শুক্রবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ৪ঠা কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

হিমালয়ে আরেক অভিযানে যাচ্ছেন মুহিত

অনলাইন ডেস্ক : হিমালয়ের ২২ হাজার ৩৫০ ফুট উচ্চতায় ‘আমা-দাব্‌লাম’ শৃঙ্গে আবারও অভিযানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এভারেস্টজয়ী বাংলাদেশি অভিযাত্রী এমএ মুহিত। অসুস্থতা ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তিন বছর আগে ওই দুর্গম পর্বতে একবার অভিযানে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছিল মুহিত ও তার সঙ্গীদের। বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবের পরিচালনায় এবার তারা সেখানে যাচ্ছেন শরতের শেষ ভাগে। হিমালয়ের পূর্ব অংশে এই অভিযানে বেইস ক্যাম্প পর্যন্ত মুহিতের সঙ্গী হচ্ছেন তরুণ অভিযাত্রী ইফফাত ফারহানা, কাওসার রূপম, মারুফ সালাম, আরিফুল ইসলাম ও সুজয় সেনগুপ্ত। বাকি পথ শেরপাকে নিয়ে একাই পাড়ি দেবেন ৪৮ বছর বয়সী মুহিত।

এ উপলক্ষে শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন মুহিত। অনুষ্ঠানে অভিযাত্রী দলের হাতে লাল সবুজের পতাকা হস্তান্তর করেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।

মুহিত জানান, আগামী ১৫ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশে রওনা হবেন তারা। কাঠমান্ডু হয়ে যাবেন লুকলায়। ৯ হাজার ৩০০ ফুট উচ্চতায় লুকলা থেকে শুরু হবে পায়ে হাঁটা। লুকলা থেকে অভিযাত্রী দল চলে যাবে পর্বত কোলের ফাগদিন গ্রামে। সেখান থেকে ২৪ অক্টোবর নামাতি বাজারে গিয়ে কাটাবেন। পরদিন তারা যাবেন এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগের স্মৃতিবিজড়িত খুমজুং গ্রামে। সেখান থেকে চলে যাবেন ১৮ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতার কালাপাথর এলাকায়। পরে তারা যাবেন বেইস ক্যাম্পে। মুহিত ছাড়া অভিযাত্রী দলের বাকি সদস্যরা সেখান থেকেই ফিরে আসবেন। এরপর তিনটি ক্যাম্প হয়ে আমা-দাব্‌লাম চূড়ার দিকে রওনা হবেন তিনি।

মুহিত বলেন, দক্ষিণ দিক থেকে অভিযানটি করছি। পাঁচ হাজার ৭০০ ফুট উচ্চতার বেইস ক্যাম্প-১, এরপর ২১ হাজার ফুট উচ্চতার বেইস ক্যাম্প-২ এ যেতে সবচেয়ে কঠিন পাথুরে পথ পেরোতে হবে। ভার্টিক্যাল রক ক্লাইম্ব করাটা খুব সহজ হবে না। তারপর বেইজ ক্যাম্প-২ থেকে বেইস ক্যাম্প-৩ এ যেতে পেরোতে হবে বরফের খাড়া দেয়াল। পর্বতারোহণ দক্ষতার সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা নেবে এই আমা-দাব্‌লাম।

বিপদ ছাড়াই অভিযানটি শেষ হবে এমন আশা প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, মুহিত কেবল ব্যক্তির খ্যাতি তুলে ধরছেন না, ধারাবাহিকভাবে পর্বতারোহণের মাধ্যমে একটি প্রজন্মকেও উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন। এই অর্জনের জন্য অধ্যবসায় ও দলীয় চেষ্টার প্রয়োজন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইস্পাহানি টি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) ওমর হান্নান এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান ইকবাল।

এর আগে চো-ইয়ো ও মানাসলু শিখরে আরোহণ করেছেন মুহিত। এ ছাড়া হিমালয়ের সাত হাজার মিটার এবং ছয় হাজার মিটার উচ্চতার ছয়টি শৃঙ্গে তিনি গেছেন সাতবার। এবারের আমা দাব্‌লাম অভিযানে বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের অভিযাত্রীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে ইস্পাহানি টি, ইউনিয়ন ব্যাংক ও চ্যানেল আই।

আমা দাব্‌লাম শব্দটির অর্থ মায়ের গলার হার। দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে পর্বততুল্য এক মা তার শিশুকে কোলে নিয়ে রক্ষা করছেন। সে জন্যই এমন নাম। ১৯৬১ সালের ১৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের বেরি বিশপ, নিউজিল্যান্ডের মাইক গিল ও ওয়ালি রমানসে, ইংল্যান্ডের মাইক ওয়ার্ড প্রথমবারের মতো এই চূড়া জয় করেন। হিমালয় অভিযানে পর্বতারোহীদের পছন্দের তালিকায় তিন নম্বরে এই আমা-দাব্‌লাম। ২০০৬ সালের নভেম্বরে এই পর্বতের বেইস ক্যাম্প-৩-এ বরফ ধসে কয়েকজন পর্বতারোহীর মৃত্যু হয়। পর্বতারোহীদের সাইট ‘সামিট ক্লাইম্ব’ বলছে, ১০ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর আমা- দাব্‌লাম অভিযানের উপযুক্ত সময়।