একাদশ সংসদ নির্বাচন যে ভূমিকা রাখতে চায় ইইউ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল।বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিনিধিদলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংকের নেতৃত্বে বৃটেন, জার্মানি, স্পেন, সুইডেন, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কমিশনের ঘোষণা, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি পরিকল্পনা করছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে নভেম্বরে ইইউ’র একটি নির্বাচন বিষয়ক একটি ছোট পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশে আসবেন। তারা বাংলাদেশে বেশ কিছু সপ্তাহ অবস্থান করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থান কালে এখানকার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির সার্বিক বিষয় মূল্যায়ন করবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১০ কোটির মত ভোটার রয়েছে। যা বিশ্বের খুব কম দেশেই রয়েছে। তারা একই দিনে ভোট দিবেন। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। যদিও এত বড় ভোটারদের নিয়ে ভোট এই প্রথম হচ্ছে না। ফলে এবারের বাংলাদেশে নির্বাচন ইইউ’র আগ্রহের বিষয়। বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ নির্বাচন দেখতে চায় ইইউ। সব কিছু যাতে সুন্দর মত অনুষ্টিত হয় তার জন্য আমরা আশা করছি ভোটের দিন ক‚টনীতিকরা পর্যবেক্ষণ করে অবদান রাখতে পারবো। এগুলোই মূলত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
আমি বাংলাদেশে সবল নির্বাচন কামনা করছি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করি সব দল নির্বাচনকে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। আশা করি এটি খুবই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। আর আমি মনেকরি অংশগ্রহণমূলক প্রতিযোগী নির্বাচন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার জন্য জরুরী। এটি নিয়েও আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
ইইউ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, আমরা আশা করি সকল ভোটার ভোট দিতে আসবেন। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নারী ভোটারদের নিয়েও আলোচনা করেছি। আমাদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে নারী ভোটারদের ভোট দিতে আসা নিয়ে। এখানে আমরা লিঙ্গ সমতায় জোর দিচ্ছি। আমাদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তবে আমরা বিষয়গুলোতে ক্রমাগত দৃষ্টি রাখবো শেষ পর্যন্ত কি হয়। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা একটি নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবো। যদিও দলটি বেশি বড় হবে না। পর্যবেক্ষক দলে আমরা মূলত পরিমানের থেকে মানের দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছি। তারা মূলত তাদের মূল্যায়ন দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন।
পরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, ইইউ প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বচন যাতে অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও মুক্ত ভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সে ব্যপারে প্রতিনিধি দল ইসির কাছে আহবান জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন তাদের আশ্বস্ত করেছে যে, আইনের মধ্যে থেকে নির্বাচন কমিশনের যতটুকু ক্ষমতা রয়েছে, সবগুলো ক্ষমতা প্রয়োগ করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেবেন। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দল ইভিএম মেশিন কিভাবে ব্যবহার করা হবে তা জানতে চেয়েছেন। কমিশন জানিয়েছে যে সমস্ত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে স্বল্প পরিসরে ব্যবহার করেছি। যদি আইনে অনুমতি দেয় তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার হবে। তবে তা কমিশনের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে।
ইসি সচিব বলেন, প্রতিনিধি দল নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা জানিয়েছি যে, বর্তমানে ১১৯টি স্থানীয় পর্যবেক্ষক রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে যারা পর্যবেক্ষক হিসেবে আসতে চাইবেন তাদের জন্য একটি নীতিমালা রয়েছে। সে নীতি মালা অনুসরণ করে আসন্ন নির্বাচনে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দল জনবল সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পর্কে জানতে চয়েছেন। ইসি জানিয়েছে যে সংবিধানে যে ক্ষমতা দেয়া রয়েছে সে অনুযায়ি প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পর্যাপ্ত জনবল থাকবে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত জনবল থাকবে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। ইসি
সচিব বলেন, তারা ভোটার তালিকা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। ইসি জানিয়েছে যে আমাদের খুব সচ্ছ একটি ভোটার তালিকা রয়েছে। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, যে নীতিমালা রয়েছে, তা মেনে ইসি সকল পর্যবেক্ষককে স্বাগত জানাবে। ইসি সচিব বলেন, তফসিলের বিষয়ে প্রতিনিধি দল প্রশ্ন করলে, কমিশনার জানিয়েছে যে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা হতে পারে। ইসি সচিব বলেন, বৈঠকে নির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে আলোচনায় প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কিছু সহিংসতা হয়েছে। তা তাৎক্ষনিকভাবে মোকাবেলা করা হয়েছে।