলাই বিয়ে হতে যাচ্ছে হাবিবার। শুধু বিয়েই নয় এর আগে এই বিয়েকে ঘিয়ে  হুবহু স্বামীর চাকরিও হয়েছে পুলিশে। ধুমধাম ভাবে এ বিয়ের আয়োজন করেছেন জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম(বার)।  অনাথ হলেও হাবিবার বিয়ে অনুষ্ঠানে লোকের কমতি হবে না। এ বিয়েতে উপস্থিত থাকবেন আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক । এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া -৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবাইদুল মোক্তাদির চৌধুরী এমপি ও জেলা প্রশাসক মোঃ রেজওয়ানুর রহমান। এই বিয়ে অনুষ্ঠানের মূখ্য ভূমিকায় রয়েছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। ইতিমধ্যে বিয়ের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তিনি।

জানা যায়, বিগত ১০ বছর পূর্বে  “ অনাথ শিশু” হিসেবে হাবিবার ঠাঁই হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের তিতাস পাড়ে সরকারি শিশু পরিবারে । হাবিবার বতর্মান বয়স ১৮ বছর।  শিশু পরিবারের নীতিমালা অনুযায়ী তাকে সে জায়গাতে আর থাকা হবে না। তাই ডাকা হলো হাবিবার মামা আর মামীকে। মামা-মামানীর হাতে হাবিবাকে তুলে দেওয়ার সময় সূচনা হলো নতুন এক অধ্যায়। শিশু পরিবারের উপ- তত্বাবধায়ক রওশন আরার আচঁল ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন হাবিবা। তখন রওশনারাকে বিচলিত ও বিমর্ষ দেখাচ্ছিলো । পেছনে দিকে তাকিয়ে একবার দেখলেন হাবিবাকে। তারপর রওশনার  শিশু পরিবারের পরিচালনা কমিটিকে জানালেন হাবিবার পূর্নবাসনের জন্য। পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে  বলা হলো হাবিবা আপাতত শিশু পরিবারেই থাকবে। তাকে পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে ।

তার পর থেকেই হাবিবার পূর্নবাসনের নানা চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে মমতাময়ী রওশন আরার। কিন্তু কোনো চেষ্টাই যেন সফলতা আসেনি। শেষ পযর্ন্ত কথা বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে।  ভালো ছেলের সন্ধান পেলে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ারও অনুরোধ জানান রওশনারা। আলোচনার পর রওশনারা পুলিশ সুপারের ইতিবাচক  সাড়া পেয়ে ফিরেছেন শিশু পরিবারে।  এক পর্যায় পাত্রের সন্ধান মিলল। হাবিবার মামা  মামীর সঙ্গে  কথা বলে বিয়ের বিষয়টি পাকাপোক্ত করা হলো।  হাবিবার জন্য ঠিক করা পাত্রের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করলেন পুলিশ সুপার। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার নিজেই হাবিবার বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার দায়িত্ব নেন। হাবিবার  হুবহু স্বামী জেলার কসবা উপজলোর সোনরগাঁ গ্রামের মো. জাকারিয়া আলম। সম্প্রতি পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দিয়েছেন।

আয়োজকদের মধ্যে থেকে জানা গেছে, ইতিমধ্যে হাবিবার বিয়ের দাওয়াত কার্ড ছাপানো হয়েছে। আগামি ১৩ জুলাই সন্ধ্যায় সরকারি শিশু পরিবারে হাবিবার গায়ে হলুদ। পরেদিন ১৪ জুলাই দুপুরে হবে বিয়ে অনুষ্ঠান।  এ্ বিয়ে অনুষ্ঠানকে সফল করতে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।  জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পুলিশ সুপার ও ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েক দফ মিটিং হয়েছে। এ বিয়ে অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হবে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার তিন শতাধিক ব্যক্তিদেরকে। হাবিবার বিয়ে অনুষ্ঠানে কোন  ধরনের ঘাটতি রাখা হবে না বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

প্রশাসনের কর্মর্তাসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই বিয়েতে আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক হাবিবাকে দেবেন এক সেট গহনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী  নব-দম্পত্তি বসবাসের জন্য বরের বাড়িতে  নিমার্ণ করে দেবেন একটি ঘর।  জেলা প্রশাসক মো. রেজওয়ানুল রহমান উপহার দেবেন সোনার চেইন, বিয়ের শেরোয়ানী, পাগড়ী , নাগরা ও কালার টেলিভিশন। পুলিশ সুপারের সহধর্মনী দেবেন বিয়ের শাড়ী ও গহনা । জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে হাবিবার বিয়েতে উপহার দেবেন স্টিলের আলমারি এবং সরকারি শিশু পরিবারের তত্বাবধায়ক রওশন আরা হাবিবাকে দেবেন একটি সেলাই মেশিন। আর অতিথি আপ্যায়ন এবং যাবতীয় খরচ বহন করবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম(বার)।

এ ব্যাপারে বিয়ে অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামাুন সরকার সময় টিভিকে বলেন, হাবিবার বিয়েটি যেন সমাজে দৃষ্টান্ত হয় । সমাজের ধনী ব্যক্তিরা যেন হাবিবার মতো অনাথ মেয়েদের বিয়েতে এগিয়ে আসেন। এই বিয়ে তাদেরকে অনুপ্রাণীত করবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোস্তফা মাহমুদ সারোয়ার বলেন, হাবিবার জন্য শিশু পরিবারের উপ তত্বাবধায়ক  রওশন আরা যে ভূমিকা রেখেছেন তা অতুলনীয়। হাবিবার হুবহু স্বামীকে এনে গত ১০ বছরের প্রশ্নপত্রের মূল্যায়নের মাধ্যমে পুলিশের চাকরির পরীক্ষার জন্য তৈরী করেছেন। পুলিশ সুপার কথা অনুযায়ী সেই বরের চাকরির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। এখন জাকজমকপূর্ন এই বিয়ে আয়োজনের ব্যয়ও বহন করছেন তিনি। সব মিলিয়ে বিয়ের বিষয়টি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সমাজে।

 ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবার হোসাইন বলেন, আলোচিত এই বিয়ে অনুষ্ঠানের দিক নিদের্শনা দিচ্ছেন পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান স্যার ও শিশু পরিবারের জন্য নিবেদিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। আগামি ১৩ জুলাই শিশু পরিবারে হাবিবার গায়ে হলুদ অনুষ্টান হবে। এতে জেলা প্রশাসক. পুলিশ সুপার ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন। পরের দিন ১৪ জুলাই দুপুরে শিশু পরিবারের বর যাত্রী আগমনের পর দুপুর সাড়ে ১২ টায় বিয়ে পড়ানো হবে। জুম্মা নামাজের পর শুরু হবে খাওয়া দাওয়া। বিকেলে নব-দম্পত্তিসহ বর পক্ষের অতিথিরা পুলিশ সুপারের বাসভবন থেকে আপ্যায়ন শেষে হাবিবার শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়া হবেন।

এ জাতীয় আরও খবর