স্পোর্টস ডেস্ক : লক্ষ্যটা খুব কঠিন ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। কিন্তু পাকিস্তান দলে ইয়াসির শাহ, মোহাম্মদ আমির কিংবা ওয়াহাব রিয়াজের মতো বোলাররা আছেন বলেই শঙ্কাটা ছিল। গতকাল চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে পাকিস্তানি বোলাররা তুলে নিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫ উইকেট। অনিশ্চয়তার দোলাচলে ক্যারিবীয়দের নির্ভরতা দিলেন কার্লোস ব্রাফেট, প্রথম ইনিংসের মতোই। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছিলেন ব্রাফেট। দ্বিতীয় ইনিংসেও শেষ পর্যন্ত ব্যাট করেই দলকে জিতিয়ে নিয়ে ফিরলেন তিনি। ব্রাফেটের যোগ্য সঙ্গী হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দারুণ এই জয়ের অন্যতম নায়ক শেন ডাউরিচ।
৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ১৫৪ রানের লক্ষ্যমাত্রাকে অনেক বড়ই মনে হচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। কিন্তু ব্রাফেট ১০৯ বল খেলে ৬০ রানের অপরাজিত এক ইনিংস সাজালেন কঠিন পরিস্থিতিতে। শেষের দিকে শেন ডাউরিচের ব্যাট থেকে এল মহামূল্যবান ৫৬। এই দুইয়ের কল্যাণেই আজ পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৯ রান খুব সহজেই তুলে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এটি ২৬ বছর পর বিদেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিবীয়দের প্রথম জয়।
পাকিস্তানের জন্য টেস্ট সিরিজের শেষটা ভালো হলো না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯-০ ব্যবধানে জয়টা অধরাই রইল মিসবাহ-উল-হকের জন্য। শারজায় মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতারই খেসারত দিল পাকিস্তান। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ২৮১ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৩৩৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ২০৮ রানে গুটিয়ে গেলে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫৩। দ্বিতীয় ইনিংসে ইয়াসির শাহ ও ওয়াহাব রিয়াজ সম্ভাবনা জাগালেও ক্যারিবীয়দের জয় ঠেকাতে পারেননি। ১৫৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ব্রাফেট-ডাউরিচ ৮৭ রান তুলে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এই জয় অনেক দিক দিয়েই স্মরণীয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। এটি ২৬ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে প্রথম জয়ই কেবল নয়, ২০০৭ সালের পর আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের চেয়ে এগিয়ে থাকা কোনো দলের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম জয়। অধিনায়ক হিসেবে জেসন হোল্ডারের প্রথম টেস্ট জয়। নিজের প্রথম জয়ে বল হাতে দুর্দান্তই ছিলেন তিনি।
নিজের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক ব্রাফেটকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন হোল্ডার, ‘ব্রাফেট দুর্দান্ত খেলেছে গোটা টেস্টে। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও দায়িত্বশীল তাঁর ব্যাট। আমরা এই টেস্টে লড়াকু মানসিকতাটা দেখতে পেরেছি। টসে হেরে যাওয়ার পর শ্যানন গ্যাব্রিয়েল নতুন বলে দুর্দান্ত বল করেছে। গ্যাব্রিয়েলের বোলিংই এই ম্যাচটি আমাদের দিকে ঠেলে দেয়। দলের এই জয়ে কাজে লাগতে পেরে আনন্দিত। অনেক দিন পর এমন একটা ম্যাচ জিতলাম। গত এক বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের কঠিন সময় যাচ্ছে। আমরা একটি তরুণ দল এবং দলটি নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। এই সিরিজে আমরা অনেক কিছুই দারুণ করেছি। এখন প্রত্যেকের উচিত হবে অন্যজনকে সাহায্য করে যাওয়া।’ সূত্র: টেন ৩।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান ২৮১ ও ২০৮ (আজহার আলী ৯১, সরফরাজ ৪২, হোল্ডার ৫/৩০, বিশু ৩.৪৬)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৩৭ ও ১৫৪/৫ (ব্রাফেট ৬০*, ডাউরিচ ৫৬* ইয়াসির ৩/৪০, রিয়াজ ২/৪৬)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজের ফল: পাকিস্তান সিরিজ জয়ী ২-১ ব্যবধানে