ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর সড়ক এ বছরেই নির্মাণ হচ্ছে ৩য় মেঘনা সেতু – ওবায়দুল কাদের
---
ফয়সল আহমেদ খান , বাঞ্ছারামপুর : চলতি বছরেই মেঘনা নদীর ওপর পৃথক ৩য় মেঘনা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সোমবার সংসদে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর এ সেতু নির্মাণের কথা জানান। চীনের আর্থিক সহায়তায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণ করা হবে মেঘনা নদীর কড়িয়াকান্দি ও গোপালদীর বিশনন্দী পয়েন্টে। সেতুটি সংযুক্ত হবে ঢাকা-সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে আড়াইহাজার হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর সড়কে। এতে ঢাকার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, কুমিল্লাসহ পার্শ্ববর্তী অনেক জেলার দূরত্ব কমে যাবে। গত বছর পরিকল্পনা কমিশন সেতু নির্মাণে ইতিবাচক রিপোর্ট দেয়। এর মধ্যে সেতু কর্তৃপক্ষ সাব-সয়েল ইনভেস্টিগেশন, টপো সার্ভে ও সেতুর ডিজাইনসহ চূড়ান্ত কাজগুলো সম্পন্ন করছে।
‘কনস্ট্রাকশন অব ব্রিজ অন ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর ওভার দ্য রিভার মেঘনা’ নামে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩১.০৯ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিদেশি অর্থায়ন ১৮২.৪৩ মিলিয়ন ডলার। বাকিটা আসবে রাজস্ব খাত থেকে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, সেতুটি নির্মাণ হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগরের সঙ্গে রাজধানীর দূরত্ব কমে যাবে। এ ছাড়া এটি হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিকল্প রুট। এর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের পণ্য ও যাত্রী পরিবহন সহজ হবে। এ ছাড়া গাজীপুরের টঙ্গীর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যানচলাচলের সময় কমবে। দূরত্ব কমবে ঢাকা থেকে কুমিল্লার তিতাস এবং হোমনা উপজেলার।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় মেঘনা ও গোমতী এ দুটি বড় সেতু রয়েছে। যান চলাচলে লোড নেওয়া এ দুটি সেতুর পক্ষে অনেক সময় সম্ভব হয় না। লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। দুর্ভোগ পোহাতে হয় মানুষজনকে। স্থানীয়দের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেই সেতু কর্তৃপক্ষ মেঘনা নদীর ওপর দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করতে যাচ্ছে। সেতুটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রান্তে কড়িয়াকান্দি এবং ঢাকার প্রান্তে থাকছে আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদি-বিশনন্দী। সেতুটি নির্মিত হলে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হোমনা, তিতাস, মুরাদনগর এবং নবীনগরসহ আটটি উপজেলার যোগাযোগ সহজতর হবে। এ ছাড়া সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প বাংলাদেশ-ভারত (আখাউড়া-আগরতলা) যোগাযোগও সহজ হবে। কমে যাবে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব।
সংসদ সদস্য ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাঃ এ.বি তাজুল ইসলাম বলেন , মেঘনার ওপর সেতু নির্মিত হলে কয়েকটি জেলার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব হ্রাসের পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিকল্প পথ তৈরি হবে। এ ছাড়া মেঘনার তীরে ৩০০ বিঘা জায়গার ওপর গড়ে উঠছে দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ফলিত, পুষ্টি ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারটান) প্রধান কার্যালয়। ফলে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি বড় ক্ষেত্র তৈরি হবে। সর্বোপরি মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। শত বছরের স্বপ্নপূরণ হবে হোমনা ও বাঞ্ছারামপুরবাসীর।
প্রসঙ্গত সেতু নির্মাণের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ২০১১ সালে মেঘনা নদীর বিশনন্দী-কড়িকান্দিতে ফেরি চালু হওয়ায় আড়াইহাজার ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা এলাকার কয়েক লাখ মানুষ অল্প সময়ে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর-আড়াইহাজারের মধ্যে ফেরী গাড়ি চলাচল করছে।