অনার্স পরীক্ষার্থী রিকশা চালকের ভাগ্য বদলে দিলেন এসআই আজাদ
---
নিউজ ডেস্ক : হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান পিপুল রায়। জন্মের পর থেকেই অভাব অনটনের মধ্যে তাকে বড় হতে হয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের আহার জোগাতে রিকশা চালানোকেই তাই তার পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয়েছে তাকে। কিন্তু পড়াশোনায় ছিল তার অগাধ নেশা।
তাই রিকশা চালানোর ফাঁকে সুযোগ পেলেই পিপুল রায় পড়াশোনা করেন নিজের আগ্রহ থেকেই। পড়াশোনার খরচ জোগাতে তাকে অতিরিক্ত সময় রিকশা চালাতে হয়।
হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পরিবারের খরচ জোগিয়ে রাতে রিকশার গ্যারেজে পড়াশোনা আজ তিনি অর্নাস (জিওলজি) পরিক্ষার্থী।
দিনভর কষ্ট করে রিকশা চালিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বর্তমানে তার বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। তার জীবনের এ করুন পরিনতি দেখে সাহায্যের হাত বাড়ালেন আবুল কালাম আজাদ নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই ) কর্মরত আছেন।
নিজের বেতনের টাকা থেকে পিপুল রায়কে পরীক্ষার খরচ দিয়ে তাকে একটি ফার্নিচার তৈরির প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসাবে চাকুরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
রিকশা চালক থেকে ভাল একটি চাকুরি পাওয়ায় নিজের ভাগ্যের চাকার পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে করছেন পিপলু রায়।
জীবনের প্রথমে ভাল চাকুরি পাওয়ায় এ ছাত্র আজ আনন্দিত। পিপুল রায় বলেন, তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যুলজিতে অর্নার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র।
এখন তার আর পরীক্ষা দিতে কোন সমস্যা হবে না। চাকুরির ফাঁকে পড়াশোনাও করতে পারবেন ভাল ভাবেই। সংসারের খরচ জোগাতেও কষ্ট করতে হবেনা।
এলাকাবাসী জানায়, পিপলু রায়ের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈর থানার চোপড়া গ্রামে হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে সোনারগাঁয়ে বসবাস করে আসছিল। এখানে রিকশা চালানোর পাশাপাশি পড়াশোনাও করেছেন। তার বাবার নাম চিহারু ব্রাহ্মণ।
উল্লেখ্য, এর আগেও সোনারগাঁ থানার দারোগা আবুল কালাম আজাদ নিজের জমানো তহবিলের টাকা উত্তোলন করে এবং নিজের স্ত্রীর স্বর্ণের গহণা বিক্রি করে সনমান্দি গ্রামের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করা স্বজনহারা অসহায় বৃদ্ধা রুপবাহারকে একটি ঘর বানিয়ে দিয়েছিলেন।
গত ২৭ শে জানুয়ারি আবুল কালাম আজাদ স্থানীয় একটি মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বাসায় যাওয়ার পথে রূপবাহারের মানবেতর জীবন যাপনের কাহিনী শুনে সেখানে ছুটে যান ও সেখানে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করা রূপবাহারের জন্য আর্থিক সহায়তা, খাবার সংগ্রহ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
পরবর্তীতে তিনি রূপবাহারের জন্য একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে দেন।
এছাড়াও এসআই আবুল কালাম আজাদ নবাবগঞ্জের বেগম নামে ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধাকে আড়াই মাস চিকিৎসা ও সেবাযত্ন করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন।
খাগড়াছরির নয়ন নামের এক শিশু আড়াই বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার পর তাকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে তার বাবা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন।
সোনারগাঁ থানার ওই এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ৪ জুলাই রাতে সোনারগাঁ উপজেলার মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা খন্দকার প্লাজার সামনে থেকে রিকশাযোগে তিনি তার বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
পরে রিকশা চালক পিপুলকে তার স্ত্রী-সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে চমকে দিয়ে বলেন- স্যার এখনও অনার্স কমপ্লিট করতে পারিনি। সামনে আমার ফাইনাল ইয়ারের পরিক্ষা।
দারিদ্রতার কারণে গ্রামের বাড়ি থেকে সোনারগাঁয়ে এসে রিকশা চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারের সদস্যদের আহারের ব্যবস্থা করছেন। আর রাতে সুযোগ পেলেই রিকশার গ্যারেজের ভেতরে জ্বালিয়ে রাখা বিদ্যুতের বাতির আলোতে লেখপাড়া করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আজাদ আরও জানান, ভাড়ায় চালিত রিকশাটি চুরি হয়ে যাওয়ায় পিপুল রায়কে রিকশা মালিককে ২০ হাজার টাকা কিস্তি করে দিতে হচ্ছে।
ইতিমধ্যে তার মাত্র ৬ হাজার টাকা পরিশোধ হয়েছে। অনার্স পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য প্রয়োজন সাড়ে ৬ হাজার টাকা।
পিপুলের এ কথা শুনে তার দু’চোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্রু। পরে তিনি এ প্রতিভাবান পরিশ্রমী ছাত্রের কল্যাণে কিছু একটা করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন।
অবশেষে স্থানীয় প্রকৌশলী আহম্মেদ আলী তানভীরের সঙ্গে রিক্সা চালক পিপুলের বিষয়ে আলোচনা করে তার প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসাবে চাকুরির ব্যবস্থা করে দেন।