নিউজ ডেস্ক : রান্নার কাজে ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যবহারের অযোগ্য ৫০ হাজার এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকেই বিপিসির এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিপিসির পরিচালক (বিপণন) মীর আলী রেজা।
সূত্র জানায়, এলপিজি গ্যাসের পুরোনো পাঁচ লাখ সিলিন্ডারের মধ্যে ৮০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথম অবস্থায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৫০ হাজার এবং পর্যায়ক্রমে সাড়ে চার লাখ সিলিন্ডার বাতিল করা হবে।
বিপিসির পরিচালক (বিপণন) মীর আলী রেজা বলেন, অধিক পুরোনো ও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডারে গ্যাস না ভরার জন্য বিপিসির দুটি প্ল্যান্ট সিলেটের কৈলাশটিলা এবং চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে আপাতত ৫০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার বাতিল করা হবে। অবশিষ্ট সাড়ে চার লাখ সিলিন্ডারের ব্যাপারে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এলপিজির উত্তরাঞ্চলীয় ডিপোতে ভয়াবহ সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরক অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের পরিদর্শক আসাদুল ইসলাম বেশ কিছু সিলিন্ডার পরীক্ষার পর ৮০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ এবং বাতিলযোগ্য বলে মতামত দেন। এরপরই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিপিসি।
বিপিসির পরিচালক মীর আলী রেজা বলেন, সিলেটের কৈলাশটিলা প্ল্যান্ট থেকে বছরে ছয় হাজার এবং চট্টগ্রাম ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে বছরে ১৪ হাজার টন গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে বোতলজাত করে বিপিসি। এসব সিলিন্ডার অনেক পুরোনো। ১৯৭৭-৭৮ সালের সিলিন্ডারও রয়েছে। বিশেষ করে সিলিন্ডারের মুখের ভাল্ব ৩০ বছরের পুরোনো। এসব ভাল্ব দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে যায়। আবার কৈলাশটিলা গ্যাস প্ল্যান্টে যন্ত্রও অনেক পুরোনো। কোরোজাল সিস্টেমের এই যন্ত্র দিয়ে সাড়ে ১২ কেজি গ্যাসের ওজন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এসব কারণে বিপিসির সিলিন্ডারে গ্যাস কম থাকে এবং বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহারের সময়ও তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি জানান, প্রতিটি খালি সিলিন্ডারের দাম গড়ে তিন হাজার টাকা। একসঙ্গে পাঁচ লাখ সিলিন্ডার বাতিল করতে গেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ দরকার। এ কারণে আপাতত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৫০ হাজার সিলিন্ডার বাতিল করা হবে। অন্য সিলিন্ডারের মুখের ভাল্ব বদলে দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সব পুরোনো সিলিন্ডার তুলে নেওয়া হবে।
বিপিসি পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েল কোম্পানির মাধ্যমে এলপিজি গ্যাস বিপণন করে। কিন্তু মান্ধাতা আমলের এসব গ্যাস সিলিন্ডার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা বাতিলের জন্য এক বছর ধরে রাজশাহী বিভাগীয় এলপিজি গ্যাস পরিবেশক সমিতি আন্দোলন করে আসছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসানুল রশিদ সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শকের কাছে পাঠানো চিঠিতে পুরোনো এসব সিলিন্ডারে গ্যাস বিপণন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি প্রতিটি সিলিন্ডারে সাড়ে ১২ কেজি গ্যাসের বদলে সাড়ে নয় কেজি গ্যাস থাকায় তা বাতিলের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলেনি।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার বিপিসির-এলপিজি গ্যাসের বগুড়ার উত্তরাঞ্চলীয় আঞ্চলিক ডিপোতে ঘষা লেগে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কিছু সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয় এবং ১৯৩টি সিলিন্ডার পুড়ে যায়। এ ঘটনা তদন্ত করতে এসে গুদামে মজুত থাকা বেশ কিছু সিলিন্ডারের মুখে পানি ভরে পরীক্ষা করার পর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. আসাদুল ইসলাম মতামত দেন যে বিপিসির ৮০ শতাংশ সিলিন্ডারই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথম আলো