বিল দিতে না পারায় শিশুকে আটকিয়ে রেখেছে এ্যাপোলো হাসপাতাল
রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতাল চিকিৎসার বিল দিতে না পারায় আটকিয়ে রেখেছেন একটি শিশুকে। শিশুটির মা দিলু আক্তার বলেন, টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারছি না। আমার স্বামী প্রবাসে কাজ করেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর আমার শিশুকে এই হাসপাতালে ভর্তি করাই। ভর্তি করার পর চিকিৎসার বিল বাবদ ইতোমধ্যে তিন লাখ ২১ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। এখন আমার কাছে কোনো টাকা নেই। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও চিকিৎসা বাবদ আমার কাছে আরও চার লাখ ৬১ হাজার টাকা দাবি করছেন। এতো টাকা দেওয়ার সামর্থ আমার নেই। তারা আমার সন্তানকে ছাড়ছে না। এখন আমি কি করবো তা ভেবে পাচ্ছি না।
শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। সে বাঁচবে কি না সেটা নিয়েও রয়েছে শিশুটির মায়ের দুর্চিন্তা। বিল পরিশোধ না করার অভিযোগে শিশুকে আটকিয়ে রাখা অন্যায় বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক। একই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, এতো অল্প সময়ে এতো টাকা কীভাবে বিল হলো তাও খতিয়ে দেখা দরকার। এ প্রসঙ্গে এ্যাপোলো হাসপাতালের ফিন্যান্সিয়াল অপারেশন বিভাগের ডিজিএম রাকিব আহসান একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, আমরা নিরুপায়। টাকার এতো বড় অংক মাফ করে দেওয়ার সুযোগ বা ক্ষমতা আমাদের নেই। এর বড় একটি অংশ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।
তিনি একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, প্রবাসে স্বামীর হাতেও কোন টাকা নেই। তাই সে কোনো টাকা পাঠাতে পারছে না। আমি এখন কী করব, কোথায় যাব? আমার মেয়েটাকে রিলিজ নিয়ে দেন। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাই।
টাকার জন্য এ্যাপোলো হাসপাতালে শিশু আটকের ঘটনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেন, এমন ঘটনা অন্যায় অমানবিক। যদিও এ্যাপোলো হাসপাতাল কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান তথাপি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। টাকার জন্য কাউকে আটক করে রাখা শুধু তার অধিকার হরণ করাই নয়, বরং অমানবিকতার চরম দৃষ্টান্ত।
তিনি আরও বলেন, এতো অল্প সময়ে কীভাবে এতো টাকা বিল হয় তা খতিয়ে দেখা দরকার। অধিকাংশ সময়ে রোগী জানতেই পারে না, সে কোথায় টাকা দিচ্ছে বা কেন টাকা দিচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশে নাগরিকের চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়ে থাকে। সেখানে সব নাগরিকের বীমা করা থাকে। কিন্ত যেহেতু আমাদের দেশে সেসব সুবিধা নেই তাই ওষুধ লেখার আগে বা রোগ সংক্রান্ত পরীক্ষা দেওয়ার আগে ডাক্তারদের উচিৎ রোগীর সঙ্গে আলাপ করা। তিনি আরও বলেন, দিলু আক্তারের ( আটক শিশুর মা) সমস্যাটি যত দ্রুত পারে সমাধান করা উচিৎ এ্যাপোলো কর্তৃপক্ষের।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে আইসিইউ- তে থাকা শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী বিলের টাকা আগের চাইতেও বেড়েছে। গতকাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আজকে সেই বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৪৬২ টাকা! চিকিৎসা বন্ধ থাকার পরও বিল বাড়ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের ফিন্যান্সিয়াল অপারেশন বিভাগের ডিজিএম রাকিবুল আহসান বলেন, আইসিইউ বিভাগে থাকার জন্য চার্জ হিসেবে এই বিল ধরা হয়েছে। অসহায় নারী টাকা দিতে অপারগ- এমন প্রসঙ্গে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। শিশুটি এখন এ্যাপোলো হাসপালের ডাক্তার সরোয়ার জাহান ভূঁইয়ার অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যার ওয়ার্ড নং ২বি, বেড নং ২২০৩পি।
গতকাল (১ অক্টোবর) একুশে টেলিভিশন অনলাইনে ” টাকা শোধ করতে না পারায় সন্তান আটকে রেখেছে হাসপাতাল” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নানা দিক থেকে প্রতিবাদ আসতে থাকলেও এখনো সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে এ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
দিলু আক্তারের স্বামী সৌদি আরবে আকামা (কাজের অনুমতিহীনভাবে) ছাড়া রয়েছেন। এই শিশুটি বাড়ি চট্টগ্রামের উত্তর রাঙ্গুনিয়া। শিশুটির মা হাসপাতালের বারান্দায় থাকেন। তিন বেলা খাওয়ার মতোও তার কাছে কোনো টাকা নেই। অন্যরা যা খেতে দেন তাই খেয়ে রয়েছেন তিনি।