জুতা নিক্ষেপ, জানাজা পড়া হলো না এমপির
নিহতের পিঠে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে তিনটি পিঠ দিয়ে ঢুকে পেট দিয়ে বের হয়ে গেছে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের একাধিক কোপের চিহ্ন রয়েছে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে নিহত দুই আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে শুকুর শেখ প্রসঙ্গে গতকাল দুপুরে বলছিলেন বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) এবং মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ডা. মশিউর রহমান। সোমবারের দুই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি।
গতকাল দুই নেতার জানাজায়ও চরম বিশৃঙ্খলা হয়েছে। দৈবজ্ঞহাটী কলেজ মাঠে বিকেল ৫টার দিকে দুই নেতার কফিন আসে। জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার পর বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন কিছু বলতে চেয়েছিলেন। তখন হাজারো জনতা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। অনেকে জুতাও নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতির স্বার্থে পুলিশ সংসদ সদস্যকে ব্যারিকেড দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যায়। এরপর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর সাইনবোর্ড-মোরেলগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পোলেরহাট স্ট্যান্ডে কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আকনের গাড়ি মোরেলগঞ্জ ফেরিতে ওঠার সময় বাধা দেওয়া হয় বলেও জানা গেছে।
ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গতকাল ইউপি চেয়ারম্যানের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। সোমবারের হামলায় গুরুতর আহত দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন তাঁতীলীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক বাবলু শেখ এবং নিহত আনছার দিহিদারের স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৪৫) এখনো খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হত্যার ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা বলছে। তাঁরা হলেন দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম ফকির, গ্রাম পুলিশ সদস্য মো. আবুয়াল হোসেন ফকির ও আবুল শেখ এবং গ্রামবাসী জুলহাস ডাকুয়া। বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় গতকাল দুপুর ১২টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি চেয়ারম্যান ও তাঁর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
সোমবার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ধরে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয় বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। পাশের রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ খান হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ছিলেন সোমবারের ঘটনার মূল হোতা শহিদুল ফকির। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিনি ছিলেন ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি। পরে তিনি শুধু আওয়ামী লীগারই হননি, বাগিয়ে নিয়েছেন দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের পদও। স্থানীয় সূত্র বলছে, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মান্নান খাঁ ও মুক্তিযোদ্ধা হারেজ আলী শেখকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে দিয়েছিলেন শহিদুল ফকির। বলাইবুনিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাংগীর, আলতিবুরুজবাড়িয়া গ্রামের রোমান হাওলাদার, তেলিগাতি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর, একই ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি রনি খান ও শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. আছদকে কোপানোর ঘটনায়ও চেয়ারম্যান ও তাঁর ক্যাডার বাহিনীকে অভিযুক্ত করা হয়।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বলেন, ‘শহিদুল ফকির যুবদলের নেতা ছিল। আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে নৌকা প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়ে যায়। তারপর নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার কৌশল নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ত্যাগী দুই নেতাকে পরিকল্পিতভাবে সে হত্যা করেছে।’ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাহ-ই-আলম বাচ্চু বলেন, যুবদলর নেতা শহিদুলের আওয়ামী লীগে যোগদান নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
নিহত আনছার আলী দিহিদারের মামা শামছুর রহমান মল্লিক বলেন, দরজা বন্ধ পেয়ে ঘরের টিন কেটে অস্ত্রের মুখে আনছারকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় বাধা দিলে আনছারের স্ত্রীকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেওয়া হয়। এর কারণ রাজনৈতিক বিরোধ বলে দাবি করেন তিনি। সূত্রঃ কালের কন্ঠ।