মধ্যরাতে সেই তরুণীর ভিডিও কেন করেছিলেন জানালেন সেই পুলিশ (ভিডিও)
রাজধানীতে গভীর রাতে তল্লাশির নামে সিএনজিতে থাকা এক নারী আরোহীকে হেনস্তা করার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বাদানুবাদের ওই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু এক্ষেত্রে নয়, আগামীতেও যদি কোনও পুলিশ সদস্য নাগরিকের সঙ্গে পেশাদার আচরণের বাইরে খারাপ আচরণ করে পুলিশের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে, তবে তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট ও কঠোর।’
কমিশনার আরও বলেন, ‘এই ভিডিওটি যিনি আপলোড করেছেন, তিনিও পুলিশেরই সদস্য। তিনি ভেবেছিলেন ওই ভিডিওটা প্রকাশ করলে তার হয়তো সুনাম হবে কিন্তু তিনি যে অপেশাদার আচরণ করেছেন তা বোঝার ক্ষমতা তার নেই।’
ভিডিওটিতে তরুণী ও পুলিশ সদস্যদের কথোপকথনের কিছু অংশ বিডি২৪লাইভ ডট কমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
তরুণী : আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন?
পুলিশ : কীভাবে বলা হয়েছে?
তরুণী : এত ভাব মারেন কেন? মাইয়াগো দেখলে ব্যাগ চেক করেন।
পুলিশ : এই, আপনি কিন্তু এত বিশ্বসুন্দরী না।
তরুণী : সমস্যা কী আপনার?
পুলিশ : না, আপনে তো মনে করছেন, আপনে কী যেন হয়ে গেছেন। আপনাকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আপনার সমস্যা কি?
তরুণী : সমস্যা লাইট সরান। আপনাদের সমস্যা কী?
পুলিশ : এটা আমাদের চেক পোস্ট, আমরা চেক করব।
তরুণী : তো চেক করেন না কেন, এত কথা বলেন কেন?
পুলিশ : আপনে এত কথা বলেন কেন? বেয়াদব মেয়ে। বাসা থেকে ভালো করে এয়া শেখায়নি? আপনাকে ভালো করে বাসা থেকে শিক্ষা দেয়নি?
তরুণী : আপনে বেয়াদব? আপনে আমাকে খারাপ মেয়ে কেন বললেন? এইটা পুলিশের বিহ্যাব (আচরণ) হইলো? ফিল্ডিং মারবেন কেন?
পুলিশ : আপনার সাথে কি ফিল্ডিং মারছি? এই আপনার সাথে কে ফিল্ডিং মারছে?
তরুণী : লাইট সরান, চোখে ধরছেন কেন? ব্যাগে মারেন লাইট, চেক করেন।
পুলিশ : এখন রাত কয়টা বাজে? আড়াইটা বাজে। একটা ভদ্র ফ্যামেলির মেয়েরা…
তরুণী : আমি সারারাত চলবো, আপনার সমস্যা?
পুলিশ : তো আপনে এভাবে অভদ্রর মতো কথা বলছেন কেন? বাসা থেকে আপনাকে ভদ্রতা শিখায়নি?
তরুণী : অভদ্রতো আপনে…
পুলিশ : বাসা কোথায়? কার মেয়ে আপনে? আপনে কার মেয়ে সেটা বলেন।
তরুণী : আমার ঠেকা পরে নাই।
পুলিশ : না, আপনে কোন মিনিস্টারের মেয়ে সেটা বলেন না। আপনে ব্যাগ খোলেন।
তরুণী : না, আপনারা খোলেন।
পুলিশ : না, না আমরা খুলব না তো। আপনার ব্যাগ আপনে দেখাবেন।
তরুণী : এতক্ষণ আমার টাইম নষ্ট করলেন…
পুলিশ : কেন, কেউ কি ওয়েট করতেছে?
তরুণী : কী হইছে? তোর বাপে ওয়েট করতেছে।
পুলিশ : বাসা হচ্ছে ডেমরা, আপনে ওই দিকে কোথায় যান?
তরুণী : হায় প্রশাসন, ভদ্রতা!
পুলিশ : সেটা আপনে কালকে দেখতে পারবেন। পুলিশ ভদ্র না অভদ্র, সেটা কালকে দেখতে পারবেন।
তরুণী : কী, বাল দেখব আমি।
পুলিশ : বাসা থেকে এইটা সেখাইয়া দিছে?
তরুণী : হ্যাঁ (রেগে)।
পুলিশ : মানুষের সঙ্গে বাল-ছাল বলা শিখাই দিছে?
মেয়ে : অসভ্য, লাইটা নামান।
পুলিশ : ও তো পুরাভাবে অ্যাডিক্টেট, ওতো অ্যাডিক্টেট।
উল্লেখ্য, সোমবার (২২ অক্টোবর) মধ্যরাতে হাতিরঝিলের পুলিশ চেকপোস্টে অটোরিকশার এক তরুণী যাত্রীকে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ। তল্লাশি করতে গিয়ে প্রথমে বাদানুবাদ, তর্ক বিতর্ক এরপর তরুণীকে উদ্দেশ্য করে অশালীন মন্তব্য করেন নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত পুলিশ। নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করে আপলোড করা সে ভিডিওই কাল হয়ে দাঁড়ায় দায়িত্বরত পুলিশের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় নারী যাত্রীর সঙ্গে দায়িত্বরত পুলিশের বাদানুবাদের দৃশ্য। এ ধরণের ভিডিও ধারণ ও তা প্রকাশ করা কতটা আইন সম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘দেখতে পাবে কালকে তোমার কি হয়? এই যে এক ধরনের ধমক, তারপরেই কিন্তু এটা ভাইরাল হয়েছে। মানে মেয়েটাকে অপমান করার জন্য এই ভিডিও করা হয়েছে। যে এই ভিডিওটি করেছে, তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক।’
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘ওনারা মাঠে দিনে রাতে কাজ করে। তিনি সাধারণ একজন কনস্টেবল হতে পারে। কিন্তু তার দায়িত্ব তো অনেক বেশি। তারা রাষ্ট্রের একটি সম্মানজনক পোশাক পরে তাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।’
আইনজীবি তানজীব উল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঐ নারীর সঙ্গে তিনটি অন্যায় করেছে পুলিশ। কোনো নারী পুলিশ সদস্য ছাড়া তাঁকে তল্লাশি করা, তল্লাশির সময় ঘটনার ভিডিও করা এবং ঐ ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা।’
তানজীব উল আলমের মতে, ‘আইন অনুযায়ী এরকম ক্ষেত্রে একজন সাধারণ নাগরিককে হয়রানির দায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরো পুলিশ বাহিনীর ওপর বর্তায়।’