g যেভাবে কূপ থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন হযরত ইউসুফ (আ.) | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ৭ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং ২২শে আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

যেভাবে কূপ থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন হযরত ইউসুফ (আ.)

AmaderBrahmanbaria.COM
অক্টোবর ৪, ২০১৭
news-image

---

ইসলাম ধর্ম ডেস্ক : পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, এক যাত্রীদল এলো, তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে প্রেরণ করল, সে তার বালতি বা পানির ডোল নামিয়ে দিল। সে বলে উঠল, ‘কী সুখবর! এ যে এক কিশোর!’ তারপর তারা তাকে পণ্যরূপে লুকিয়ে রাখল। তারা যা করছিল, সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ জ্ঞাত ছিলেন। (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১৯)

তাফসির : ইউসুফ (আ.)-কে কূপে ফেলে দেওয়ার পর তার ভাইয়েরা তার জামাকাপড়ে প্রাণীর রক্ত মেখে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসে। তারা বাবাকে বলল, হঠাৎ এক নেকড়ে বাঘ এসে ইউসুফকে খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কী ছিল? আল্লাহ তাআলা কিভাবে তাঁকে মুক্ত করেছেন, আলোচ্য আয়াতে সে বিষয়ে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রহ.) বলেন, ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তাঁকে কূপে নিক্ষেপ করার পর এর পাশেই সারা দিন অবস্থান করেছিল। ইউসুফ (আ.) কী করেন, তাঁর মাধ্যমে কী কী ঘটনা ঘটে—তা জানা ও দেখার কৌতূহল থেকেই তারা অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেয়। পাশ দিয়ে অতিক্রমকারী কাফেলার এক প্রতিনিধি পানি উঠানোর উদ্দেশ্যে কূপে বালতি নিক্ষেপ করে। এর মাধ্যমে উঠে এলেন শিশু ইউসুফ। পানির বালতিতে ইউসুফকে দেখে ওই ব্যক্তি আনন্দে চিৎকার শুরু করে।

বলতে আরম্ভ করে, ‘য়া বুশরা হা-যা-গুলামুন’ (কী সুখবর! এ যে এক কিশোর!)
সুদ্দি (রহ.)-এর মতে, বুশরা এক ব্যক্তির নাম, যাকে সম্বোধন করে সে চিৎকার করছিল। একমাত্র তিনিই ‘বুশরা’কে নাম হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। অন্য কোনো তাফসিরবিদ এমন ব্যাখ্যা করেননি।

আল্লামা ওহাবা জুহাইলি (রহ.) লিখেছেন : যাত্রীদল মাদিয়ান থেকে মিসর যাচ্ছিল। বর্ণিত আছে যে তারা ছিল ইসমাঈলীয় আরবের বংশোদ্ভূত। তিন দিন অবস্থান করার পর এই যাত্রীদলের মাধ্যমে ইউসুফ (আ.) অন্ধ কূপ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। (আৎ তাফসিরুল মুনির : ১২/২৩০)

কারা ইউসুফকে পণ্য মনে করে গোপন করে রেখেছিল—এ নিয়ে দুই রকমের ব্যাখ্যা রয়েছে। সুদ্দি ও ইবনে জারির (রহ.)-এর মতে, তারা কাফেলার লোক। কাফেলার কিছু লোক ইউসুফকে এই মনে করে গোপন করে, যেন বাকিরাও তাঁর বিক্রয়লব্ধ অর্থের অংশীদার হয়ে উঠতে না পারে। তাই তারা বাকিদের কাছে বলল, এই ছেলেটিকে কূপের পাশে অবস্থানকারী লোকদের কাছ থেকে কিনে আনা হয়েছে। তবে আউফি (রহ.) ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, এখানে ইউসুফের ভাইদের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ তারা কাফেলার লোকদের কাছে পরিচয় দেয়নি যে সে আমাদের ভাই। ইউসুফও নিজের পরিচয় ও ভাইদের আচরণ গোপন রেখেছিলেন। তা না হলে আশঙ্কা ছিল, ভাইয়েরা তাঁকে হত্যা করে ফেলবে। সুতরাং তিনি বিক্রি হয়ে যাওয়াটাই পছন্দ করলেন। ভাইদের কাছ থেকে কাফেলার লোকেরা সামান্য মূল্যেই তাঁকে কিনে নেয়। ভাইয়েরা তাঁকে বিনা মূল্যেই দিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিল। কেননা ইউসুফের প্রতি তাদের ন্যূনতম দরদ ও ভালোবাসা ছিল না। ইবনে কাসিরের ভাষ্য মতে, এ অভিমতটি অধিক গ্রহণযোগ্য।

আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও মুসলিম উম্মাহকে সান্ত্বনা দিয়েছেন যে তোমাদের বিপদাপদ আল্লাহর অজানা নয়। আল্লাহ চাইলে জালিমদের প্রতিহত করতে পারেন। শত্রুদের নিমিষেই বিনাশ করে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি মানুষকে সুযোগ দেন। তাঁর সব কাজই রহস্য ও তাত্পর্যপূর্ণ। বিপদাপদ দিয়ে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন। ভুলত্রুটি ক্ষমা করেন। আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। ইউসুফ (আ.) যেমন বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে মহাপুরস্কার ও সাফল্য অর্জন করেছিলেন, তা মুসলমানদের ক্ষেত্রেও বাস্তব হতে পারে। এর জন্য অবশ্যই ইউসুফ (আ.)-এর মতো তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা) ও ইয়াকুব (আ.)-এর মতো উত্তম ধৈর্য ধারণ করতে হবে। (ইবনে কাসির, তাফসিরে মুনির)