নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র তৈরি হয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায়। সেই অস্ত্র তৈরিতে পাকিস্তানের অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেয়া হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ’র হাতে আটক ছয় জেএমবি জঙ্গির একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য পেয়েছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ।
এনআইএ সূত্রে জানা যায়, আটক জেএমবি জঙ্গিকে জেরা করে জানা গেছে পকিস্তানের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অস্ত্র নির্মার্তারা অত্যন্ত গোপনে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় ঘাঁটি গড়ে। এরপর সেখানেই বিহারের অস্ত্র তৈরির কারখানা বলে পরিচিত মুঙ্গেরের অস্ত্র নির্মার্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষভাবে একে-২২ অ্যাসল্ট রাইফেল তৈরি করে। পরে এগুলো চাপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
এনআইএ কর্মকর্তাদের ধারণা, পাকিস্তান থেকে যে অস্ত্রনির্মাতারা মালদহে এসেছিল তারা পাকিস্তানের পেশোয়ার ও কোহট প্রদেশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত ‘দারা আদম খেল’ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা আধুনিক অস্ত্রের নকল তৈরি করে তালিবান জঙ্গি সংগঠনকে নিয়মিত সহায়তা করে আসছে বলেও মনে করা হয়।
অবশ্য এনআইএ’র এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা এখনও নিশ্চিত নই, কিন্তু আটক জেএমবি জঙ্গির বক্তব্য অনুযায়ী পাকিস্তান থেকে আসা মানুষরা যে ভাষায় কথা বলেছিল তাতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ভাষা বলেই মনে হচ্ছে।’
গুলশান হামলার পরই বাংলাদেশের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, এই হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র সীমান্ত পেরিয়ে এসেছিল। বাংলাদেশের অপরাধ দমন শাখার প্রধান মনিরুল ইসলাম নির্দিষ্ট করেই বলেছিলেন, গুলশানের হামলায় মুঙ্গেরের যোগ আছে। এরপরই হামলায় মুঙ্গের যোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে ভারতের বিহার পুলিশের দল।
এসটিএফ’র এক কর্মকর্তাও জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে বিহার পুলিশ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশকে নিশ্চিত করেছে, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও অস্ত্র পাচারকারীরা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মালদহসহ পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জায়গায় তাদের ঘাঁটি গেড়েছে।’
এনআইএ’র ধারণা গুলশান হামলার একমাস আগেই একে-২২ রাইফেল ও ছোট অস্ত্র চোরাপথে ঢাকার জঙ্গিদের হাতে পৌঁছেছিল। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের এ বিষয়টি ভাবাচ্ছে। কারণ জঙ্গি ও নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘একে-৪৭’। সেখানে গুলশান হামলায় জঙ্গিরা ব্যবহার করেছে নকল ‘একে-২২’। এ ধরনের সেমি অটোমেটিক রাইফেল তৈরি হয় রোমানিয়ায়। ভারতে এ ধরনের অ্যাসল্ট রাইফেল একেবারেই অপরিচিত। তাই এর নকল করাটা সত্যিই কঠিন ব্যাপার।
এনআইএ’র কর্মকর্তারা জানান, একে-২২ অ্যাসল্ট রাইফেল হলো স্বল্প পাল্লার একটি অস্ত্র। এটি ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ, এমনকি আনকোরা অনভিজ্ঞ যুবকরাও এটি চালাতে পারে। ঢাকার বেকারিতে যারা হামলা চালিয়েছিল সেই অল্পবয়সী জঙ্গিদের কাছে এই ধরনের অস্ত্র একেবারে আদর্শ।