যেভাবে রাতারাতি কোটিপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রবিউল
সরকারি স্টিকার লাগানো একটি পাজেরো জিপের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করতে গিয়ে একে একে বেরিয়ে আসছে থলের সবকটা বেড়াল। চাঞ্চল্যকর সব তথ্যে বিস্মিত খোদ প্রশাসন। বিস্ময়ের কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ ছাত্র! সাধারণ হলেও অসাধারণ সব কাজ কারবার তার।কোনো ধরনের বৈধ ব্যবসাপাতি না করেই কোটিপতি হয়ে গেছে সে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত টেকনাফের রবিউল আলম। গত পাঁচ মাসে তার ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকার কাছাকাছি লেনদেন হয়েছে। শুধু রবিউলই নয়, তার বড়ভাই ফরিদুল আলম, রাশেদুল আলম, বাবা ছিদ্দিক আহমদ ও ভাবী রায়হানা আক্তারের ব্যাংক পাওয়া গেছে অস্বাভাবিক লেনদেন।
চট্টগ্রামে ৫০ হাজার ইয়াবা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ি আটকের ঘটনার অনুসন্ধানে এসব তথ্য পেয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এতো টাকা আসলো কীভাবে? কী তার ব্যবসা? কোথায় পেলো মূলধন?চবি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রবিউল আলমের ভর্তি সংক্রান্ত সকল নথি পরীক্ষা করা হবে। ইয়াবা ব্যবসায়ী হয়ে সে কিভাবে চবিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে চবি প্রশাসনও বিস্মিত।
আলাপকালে চবির সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ জুমবাংলাকে জানান, রবিউলের বিষয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। যায় হোক, এখন আইন শৃংখলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। চবি প্রশাসন এ বিষয়ে সহযোগী হবে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৫ মার্চ কর্ণফুলী থানার পিএবি সড়কে চালকসহ সরকারি স্টিকার লাগানো একটি পাজেরো জিপ আটক করেছিল নগর গোয়েন্দা পুলিশ। জিপের মালিকের সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রবিউল, তার বড় ভাই ও বাবা সবাই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। জিপটির মালিক ফরিদুল। রবিউলদের পুরো পরিবারের একটাই ব্যবসা, সেটা হলো ইয়াবা সরবরাহ।
পরবর্তীতে তদন্ত করতে গিয়ে তাদের ব্যাংক হিসাবে এ কয় বছরে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা লেনদেনের সন্ধান মেলে। ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় রবিউল, তার ভাই ও বাবাসহ চার সহযোগীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে চার্জশিট দিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শিবু দাশ চন্দ।তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়েরের সুপারিশ জানিয়ে সিআইডির কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, বড় মাপের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের হিসাবের তথ্য চেয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছি। বেশ কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ীর অস্বাভাবিক লেনদেনের হিসাব ব্যাংক আমাদের কাছে পাঠিয়েছি। যাদের তথ্য পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশ কমিশনারকে আমরা লিখিতভাবে অবহিত করেছি। এসব তথ্য পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগে পাঠানো হবে। সিআইডি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।ডিসি শহীদুল্লাহ বলেন, অর্থের উৎস বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া গেলে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধে সুফল আসবে পাশাপাশি ইয়াবা পাচারকারিরা ধরা পড়বে।