সৈয়দ মোহাম্মদ আফজল : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন, বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর, তাই এখানে গাছের সঙ্গে কিছু পরগাছা জন্মায়। যে জমিতে আগাছা আছে, সে জমিতে ফসল হয় না। পরাজিত শত্রু এসব দালাল ও চাটুকারেরা আসলে আগাছা। এসব আগাছা উপড়ে ফেলেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ৩১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ছাত্রদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন এবং সফল রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্যে দেশের জনগণের ভালোবাসতে হবে। তিনি আগাছামুক্ত ছাত্রলীগকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে এখনও একাত্তোরের পরাজিত শত্রুদের কিছু দালাল, চাটুকার, তোষামোদকারী রয়ে গেছে। তিনি বলেছেন, চলার পথে যদি কিছু আগাছা থাকে, তবে উপড়ে ফেলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের গড়ে তোল। আগামীতে কেউ যাতে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সে জন্য দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে দেশরতœ শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে দু’ধরনের রাজনীতি রয়েছে। একটি রাজনীতি হচ্ছে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণ করা। আর অন্য রাজনীতি হচ্ছে ক্ষমতায় থেকে অর্থ-সম্পদ বানিয়ে বিলাস বহুল জীবন-যাপন করা, জনগণের লুণ্ঠিত অর্থ-সম্পদ দিয়ে নিজেদের মর্যাদা ক্রয় করা। এ রাজনীতির কোনো মৌলিকতা ও স্থায়িত্ব থাকে না। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে কল্যাণের রাজনীতিই স্থায়ী হয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত বাংলাদেশ আওয়ামী সেই রাজনীতি করে না।
ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, একজন রাজনীতিবদের জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা হচ্ছে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন। তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তারা যেন জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলতে পারে। আমি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে বলব- কাজে কর্মে যে আগাছা, তা উপড়ে ফেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করা জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনে জাতিকে বঞ্চনামুক্ত করতে সবকিছু করেছেন। বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন, বড় কিছু অর্জনের জন্য বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। ছাত্রলীগের ওই অনুষ্ঠানে আদর্শভিত্তিক রাজনীতির ওপর জোর দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতিবিদরা যদি ঝুঁকি নিতে না পারে, আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নিতে না পারে, তাহলে দেশের জন্য কিছু দিতে পারে না। আদর্শ নিয়ে রাজনীতি না করলে, জনগণকে কিছুই দেয়া যায় না। নিজের মায়ের কথা স্মরণ করতে গিয়ে দেশরতœ শেখ হাসিনা বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটা পরিবারের মতো ছিল। আর, সকলের আদরের ভাবী ছিলেন তিনি। কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের খরচও বেগম মুজিবের দেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এমনও নেতা ছিলেন, যখন মাসের পর মাস জেলে, তখন তার পরিবারের বাজারের খরচ দিতেন আমার মা। আর ওই নেতাই জাতির পিতার হত্যাকান্ডের পর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে হাত মেলায়। হ্যা, আমি খুনি মোশতাকের (মোশতাক আহমেদ) কথা বলছি। মোশতাকের স্ত্রী নিয়মিত আমার মা’কে ফোন করতেন। আমার মা তাদের বাজারের টাকা পৌঁছে দিতেন।
১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে জড়িতদের অনেকেই পরিচিত ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুইদিন আগেও তারা ওই বাড়িতে ভাত খেয়ে চলে গিয়েছিলেন। আমার বাবা কি ভেবেছিলেন যে ওরাই ঘাতক হিসেবে আবার ফিরে আসবে?
বলাবাহুল্য, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের বিশাল প্রতীক এবং নিরন্তর প্রেরণার উৎস। আসুন, বিএনপি-জামায়তসহ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করি এবং সবাই মিলেমিশে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করার দৃঢ় শপথ করি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবি হোক।
লেখক ঃ সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী বাস্তুহারা লীগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা।