তিনি আমার কোন যত্ন না নিয়ে বলেছেন, না খেয়ে অসুখ বাঁধাবে আর আমার যত্ন আশা করবে তা হবেনা
গত জানুয়ারীতে আমার হার্টের একটা মাইল্ড অ্যাটাক হয়ে গেল। অনেকেই আমার আরোগ্য কামনা করে বার্তা পাঠালেও, আমার এক সহপাঠিনী বান্ধবী বলেন, “ভাল হয়েছে, তোমার এমনই হওয়া উচিৎ, তুমি কিপ্টা, তুমি দামী খাবার খাওনা, তোমার এমনই হবে। তুমি না খাইয়া মরবা।” ওর কথায় আমি রাগ করিনি কারণ, ওর সাথে আমার যতবার দেখা হয়েছে, ও যখন নানরুটি আর বুনা মাংস বা নেহারি দিয়ে হোটেলে নাস্তা করেছে, আমি তখন এক কাপ রং চা পান করেছি। ও যখন মুরগী, খাশী, পাবদা, চিংড়ি, মুগের ডাল ইত্যাদী দিয়ে আয়েশ করে মধ্যাহ্নভোজ করেছে, আমি তখন ভাজী বা ভর্তা, বড়জোর গুড়া মাছ এবং লম্বা ডাল তথা এক বা দু’তরকারিতে সাদা ভাত খেয়েছি। ও পিড়াপিড়ি করেছে, আড় চোখে তাকিয়েছে, আমি দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছি। ও হয়তো ভেবেছে আমি টাকা বাঁচাচ্ছি। ওর পক্ষে আমার সম্পর্কে এরুপ ধারনা করাটাই স্বাভাবিক। বাসায়ও একই অবস্থা। ওরা যখন মাংস পোলাও খায়, আমি তখন চ্যাপা শুটকি বা আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাই। এ নিয়ে আমার স্ত্রীর খোঁচা মারা কথা যেমন, আখাওয়া দেশের মানুষ, আত্নায় কিছু দেয়না, খাচ্চর নসুইন্দা (নরসিংদীর লোক) প্রভৃতি শুনতে হয়। বিয়ের সময় উনি দেখেছেন, আমি তিন আহারী কিন্তু দু’এক বছরের মাথায় দেখেন আমি দু’আহারী হয়ে গেছি। উনি বলতেন, আমার খাবার খরচ আমিই দিব, তবুও তুমি তিনবার খাও সোনা, পেট ভরে খাও। আমি চুপ থেকেছি।
আমি যখনই কোন অসুখে পড়েছি, তিনি আমার কোন যত্ন না নিয়ে বলেছেন, না খেয়ে অসুখ বাঁধাবে আর আমার যত্ন আশা করবে তা হবেনা। আমি অযত্নে ক্যাং ধরে পড়ে থেকেছি। আমি যেহেতু পেশায় একজন শিক্ষক এবং একটু আধটু সামাজিক কাজ করি, প্রায়শই বিয়ে, খতনা, কুলখানী, জন্মদিনের মতো পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানের দাওয়াত পাই। বাসায় কার্ডের স্তুপ পড়ে আছে। আমার যাওয়া হয়না।
আমি যেহেতু যাইনা, আমার স্ত্রী-কন্যাও যেতে পারেননা। ওনারা রাগে গর্জাতে থাকেন। ওনারা বঞ্চিত হন, আমি কষ্ট পাই।
আজকাল আমি দাওয়াত দিলেও যাইনা দেখে, তেমন আর দাওয়াতও পড়েনা। কেউ দিতে আসলে আমার স্ত্রীই বলেদেন, আমরা দাওয়াত খাইনা। শুধু শুধু কার্ড নষ্ট করার দরকার নাই। আমার ছোট্ট মেয়েটি গলা জড়িয়ে ধরে বলে, চলনা বাবা! কত্তো আনন্দ হয়, তোমার জন্য যেতে পারিনা। অগত্যা কোন অজুহাতে আমার ব্যস্ততা দেখিয়ে ওদের পাঠানোর ব্যবস্থা করে বাসা থেকে কেটে পড়ে রাস্তায় ঘুরাঘুরি করি।
এ নিয়ে বাসায় মনোমালিন্য লেগেই থাকে। নেহায়েত দায়ে পড়ে কোথাও গেলেও আগেই বলে দিই, আমার জন্য যেন সাদা ভাত ও ডাল থাকে। ব্যবস্থা না থাকলে এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে বাসায় এসে লবন-মরিচ দিয়ে বাসী ভাত খাই। আমার স্ত্রী বলেন, কুত্তার নাড়ে ঘি সহেনা। আমি ঠান্ডা, পচা ভাত ও কথা দু’ই হজম করি।
বাড়ীতে গেলে আমার মা, ভাবী, বোন বলেন, তুইতো আগে এমন ছিলিনা! না, আমি আগে এমন ছিলামনা। ২০০০ সনের তেসরা মার্চ। আমি তখনো ব্যাচেলর। আমার এক সহপাঠী বন্ধু তার ভাইয়ের বিয়েতে আমাকে তিনদিন আগেই বাসা থেকে ধরে সাথে করে তার গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে গেল। ওর বাড়ীর লোকজন আমাকে বেশ কদর করছে। বিশেষত ও বাবা-মা শুরু থেকেই আমাকে স্বীয় সন্তানের ন্যায় তুই বলে সম্বোধন করছেন। বিষয়টি আমার প্রাণ ছুঁয়ে যায়। ওর হাই স্কুলে পড়ুয়া ছোট্ট বোনটি আমার সাথে বসে রাজ্যের গল্প করে। কোন জড়তা নেই।
সে আমাকে তাদের গ্রাম, পথ প্রান্তর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখায়। বেশ সুন্দর জায়গা। সে গুনগুনিয়ে গান গায়। বিভিন্ন গাছ গাছালী, জংলী ফুল দেখিয়ে নাম জিজ্ঞেস করে, বলতে না পারলে বলে, আপনি এত্তো এত্তো পাশ দেওয়া লোক অথচ, আমাদের দেশীয় গাছ গাছরার নামও জানেননা! আমি শরম পাই। মনে মনে ভাবী, এগুলোতো আমিও ছোটবেলায় অনেক দেখেছি কিন্তু, নাম জানা হয়নি বা জানতাম, অনেক দিন না শোনায় ভুলে গিয়েছি। এর তার গাছের পেয়ারা, বরই, ফল ফাকরা পেড়ে এনে দেয় আমি ভয়ে মরি, পাছে লোকে চোর ভেবে ধাওয়া করে। সে খিল খিলিয়ে হাসে। অনেকে দেখেও কিছু বলেন না বা না দেখার ভান করে থাকেন। অনেকে আবার নিজ থেকে আরো বেশী করে পেড়ে এনে দেন, বসতে বলেন। বুঝতে অসুবিধা হয়না এ গ্রামে তাদের বেশ প্রতাপ রয়েছে বা এই হাস্যোজ্জ্বল কিশোরীকে সবাই ভালোবাসে।
খালের উপর বাঁশের সাঁকো পার হতে গিয়ে দেখি এখানেও প্র্যাকটিসের অভাব। শেষে সে’ই আমাকে হাত ধরে পার করে নিয়ে এসে বলে, আপনি আসলে একটা অকর্মার ঢেঁকি। কোন কাজটা আপনি ভালো পারেন, বলেনতো দেখি! সাঁতার জানেন? ভাবনায় পড়ে যাই। ছোট বেলায়তো পারতাম। অনেক বছর আর পরখ করার সুযোগ হয়নি। এখন পারিকি!
সময় পেলেই লুডু নিয়ে বসে যায়। আমি ওর সাথে পেরে উঠিনা। সে জিতে গিয়ে বেশ মজা পায়। আমি হেরে গিয়েও ওর আনন্দ দেখে মজা পাই। আমার বন্ধুটি বাড়ী পৌঁছে আমার সঙ্গে বাড়ীর লোকেদের পরিচয় করিয়ে দিয়েই খালাশ। দোষ আসলে ওর নয়। বিয়ের বাজার ঘাট, এন্তেজাম নিয়েই ব্যস্ত। আমি এখানেও ব্যর্থ। কোথায় ওকে একটু কাজে কর্মে সাহায্য করব তানা, উল্টো দুলহান সেজে বসে আছি।
বিয়ের আর একদিন বাকী। বাড়ীতে মেহমান গম গম করছে। আমি ছাড়া সবাই ব্যস্ত। এতো মানুষের মধ্যে কে কার খোঁজ রাখে! সময় মতো খাবারটা খেয়ে নিব, সেটিও লজ্জায় পড়ে পেরে উঠিনা। মেয়েটিও আজ উধাও। ওর অনেক কাজ। হলুদের সাজ সজ্জা, আল্পনা আঁকা, মেহমানদের দেখভাল করা, বড়দের ফুট ফরমায়েশ পালন, আরো কতোকি! ঠিকই সময় মতো সে এসে হাজির। “খাবারতো খাননি! চলুন, চলুন জলদী চলুন, আপনাকে খাইয়ে আমাকে কাজে নামতে হবে। “বলতে বলতে হাত ধরে টানতে টানতে খাবার ঘরে নিয়ে গেল। “আল্পনা আঁকতে পারেন?” আমাকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে আড় চোখে তাকিয়ে বলল। ইতঃস্তত করে জবাব দিলাম, না। – আগে কখনো বিয়ে দেখেননি! নাকি আপনাদের দেশে এসব হয়না! কি বলব ভেবে না পেয়ে নিচু হয়ে খাবার খেতে লাগলাম।
মেলা রাত পর্যন্ত হলুদ দেয়া হলো, মেহেদী পরানো হলো। মহিলারা সুর করে দোয়ার ধরে গান করলো। কিশোর কিশুরীরা মনের আনন্দে নাচল, গাইলো। মেয়টিও কম গেলনা। আমি বেশ উপভোগ করলাম। এক ফাঁকে আমার গায়ে রং ছিটিয়ে হলুদ মেখে দিল। রাগ করতে করতে কোন রকমে নিজেকে সামলে নিলাম। বিকেল বেলা মেয়ের বাড়ীতে হলুদ সামগ্রী পৌঁছে দিতে আমাকেও যেতে বলেছিল। আমি যাইনি। ফাঁকা ঘর পেয়ে লম্বা একটি ঘুম দিয়ে নিয়েছিলাম, শেষে এতো লোকের মধ্যে রাতের বেলা ঘুমের জায়গা যদি না পাই!
পরদিন অন্যান্যদের সঙ্গে বরযাত্রী হই। গেঁটে অনেক দর কষাকষি করে ভিতরে ঢুকতেই বিয়ে না পড়িয়ে আগে খাবার দেয়া হলো। একদিকে দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছিল, অন্যদিকে বর যাত্রী না খাইয়ে অন্য মেহমানদের খাওয়ানোর ওনাদের অঞ্চলে নিয়ম নেই।
ঢুকার মুখেই একটি চেয়ার ফাঁকা পেয়ে বসে গেলাম, উঠতি বয়সের কতোগুলো ছেলে মেয়ের সাথে। দু’একজন ভদ্র মহিলাও আছেন এই টেবিলে। কোত্থেকে দৌড়ে এসে আমার বন্ধুর বোনটিও বসে গেল আমার পাশের চেয়ারে। আমাকে কানে কানে বলল, ঐযে মহিলাটিকে দেখছেন, উনি আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেবের বউ। আমি বললাম, ওঃ আচ্ছা!
খাবার পরিবেশন শুরু হয়েছে। আমি তখনো খাবারে হাত দিইনি। এমন সময় একটি বৃদ্ধমতো লোক একটি ৬-৭ বছরের মেয়ের হাত ধরে লাঠি ঠুকতে ঠুকতে প্রবেশ করলো। লোকটি অন্ধ আর মেয়েটি বোবা। মারাত্নক কম্বিনেশন। বোবার দৃষ্টি আর অন্ধের বাচন, দু’জনে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ। বৃদ্ধ খাবার চাইতে একজন গর্জে উঠলো, এখানে ফকীর ঢুকলো কিভাবে?
বৃদ্ধটি বলল, বাবারে আমি চক্ষে দেহিনা। সারা দিনের ভুখা। নাতনীডা ছোড মানুষ, কথা কইতে পারেনা। ভোহে হাঁটতে পারতাছেনা, কয়ডা জুডা মুডা খাওনও যদি দিতেন! ছোট্ট মেয়েটি হাতের থালাটি এগিয়ে ধরতেই খাদেমদারীর লোকটি হুঙ্কার দিয়ে উঠলো, “কইছিনা পরে, এখন যাও।” ততোক্ষণে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়েছি, সাথে সাথে বন্ধুর বোনটিও। আমরা দু’জন আমাদের আসন দু’টিতে হাত ধরে তাদের বসিয়ে দিই। বোবা শিশুটি হাত না ধুয়েই খাবারে হাত দিয়ে ফেলেছে। সাথে সাথে চেয়ারম্যান পত্নী চেয়ার ছেড়ে, ভ্যানেটি ব্যাগটি টান দিয়ে হাতে নিয়ে উঠে পড়লেন। তিনি গর্জাতে গর্জাতে বলছেন, “একি ভদ্রলোক বাড়ীর বরযাত্রীর খানা নাকি কাঙ্গালী ভোজ! ” সাথে সাথে চ্যাংরা বয়সী ছেলে মেয়েরাও টেবিল ছেড়ে উঠে গেল। কি থেকে কি হয়ে গেল! আমরা দু’জন বেকুব বনে গেলাম। আমার বন্ধুটি কোত্থেকে এসে আমাকে রাগত বলল, ” তোকে সাথে আনাটাই আমার ঠিক হয়নি। যেখানে যাস একটা না একটা ভেজাল বাঁধাস। ”
লাগল হট্টগোল, খাদেমদার লোকটি ছো মেরে শিশুটির প্লেটটি টান মারতেই খাবার গুলো মাটিতে পড়ে গেল। ভুখা, বোবা, অবুজ বাচ্চাটি মাটি থেকে কুড়িয়ে খাবলা খাবলা করে খাবার খেতে শুরু করলো। ইতিমধ্যে আরো দু’জন তাগড়া মতো লোক বাচ্চা এবং অন্ধ বুড়োটিকে হ্যাচরাতে হ্যাচরাতে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে, আমি ও বন্ধুর বোনটি পিছন পিছন ছুটলাম। চোখ দু’টোকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। তাগড়া লোক দু’টি ধাক্কা মারতেই মেয়েটি টাল সামলাতে না পেরে পড়লো গিয়ে জ্বলন্ত উনুনে। একটি ব্যর্থ আর্ত চিৎকার।
আমি দৌড়ে গেলাম। সাথে বন্ধুর বোনটিও। বাচ্চাটিকে বাবুর্চিদের সহযোগীতায় টেনে তুলে, বালতি দিয়ে পানি ঢেলে আগুন নেভালাম। গা ঝলসে গিয়েছে, চুল ও চামড়া পোড়া গন্ধ, সুগন্ধি খাবারের গন্ধকে ছাপিয়ে গেল। পাঁজা কোলে করে ছুটলাম রাস্তার দিকে। যে করেই হোক বাচ্চাটিকে কোন হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে। পেলাম একটি ভ্যান। বন্ধুর বোনটি সাথে সাথে আসছে। আমি ওকে বললাম, ” তুমি যাও বোন। আমার কাজ আমাকে করতে দাও। ” ভ্যান চলতে শুরু করেছে। সে ডেকে বলছে, আমাকে মাফ করে দিয়েন ভাইয়া, আমি আপনাকে অকর্মার ঢেঁকি বলেছিলাম। জেলা সদর হাসপাতালে তৃতীয় দিন ৯ মার্চ, দগ্ধ, বোবা, ভুখা, গরীব, এতিম বাচ্চাটি মারা যায়। অন্ধ অসহায় বৃদ্ধটি সারক্ষণ বারান্দায় বসে থাকতো। তার আর বসে থাকা লাগলোনা। তাকে এখন আর কেউ পথ দেখিয়ে নিবেনা। অন্ধ এবার সত্যিকারের অন্ধ হয়ে গেল। কোন অদৃশ্য শক্তির বলে কেইস কাবারী হয়নি। দূর্ঘটনা হিসেবেই বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়। অশুভ শক্তির কাছে আমার প্রতিবাদ ধোপে টিকেনি। এরপর আমি আর ঐ জেলায় যাইনি। বন্ধুটির সঙ্গেও আর সম্পর্ক রাখিনি। সদা হাস্যোজ্জ্বল, সরল, প্রাণচঞ্চল বোনটি দেড় যুগ পর কত বড় হয়েছে, বিয়েথা হয়েছে কিনা, কোথায় আছে আমি কিছুই জানিনা। শুধু জানি সেদিনের পর থেকে আমি আর জ্ঞানত দামী খাবার খাইনা। পারত পক্ষে কোন বড়লোকী দাওয়াতেও যাইনা। পণ করেছি, যেদিন বড়লোকদের পাশাপাশি গরীব ভিক্ষুকরাও সাথে না হোক, অন্ততঃ মাটিতে বসে কলা পাতায় করে হলেও, খাবারটুকু পাবে সেদিনই দাওয়াত খাব, তার আগে নয়।
ওসব অনুষ্ঠানে যে পরিমানে খাবার নষ্ট হয়, তাও যদি পরিকল্পনা করে ওদের দেয়া হতো, ওরাও মাঝে মধ্যে একটু ভালো মন্দ খেতে পেতো। পাঁচশ মেহমানের সাথে পঁচিশ জন গরীবের খাবার যোগ করলে বড়লোকরা কি গরীব হয়ে যাবে! মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, গরীব ভিক্ষুক, মিসকিন আল্লাহর মেহমান। আমরা মুসলমান। আল্লাহর মেহমানদের কদর করিনা, করি সমাজের তথাকথিত হোমরাচোমরাদের।
আর দু’আহারের ব্যাপারটি, ঐযে গত স্ট্যাটাসে বলেছি, আমার গরীব মেধাবী ছাত্রটি অভাবের তাড়নায় দু’আহার করতো, সেই কথাটি শোনার পর থেকেই আমিও দু’আহারী হয়ে গিয়েছি। আমার দূর সম্পর্কের এক জ্যাঠি যাকে জইস্যার মা (জসীমের মা) বলে সবাই ডাকতো, ওনাকে দেখতাম, হারাম পাঁচ দিন ব্যতীত সারা বছর রোজা রাখতেন। তিনি এক আহারী ছিলেন। কি তার গোপন রহস্য, তা জানতামনা। এখন আর জানাও সম্ভব নয় কারণ, তিনি এখন আর বেঁচে নেই। তবে তিনি দীর্ঘায়ু পেয়েছিলেন। অবশ্য আমার দামী খাবার খাওয়া না খাওয়ায় বা দু’আহারে সমাজ পাল্টে যাবেনা জানি। আমি ঘুমাতে পারিনা। চোখ বন্ধ করলেই সেই দগ্ধ বোবা শিশুটির করুন মুখটি মনের চোখে ভেসে উঠে, কানে ভেসে আসে তার ঘাউ মাউ দূর্বোধ্য কান্না।
আমি হজরত ওমর (রাঃ), নেলসন ম্যান্ডেলা, মাহাথীর মোহাম্মদ বা আহমেদী নেজাদ নই, তবুও আমি এভাবেই নিজকে কষ্ট দিয়ে প্রতিবাদটা করে যাচ্ছি। তবে ঘটনা যদি এভাবেই ঘটতে থাকে আর আমি একটা একটা করে, সব বাদ দিতে থাকি, তবে এক সময় আমার পক্ষে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে দাঁড়াবে! সংযমের মাস মাহে রামাদানে, দুপুরে একবার না খাবার বদলে ইফতারী আর সেহেরীতে জন্মের খাওন খেয়ে পুষিয়ে নিই আমরা অথচ কত গরীব মিসকিন শুধু এক ঢোক পানি পান করে ইফতার করে, সেহেরী না খেয়েই শুধু নিয়ত করে রোজা রাখে, তাদের খোঁজ কে রাখে!
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই মনে মনে বলি, হে বিধাতা আর কোন মজলুমের উপর জুলুমবাজের জুলুমের দৃশ্য দেখার আগে আমাকে অন্ধ করে দিও!